এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,০৬ জুলাই : ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসবাদী ইকরামুল হক ওরফে আবু তালহাকে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার সবুজবাগ এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) । তার বিরুদ্ধে ভারতে অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে । ধৃত সন্ত্রাসী আবু তালহার বাড়ি বাংলাদেশের ময়মনসিংহে । বাংলাদেশি কওমি মাদ্রাসার ছাত্র আবু তালহা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন সাব- কন্টিনেন্টের (একিউআইএস) দাওয়াহ শাখার শীর্ষ নেতা । ভারতের ‘দেওবন্দ’-এ পড়তে এসে সে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে বলে জানতে পেরেছে সিটিটিসি । ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর ধাওয়া খেয়ে সে দেশে পালিয়ে আসে । কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী আবু তালহা নিজের ও স্ত্রী ফারিয়া আফরিন আনিকার ভারতীয় আধার কার্ড ও পাসপোর্ট পর্যন্ত তৈরি করেছিল । যেগুলি এখন সিটিটিসির হেফাজতে আছে ।
জানা গেছে,ট্যুরিস্ট ভিসায় ভারতে গিয়ে দেওবন্দে ভর্তি হলেও পরবর্তী সময়ে আবু তালহা নুর হোসেন নামে ভারতীয় আধার কার্ড জুটিয়ে ফেলে । পরবর্তী সময়ে ওই নামে সে ভারতীয় পাসপোর্টও তৈরি করে নেয় । পাসপোর্ট ও আধার কার্ডে তার বাবার নাম ছিল সাবু মিয়া ও মায়ের নাম নাবিয়া বেগম। ঠিকানা দেয় কুচবিহারের সিংহীমারির মদনকুরা গ্রাম । তার স্ত্রী ফারিয়া আফরিন আনিকার নামেও ভারতের আধার কার্ড তৈরি করে সে। সেখানে আনিকার নাম দেওয়া হয় মরিয়াম খাতুন, পিতার নাম নানু মিয়া।
গ্রেফতারের জিজ্ঞাসাবাদে আবু তালহা জানিয়েছে, সে দেওবন্দের মাদ্রাসায় পড়তে গিয়ে আমান নামে একজনের মাধ্যমে একিউআইএসের সঙ্গে যুক্ত হয়। একিউআইএসের সাংগঠনিক কাজে সে ভারতের কুচবিহার, ভোপাল, আসাম, দিল্লিসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে থেকেছে। সে অনলাইন ও অফলাইনে সংগঠনে নতুন যোগ দেওয়া সদস্যদের নিয়মিত ক্লাস নিত ।
সিটিটিসির প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহম্মদ আসাদুজ্জামান জানান,সম্প্রতি গুজরাটে একিউআইসের সদস্য হিসেবে কয়েকজন বাংলাদেশি গ্রেফতার হওয়ার পর তাদের জেরা করে রিক্রুটার হিসেবে আবু তালহার নাম জানতে পারে ভারতের গোয়েন্দারা । গত ৩০ মে আবু তালহা ও তার স্ত্রী ফারিয়া আফরিন আনিকাকে গ্রেফতার করা হয়েছে । ধৃত তালহাকে জেরা করে জানা গেছে যে সে ঢাকার ধানমন্ডি এলাকার একটি মাদ্রাসা ও সূত্রাপুরের ফরিদাবাদ মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস বিষয়ে পড়াশোনা করেছে । উচ্চ শিক্ষার জন্য সে ২০১৮ সালে সে ভারতের দেওবন্দে ভর্তি হয় । দেওবন্দে পড়তে গিয়েই সে আল-কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্টের (একিউআইএস) সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।
সিটিটিসি সূত্রের খবর, আবু তালহা অত্যন্ত মেধাবী । সে ২০০৭ সালে বেফাকের অধীনে হিফজ পরীক্ষায় সারা দেশে প্রথম স্থান অধিকার করেছিল । বাংলার পাশাপাশি উর্দু, আরবি ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষ তালহা । অল্প দিনের মধ্যেই সে তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়েও দক্ষ হয়ে ওঠে । এজন্য একিউআইসের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর অল্প দিন পরেই তাকে দাওয়াহ শাখার শীর্ষ নেতা হিসেবে মনোনীত করা হয়। সে একিআইএসের সদস্যদের নিয়মিত অনলাইনে দাওয়াহ বিষয়ে ক্লাসও নিত । ২০২২ সালের অক্টোবরে মধ্যপ্রদেশের ভোপাল থেকে আট জন বাংলাদেশি একিউআইএস সদস্যকে গ্রেফতার করে অ্যান্টি টেরোরিজম স্কোয়াড। তারপরেই গোয়েন্দাদের চোখে ধুলো দিয়ে স্ত্রী ও শিশু সন্তানসহ অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে তালহা । কিন্তু বাংলাদেশে পালিয়ে এসেও সে গোপনে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছিল। এনক্রিপ্টেড অ্যাপের মাধ্যমে তালহা সাংগঠনিক পরামর্শ দিত বলে বাংলাদেশের তদন্তকারী দল জানতে পেরেছে ।
মোহম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন,’একিউআইএসের প্রাক্তন প্রধান ওয়াসিম ওমরসহ দেশি-বিদেশি অনেক শীর্ষ নেতার সঙ্গে তার যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও আধ্যাত্মিক নেতা মাওলানা ওসমান গনি ও শাইখ তামিম আল আদনানীর সঙ্গেও তার যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে। তালহা আনসার আল ইসলামের নেতাদের সঙ্গে একিউআইএসের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে যোগসূত্র হিসেবেও কাজ করত ।’
সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানান, তারা ২০২১ সালে নারায়ণগঞ্জ থেকে খালেদ সাইফুল্লাহ নামে এক সন্ত্রাসীকে গ্রেফতারের পরও আবু তালহার বিষয়ে তথ্য পেয়েছিলেন। আবু তালহা তখন সন্ত্রাসী সংগঠনে মাওলানা সাবেত নামে পরিচিত ছিল। খালেদ সাইফুল্লাহ তখন কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তাদের জানিয়েছিল, ভারতে আত্মগোপন করা মাওলানা সাবেত একিউএসের শীর্ষ নেতা। সে ভারতে বসে ভারত ও বাংলাদেশের একিইউআইএসের সদস্যদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিত এবং সদস্য সংগ্রহ করত । সিটিটিসির এক কর্মকর্তা বলেন, আবু তালহাকে গ্রেফতারের পর আমরা খালেদ সাইফুল্লাহকে তার ছবি দেখিয়েছি। খালেদ সাইফুল্লাহ তাকে মাওলানা সাবেত নামে শনাক্ত করেছে । জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও খালেদ সাইফুল্লাহ বর্তমানে সিটিটিসির নিয়মিত নজরদারির মধ্যে রয়েছেন বলে জানান তিনি ।।