স্বাধীনতা উত্তর ভারতে সর্বাধিক সময়ে দেশ শাসন করা কংগ্রেসকে নিয়ে বারবার বিভিন্ন প্রশ্ন ওঠে । সংবিধান নিয়ে কাটাছেঁড়া, তোষামোদি রাজনীতির নামে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরণ এবং পাকিস্তান প্রেম নিয়ে এখানো অভিযোগ উঠে আসছে তথাকথিত ‘সেকুলার’ শতাব্দী প্রাচীন রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে । স্বাধীন হওয়ার পর একাধিক যুদ্ধে জড়াতে হয়েছে ভারতকে । তার মধ্যে ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং ১৯৬২ সালে চীনের সাথে যুদ্ধে জহরলাল নেহেরুর কিছু ‘রহস্যজনক’ ভূমিকা নিয়ে ওঠা প্রশ্নের উত্তর আজও পাওয়া যায়নি ।
১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে ভারত কর্তৃক পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দীদের নেওয়ার সঠিক পরিসংখ্যান কোথাও পাওয়া যায় না । তবে সে সময়ের সামরিক নথি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এই সংখ্যা প্রায় ৯০ থেকে ৯৩ হাজার ছিল। যার মধ্যে ৮০ থেকে ৮২ হাজার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সৈন্য ও অফিসার ছিল এবং প্রায় ১০ থেকে ১৩ হাজার বেসামরিক ছিল ৷ এটি এখন পর্যন্ত বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সামরিক বিজয় এবং সবচেয়ে বড় আত্মসমর্পণ । ভারতীয় বাহিনী এই যুদ্ধে অদম্য সাহস, বীরত্ব, উজ্জ্বল কৌশল এবং উচ্চ মনোবল প্রদর্শন করেছিল । কিন্তু ভারত আলোচনার টেবিলে এই জয়ী যুদ্ধে পাকিস্তানের কাছে রহস্যজনকভাবে পরাজয় স্বীকার করেছিল।এক কথায় বলতে গেলে বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ ভারতীয় সেনাবাহিনী জিতেছিল কিন্তু তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী পাকিস্তানের সাথে আলোচনার টেবিলে হেরেছিলেন । যাতে তৎকালীন ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকা নিয়ে বারবার প্রশ্ন ওঠে ।
সারা বিশ্বের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞদের মতে, ইন্দিরা গান্ধী যদি চাইতেন তাহলে তিনি এই পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দীদের বিনিময়ে পাকিস্তানের সাথে পাকিস্তান অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীর (পিওকে) নিয়ে আলোচনা করতে পারতেন… কিন্তু তিনি তা করেননি । এটা কি নিছক পাকিস্তান প্রেম নাকি এর পিছনে অন্যকিছু রহস্য ছিল তা আজও অজানা ।
আর একটা মজার বিষয় হল যে এই যুদ্ধে, ৫৪ জন ভারতীয় যুদ্ধবন্দীকে পাকিস্তান ধরে নিয়েছিল । তারা সকলেই ভারতীয় সেনা সদস্য । ইন্দিরা গান্ধী পিওকে নিয়ে দর কষাকষি করেননি, এটা তার ব্যর্থতা, তবুও দেশ সহ্য করেছে । কিন্তু কেন ইন্দিরা ৫৪ জন ভারতীয় সৈন্যকে পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি দেওয়ার এবং ৯৩ হাজার পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দীকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে ভারতে ফিরিয়ে আনার চুক্তি করেননি তা সকলের অজানা । ওই ৫৪ জন ভারতীয় সেনার জীবনের কি কোন মূল্য ছিল না ? তাদের পরিবার বা ভারত সরকার কেউই জানে না যে এই ৫৪ জন বন্দী আজ বেঁচে আছে নাকি মৃত নাকি পাকিস্তানের কোন কারাগারে তারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন । এই যুদ্ধের ৫৩ বছর পার হয়ে গেছে । পাকিস্তানের হাতে বন্দি এই ভারতীয় সৈন্যদের পরিবার এখনও জাতীয় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন থেকে জাতিসংঘের কাছে তাদের ছেলে, ভাই বা স্বামীদের পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য আবেদন করছে ।
