দিব্যেন্দু রায়,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),০৭ সেপ্টেম্বর : তখন সকাল সাড়ে সাতটার আশপাশ হবে । সবেমাত্র নিজের দোকান খুলেছেন পশুপ্রেমী যুবক । সেই সময় দোকানের সামনে একটি কুকুরে ঘেউ ঘেউ শুনে বাইরে বেড়িয়ে আসেন তিনি । দেখেন একটা কালো রঙের পথ কুকুর দাঁড়িয়ে আছে । পশুপ্রেমী যুবককে দেখে কুকুরটি লেজ নাড়তে নাড়তে কুঁইকুঁই করে কিছু একটা বলার চেষ্টা করে । যুবক ভালো করে লক্ষ্য করতেই নজরে পড়ে কুকুরটির ডান কানে গভীর ক্ষত,সেখানে পোঁকা গিজগিজ করছে । পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার মুরাতিপুর বাসস্ট্যান্ডের ব্যবসায়ী তথা পশুপাখি প্রেমী শেখ আমিরের বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে কুকুরটি নিজের চিকিৎসার জন্যই তাঁর কাছে ছুটে এসেছে । এরপর তিনি কুকুরটির ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে ওষুধ লাগান, ইনজেকশন দেন । কিছু বিস্কুট খেতে দেন । তারপর চলে যায় কুকুরটি ।
এদিকে একটা পথ কুকুরের এই প্রকার বুদ্ধিতে বিস্মিত এলাকার বাসিন্দারা । শেখ আমির বলেন,’মুরাতিপুর বাজারে অন্তত ২০০ টি ওষুদের দোকান আছে । এছাড়া আরও বহু অনান্য দোকান পাট আছে । কিন্তু বেছে বেছে আমার দোকানেই ছুটে আসে কুকুরটি । ওই কুকুরটির এই প্রকার আচরণে আমি নিজেই অবাক হয়ে গেছি ।’
জানা গেছে,মুরাতিপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকাতেই বাড়ি শেখ আমিরের । বাড়িতে রয়েছেন বিধবা মা হাদিশা বিবি,স্ত্রী লুতফুন্নিশা শেখ ও তিন কন্যাসন্তান । তিন মেয়ের মধ্যে বড় আলিশা শবনম বিএ সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী । মেজ মনীষা শবনম এবারে মাধ্যমিক দেবে এবং ছোটো তানিশা পারভীন তৃতীয় শ্রেনীতে পড়াশোনা করে । বাড়ির অনতিদূরে বাদশাহী রোডের পাশে একটা গুমটি মোবাইলের যন্ত্রাংশের ব্যবসা করেন আমির । সেই উপার্জনেই কোনো রকমে তার সংসার চলে । এর বাইরে পশুপাখি প্রেমী বলে এলাকায় পরিচিতি রয়েছে তাঁর । কোথাও পথ কুকুর জখম হওয়ার খবর পেলে তৎক্ষণাৎ সেখানে ছুটে গিয়ে চিকিৎসা করে আসেন । দূর্ঘটনায় পথ কুকুরের বা অনান্য পশুর মৃত্যু হলে সৎকারও করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে ।
শেখ আমির বলেন,’মুরাতিপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার ওই পথ কুকুরটি হয়তো আমার উপর নজর রাখতো । তাই সে ধরেই নিয়েছিল যে আমার কাছে এলে চিকিৎসা পাবে । তাই আজ বৃহস্পতিবার সকালে আমি দোকান খুলতেই আমার কাছে ছুটে আসে কুকুরটি । দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে ক্ষতস্থান চিকিৎসা করার জন্য আমাকে অনুরোধ করে । আমার জীবনে এই প্রথম এই প্রকার ঘটনা দেখলাম ।’
উল্লেখ্য,করোনা মহামারীতে লক ডাউনের সময় ভাতার এলাকার বহু পথকুকুরের খাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন শেখ আমির । এলাকায় ঘুরে ঘুরে পথ কুকুরদের মুখে খাবার তুলে দিয়ে এসেছেন তিনি । কিন্তু সীমিত উপার্জনে কিভাবে সেই খরচ জোটাতেন ? এই প্রশ্নের উত্তরে আমির বলেন, ‘মুরাতিপুরের বাসিন্দা ইনসান শেখ নামে আমার এক বন্ধু আছে । অবস্থাপন্ন ঘরের ওই বন্ধু লকডাউনের সময় আমায় খরচ খরচা জুটিয়েছিল । এছাড়া আমার জমানো কিছু টাকা আছে । তা থেকেও খরচ করেছিলাম ।’ তিনি পথকুকুরদের সাহায্যার্থে সকল মানুষদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান ।।