এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,৩০ জুলাই : ভারতের নির্বাচন কমিশন ভুয়ো ও মৃত ভোটারের পাশাপাশি রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী মুসলিমদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে বিশেষ নিবিড় সংশোধন(এস আই আর) শুরু করেছে । এনআরসি নিয়ে তো বিরোধিতা ছিলই,এখন এসআইআর নিয়েও প্রবল বিরোধিতা করছেন মমতা ব্যানার্জি ও তার দল তৃণমূল কংগ্রেস । এসআইআর বন্ধ করতে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মিত্র সুপ্রিম কোর্টেও গিয়েছিলেন । কিন্তু সেখানে জোর ধাক্কা খেয়েছেন তিনি । কিন্তু মমতা কেন এসআইআর-এর বিরোধিতা করছেন ? এই বিষয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি হল, এরাজ্যে অন্তত ১ কোটি ২৫ লক্ষ রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী মুসলিম ভোটার রয়েছে, যারা তৃণমূলের কোর ভোটব্যাংক । আর কমিশন এরাজ্যে এসআইআর-এর কাজ যথাযথ করলে তৃণমূলের ভোট ২ কোটির নিচে নেমে আসবে, যেকারনে মমতা ব্যানার্জি বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালি নির্যতনের ধুয়ো তুলে এরাজ্যে এসআইআর এর কাজ বন্ধ করে দিতে চাইছেন বলে দাবি করেছিলেন বিরোধী দলনেতা ।
এরাজ্যে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশ নিয়ে শুভেন্দুর এই আশঙ্কার মাঝেই একটা চাঞ্চল্যকর দাবি করা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায় । বলা হচ্ছে যে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাসনাবাদে বসবাসকারী আকবর আলী গাজী এবং তার স্ত্রী ফারহানা গাজী আদপে বাংলাদেশি । অনুপ্রবেশের পর তারা তৃণমূল কংগ্রেসের এক নেতার বদান্যতায় ভারতীয় নাগরিক এবং এরাজ্যের ভোটার বনে গেছেন ।
হিন্দু ভয়েসের এক্স হ্যান্ডেলে ওই দম্পতির এরাজ্যের ভোটার লিস্টে নাম ও আকবর আলী গাজীর বাংলাদেশের নাগরিকত্বের পরিচয় পত্র শেয়ার করে লেখা হয়েছে,’আমরা আপনাদের সামনে পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় জালিয়াতির আরেকটি ঘটনা নিয়ে এসেছি। বাংলাদেশি নাগরিক আকবর আলী গাজী এবং তার স্ত্রী ফারহানা গাজী ২০১৭ সালে অবৈধভাবে ভারতে আসেন। তারা উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাসনাবাদে বসবাস শুরু করেন। ২০১৯ সালে, তারা ভোটার হন। পরে, তারা জমি কেনেন। গিয়াসউদ্দিন গাজী নামে স্থানীয় তৃণমূল নেতার সহায়তায় তারা ভারতের ভোটার হন। আশ্চর্যজনকভাবে, তারা বেশ কয়েকটি নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার সাথে সাথে, এই জুটি এখন আত্মগোপনে রয়েছে।’
শেয়ার করা ভোটার লিস্ট অনুযায়ী, আকবর আলী গাজীর ভোটার কার্ডের ১৩৭ সিরিয়ালে থাকা ভোটার কার্ডের নম্বর : AMT 1109487 । তার স্ত্রী ফারহানা গাজীর নাম রয়েছে ১২৮ সিরিয়ালে । তার ভোটার কার্ড নম্বর হল : AMT 1109495 । দম্পতির বাড়ির নম্বর n0043 । প্রদত্ত আকবর আলী গাজীর বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার বাবার নাম মোঃ হোসেন আলি গাজি এবং মা সোনাজান বিবি । তার জন্ম তারিখ : ০৭ জানুয়ারী ১৯৫১ । তবে তার বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্রের আইডি নম্বরটি কালো কালি বুলিয়ে আড়াল করা আছে । যদিও এই ঘটনার সত্যতা যাচাই করেনি এইদিন । তবে বিষয়টি সত্য হলে তা খুবই উদ্বেগের বলে মনে করছেন অনেকে।
ফালাকাটা টাউন মণ্ডল বিজেপি সভাপতি পার্থসারথি দার(রানা) ওই বাংলাদেশি দম্পতির ছবি, বিলাসবহুল বাড়ি ও ভোটার কার্ডের ছবি পোস্ট করে একটা বড়সড় প্রতিবেদন লিখেছেন । তিনি লিখেছেন,দুই দেশের ভোটার তালিকায় এক দম্পতি! উত্তাল হাসনাবাদের মাখালগাছা পঞ্চায়েত হাসনাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনা: ভারত এবং বাংলাদেশ—দু’দেশের ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে এক বাংলাদেশি দম্পতির। এমনই বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহাকুমার মাখালগাছা পঞ্চায়েতে। নাম সেই দম্পতির—আকবর আলি গাজী ও তার স্ত্রী ফারহানা গাজী।
সূত্রের খবর, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসে এই দম্পতি। তারপর থেকেই বসবাস শুরু করে মাখালগাছা অঞ্চলের গিয়াস উদ্দিন গাজীর বাড়িতে। যিনি স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির সম্পাদক ও NREGA প্রকল্পের সুপারভাইজার পদে রয়েছেন।
অভিযোগ, ওই দম্পতির নাম বাংলাদেশ এবং ভারতের ভোটার তালিকাতেই রয়েছে। প্রমাণস্বরূপ নথিপত্র স্থানীয়দের হাতে এসেছে, যা স্পষ্ট করছে—আকবর ও ফারহানা দু’দেশেই ভোটার তালিকাভুক্ত।
স্থানীয় মেম্বার ও গ্রামবাসীদের দাবি, বারবার ঊর্ধ্বতন প্রশাসনকে জানানো সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অভিযোগের আঙুল উঠেছে গিয়াস উদ্দিন গাজীর দিকেও, যার বাড়িতেই ওই বাংলাদেশি দম্পতি আশ্রয় নিয়েছিল।এই খবর সংগ্রহ করতে যখন সাংবাদিকরা এলাকায় পৌঁছান, তখনই গা ঢাকা দেয় আকবর-ফারহানা।এ বিষয়ে গিয়াস উদ্দিন গাজী বলেন, “আমি কিছুই জানি না। যদি এরকম হয়ে থাকে, সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে, আমরা তা মাথা পেতে নেব।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এমন বেআইনি নাগরিকত্ব ও ভোটার তালিকাভুক্তির ঘটনা দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক ।।

