স্বাধীনতার আগে ও পরে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ও তার প্রধান সাগরেদ জহরালাল নেহেরু মিলে কংগ্রেসকে নিজেদের ইচ্ছামত ব্যবহার করেছেন । ওই দুই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ইসলাম প্রীতি কারোর অজানা নয় । পাশাপাশি বংশ পরম্পরায় নেহেরু ও তার পরিবার হিন্দু বিদ্বেষী মানসিকতা অটুট রেখে দিয়েছে । ব্রাহ্মণ, বানিয়া, ভূমিহার, লালা, যাদব, দলিত বা অন্য কোনো বর্ণেরই হোক না কেন প্রতিটি হিন্দু বর্ণের ওপরই বিভিন্নভাবে অত্যাচার চালিয়ে গেছে কংগ্রেস । কিন্তু আত্মবিস্মৃত হিন্দুর অতীত ভুলে যাওয়ার অভ্যাস তাদের উত্তরসূরীদের বিপদে ফেলে দিয়েছে ও দিচ্ছে । এই প্রতিবেদনে রাজপুতদের উপর কংগ্রেসের অত্যাচারের কথা তুলে ধরা হল ।
বিশ্ববিখ্যাত ভোগ(Vogue) ম্যাগাজিন রাজপুত মহারানী গায়ত্রী দেবীকে বিশ্বের ১০ জন সুন্দরী নারীর মধ্যে স্থান দিয়েছে, যা সত্যিই গর্বের বিষয়। ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থার সময় ইন্দিরা গান্ধী মহারানী গায়ত্রী দেবীর প্রাসাদে হানা দিয়েছিলেন এবং সেনাবাহিনী পাঠিয়ে রাতারাতি তার পুরো প্রাসাদ খুঁড়ে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী রানীর বিরুদ্ধে রাজপ্রাসাদে প্রচুর অর্থ লুকিয়ে রাখার অভিযোগ করেছিলেন “যার অপব্যবহার হতে পারে” বলে গুজব ছড়িয়ে দিয়েছিলেন । গায়ত্রী দেবী এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। ইন্দিরা গান্ধী তাঁর টাকা লুট করে প্রাসাদ ভেঙ্গে দিয়েছিলেন।
জয়পুরের তৃতীয় মহারানী গায়ত্রী দেবীকে ১৯৭৫ সালের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে ৬ মাসের জন্য তিহার জেলে পাঠানো হয়েছিল এবং মহারানী গায়ত্রী দেবী পরে তার জেলবন্দি কঠিন দিনগুলির কথা প্রকাশ্যে এনেছিলেন । তিনি বলেছিলেন,’তিহার জেলখানা ছিল মাছের বাজারের মতো, যেটা ছিল ক্ষুদে চোর আর পতিতাদের চেঁচামেচিতে ভরা।’
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করাও গুরুত্বপূর্ণ। জরুরি অবস্থার সময়, কোচবিহারের রাজকুমারী এবং জয়পুরের তৃতীয় মহারানী গায়ত্রী দেবী এবং মহারানী বিজয়া রাজে সিন্ধিয়াও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নিশানায় ছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী সংসদে নিজের চেয়ে সুন্দরী একজন মহিলাকে সহ্য করতে পারেননি। একবার তিনি জনসভায় গায়ত্রী দেবীকে অপমানও করেছিলেন । পার্লামেন্টে গায়ত্রী দেবীর উপস্থিতি ইন্দিরা গান্ধীর জন্য সবচেয়ে বড় বিরক্তির কারণ ছিল।
১৯৭৫ সালের ২৫ জুন, যখন ইন্দিরা গান্ধী দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন, গায়ত্রী দেবী মুম্বাইতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে তিনি দিল্লি ফিরে যান। লোকসভায় পৌঁছে তিনি বিরোধী দলের সব আসন খালি দেখতে পান। আওরঙ্গজেব রোডে তার বাড়িতে একটি আয়কর অভিযান পরিচালিত হয়েছিল, যেখানে তাকে বৈদেশিক মুদ্রা আইনের অধীনে সম্পদ গোপন করার অভিযোগ আনা হয়েছিল।
তিহার জেলের নোংরা সেলে নোংরা খাবার খেয়ে মহারানী গায়ত্রী দেবীর স্বাস্থ্যের অবনতি হয়। তিহারে পৌঁছানোর কয়েক সপ্তাহ পরে, তার মুখে ঘা দেখা দেয়। তাকে ডেন্টিস্টের কাছে চিকিৎসা নেওয়ার অনুমতি দিতে জেল কর্তৃপক্ষের তিন সপ্তাহ লেগে যায়। জেলে কাটানো সময়টি মহারানী গায়ত্রী দেবীর স্বাস্থ্যের উপর খুব খারাপ প্রভাব ফেলে এবং পরে তার পিত্তথলিতে পাথর ধরা পড়ে । অবশেষে মহারানী গায়ত্রী দেবী ইন্দিরার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং তারপর তিনি প্যারোলে মুক্তি পান।