তবে আরও একটা চাঞ্চল্যকর তথ্য হল যে তৎকালীন ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সরকারের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এই ৫৪ জন ভারতীয় পিওডবলু সৈন্যের নাম ও পরিচয়ের ফাইল পাকিস্তানের কাছে হস্তান্তর করতে দীর্ঘ ৭ বছর সময় নিয়েছিলেন । ভারত সরকার (কংগ্রেস) এই ৫৪ জন ভারতীয় যুদ্ধবন্দিকে পাকিস্তান থেকে মুক্তি দেওয়ার কোনও প্রচেষ্টা না করে প্রথমে তার নথিতে মিসড ইন ওয়ার অর্থাৎ যুদ্ধে নিখোঁজ ক্যাটাগরিতে রাখে এবং কিছু সময় পরে তাদের নিহতের ক্যাটাগরিতে রাখা হয় ।
১৯৪৮ সালের ভারত-পাকিস্তান অননুমোদিত যুদ্ধে একজন ভারতীয় সৈন্য যুদ্ধবন্দী হননি… ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং সরকারের কাছে এই বিষয়ে কোনও নথি নেই । ১৯৬২ সালের ইন্দো-চীন অনুমোদিত যুদ্ধে ৩৩০০ জনেরও বেশি ভারতীয় সৈন্য শহীদ হয়েছিল, যখন একটি মোটামুটি অনুমান অনুসারে, ১৫০০ জনেরো বেশি, সম্ভবত ২০০০ জন ভারতীয় সৈন্যকে ভারত ও চীন যুদ্ধবন্দী হিসাবে গ্রহণ করেছিল… এই সংখ্যা হতে পারে সর্বোচ্চ ২৫০০ । কিন্তু নেহরু সরকার এমন কোনো সরকারী নথি উপস্থাপন করেনি যাতে তারা চীন কর্তৃক গৃহীত ভারতীয় যুদ্ধবন্দীদের সঠিক সংখ্যা দিতে পারে । কিন্তু কেন? তারা কি ভারতের সৈনিক এবং নাগরিক ছিলেন না? তাদের মুক্ত করার জন্য নেহেরু সরকার কী প্রচেষ্টা চালিয়েছিল এখন দেশটির এই বিষয়ে জানার সময় এসেছে ।
হিন্দি চিনি ভাই ভাই স্লোগান দিয়ে কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই ভারতকে যুদ্ধে ফেলে দিয়েছিলেন জহরলাল নেহেরু৷ অ্যানিমেশন, জ্যাকেট, টুপি, জুতা ছাড়াই বহু ভারতীয় সৈন্য নদীতে ঝাঁপ দিয়ে জীবন বাঁচাতে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন।
১৯৭১ সালের ৫৪ জন ভারতীয় যুদ্ধবন্দী কোথায় ? তারা কি বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে ? যদি বেঁচে থাকেন তাহলে কতজন বেঁচে আছেন ? তারা পাকিস্তানের কোন কারাগারে বন্দী ? ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্যের মুক্তির বিনিময়ে এই ৫৪ জন ভারতীয় সেনার মুক্তির জন্য ইন্দিরা গান্ধী দর কষাকষি করলেন না কেন? কেন ইন্দিরা সরকার ৭ বছর পর ৫৪ জন ভারতীয় যুদ্ধবন্দীর পরিচয় ও নামের ফাইল পাকিস্তানের কাছে হস্তান্তর করল? কেন এই সৈন্যদের মৃতদেহ পাওয়া না গেলে বা কোনো নিশ্চিতকরণ ছাড়াই যুদ্ধে মিসড থেকে কিল্ড ইন ওয়ার ক্যাটাগরিতে পরিবর্তন করা হলো ? ইন্দিরা ও তার বাবা জহরলালের বিরুদ্ধে এমন বিস্তর প্রশ্ন ওঠে । যার উত্তর আজও অজানা । যেকারণে ভারতের প্রাক্তন এবং মৃত এই দুই প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকাকে সর্বদা সন্দেহের চোখে দেখা হয় ।।