সাধারণ ক্ষমার পরেও, ইন্দিরা গান্ধী মহারানী গায়ত্রী দেবীর মুক্তির জন্য অনেক শর্ত রেখেছিলেন, যার মধ্যে একটি ছিল জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর, ফুসফুসের সংক্রমণের কারণে মহারানী গায়ত্রী দেবী রাজনীতি থেকে অবসর নেন এবং গায়ত্রী দেবী পক্ষাঘাতের সাথে লড়াই করার সময় মারা যান । ইন্দিরা গান্ধীকে আজও গান্ধী-নেহেরু পরিবারের পদলেহনকারীরা দেবীর আসনে বসিয়ে রেখেছে । দীর্ঘ প্রায় ছয় দশক ক্ষমতার অলিন্দ থেকে নেহেরু ও ইন্দিরার যাবতীয় কুকর্ম এতদিন ধরে তার আড়াল করে গেছ । তবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু বুদ্ধিজীবী কংগ্রেসের কুকীর্তি লিপিবদ্ধ করে গিয়েছিলন বলে আজ সাধারণ মানুষ তাদের আসল স্বরূপ জানতে পারছে । কংগ্রেস শুধুমাত্র রাজপুতদের উপর যে অত্যাচার করেছিল তার বিবরণ দিতে গেলে কয়েকটা বই লেখা যেতে পারে। অথচ আজ সেই কংগ্রেসের কিছু কপট রাজপুত সব কিছু ভুলে গিয়ে ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য গান্ধী-নেহেরু পরিবারের পদলেহনে মত্ত ।
রাজস্থানের জয়পুরের মহারানী গায়ত্রী দেবী সম্পর্কে বলতে গেলে তিনি বহু গুণের অধিকারী এক নারী ছিলেন । আইকনিক, অসাধারণ, অপ্রচলিত, মতামতযুক্ত এবং শক্তিশালী প্রভৃতি বিশেষণগুলি জয়পুরের মহারানী গায়ত্রী দেবীর জন্য নগন্য । Vogue দ্বারা নির্বাচিত বিশ্বের অন্যতম সুন্দরী মহিলা হিসাবে তালিকাভুক্ত, সৌন্দর্য থেকে মস্তিষ্ক-এই মহিলার সবকিছুই ছিল । সামন্ত পরিচয়ের শিকল ছিঁড়ে বেরিয়ে এসে সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশে যাওয়ার তাঁর নিজস্ব পদ্ধতি তাঁকে মহান এক হিন্দু নারী করে তুলেছিল । বংশানুক্রমিকভাবে ক্ষমতার অলিন্দে বিচরণ করা ইন্দিরা গান্ধীর থেকে সব কিছুতেই এগিয়ে ছিলেন মহারানী গায়ত্রী দেবী । তিনি ১৯৬২ সালে গিনেস বুক অফ রেকর্ডস দ্বারা নথিভুক্ত বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জিতে ভারতীয় সংসদে একটি আসন জিতেছিলেন। রাজমাতা ২,৪৬,৫১৬ ভোটের মধ্যে ১,৯২,৯০৮ ভোট জিতে ইতিহাস তৈরি করেছিলেন এবং ১৯৭১ সাল পর্যন্ত টানা দুই মেয়াদে তার পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
তাঁর তারকাবহুল রাজনৈতিক কর্মজীবনের পাশাপাশি, একজন সমাজ সংস্কারক হিসেবে তাঁর কাজগুলোও অনেক মনোযোগের দাবি রাখে। মহারানী গায়ত্রী দেবী ১৯৪৩ সালে জয়পুরে প্রথম অল-গার্লস কলেজ গঠন করেন, যা মহারানী গায়ত্রী দেবী গার্লস স্কুল নামে পরিচিত। ২৬ একর জমিতে বিস্তৃত, স্কুলটিতে আজ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের ৩,০০০ জনেরও বেশি পড়ুয়া রয়েছে, যেখানে ৪০০ জন ছাত্রের আবাসিক সুবিধা রয়েছে।
তা ছাড়া, তিনি ছিলেন সেই সংস্কারকদের মধ্যে একজন যিনি মহিলাদে পর্দানশীন থেকে মুক্ত করেছিলেন । সংস্কৃতি এবং শিল্পের একজন আগ্রহী সমর্থক ছিলেন মহারানী । তিনি নীল মৃৎপাত্রের তৎকালীন মৃত শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত ও প্রচার করেছিলেন বলেও জানা যায়!মহারাণী গায়ত্রী দেবী ছিলেন ভারতের সবচেয়ে সুন্দরী ফ্যাশন আইকন ।তিনি ছিলেন একজন চমৎকার ঘোড়সওয়ার এবং একজন উজ্জ্বল পোলো খেলোয়াড় । বহুমুখী ব্যক্তিত্ব এই নারীর নতুন নতুন গাড়ির প্রতিও আগ্রহ ছিল । ভারতে প্রথম মার্সিডিজ-বেঞ্জ ডব্লিউ ১২৬ আমদানির জন্য পরিচিত ছিলেন মহারানী গায়ত্রী দেবী । পরে গাড়িটি মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়। শুধু তাই নয়,তিনি বেশ কয়েকটি রোলস-রয়েস অটোমোবাইল এবং একটি বিমানের মালিকও ছিলেন । যা ইন্দিরা গান্ধীর হিংসার প্রধান কারণ বলে মনে করা হয় ।।