এইদিন আন্তর্জাতিক ডেস্ক,২৬ সেপ্টেম্বর : বাংলাদেশে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে ভারত ইসলামপন্থীদের আন্দোলন এবং তাকে “বাংলাদেশি তালিবান” বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের তদারকি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস । বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে এশিয়া সোসাইটি ও এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউট আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি । এশিয়া সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কিউং–ওহা ক্যাং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও বরিষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারাকে পরিচয় করিয়ে দেন ইউনূস । আঞ্চলিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনায় মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এ ধরনের সহযোগিতার মাধ্যমে আমাদের সবাই (আঞ্চলিক অর্থনীতিতে) উপকৃত হয়। তাই আমি বলেছি, আমাদের আঞ্চলিক অর্থনীতি নিয়ে ভাবা উচিত। এটাই আমাদের করা উচিত। এখন ভারতের সঙ্গে আমাদের সমস্যা চলছে। কারণ, ছাত্ররা যেটা করেছে, সেটা তারা পছন্দ করেনি।’
তিনি বলেন, তারা (ভারত) প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে, যিনি সব সমস্যা তৈরি করেছেন এবং তরুণদের হত্যা করেছেন। এবং এটাই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি করেছে। তাছাড়া অপর পক্ষ (ভারত) থেকে ভুয়া খবরও আসছে। এটা খুব খারাপ বিষয়।’
বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের আন্দোলন হয়েছে বলে অপপ্রচার করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তারা বলেছে, এরা তালিবান এবং এদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ‘তারা এমনটাও বলেছে, আমিও একজন তালিবান। এর রসিকতার সুরে তিনি বলেন,আমার দাড়ি নেই,তা বাড়িতে রেখে এসেছি ।
এ সময় সার্কসহ আঞ্চলিক সংস্থার গুরুত্বও তুলে ধরেন মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আপনারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারেন। বাংলাদেশও আপনার দেশে বিনিয়োগ করবে। এটাই সার্কের ধারণা।’
সার্ক সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সার্কের পুরো ধারণা বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে এবং বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রাজধানীতে রাজধানীতে এই ধারণা প্রচার করেছে। তিনি বলেন, সার্ক একটি পরিবারের মতো, যার মূল ভাবনা ছিল দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে একত্র করা। তরুণেরা যেন একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারে, শিক্ষা ও ব্যবসায় অংশগ্রহণ করতে পারে।
ভারতকে নিশানা করে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, একে অপরের দেশে সফর করা, বন্ধুত্ব গড়ে তোলা, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে পড়াশোনা করা এবং দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটাই মূল ধারণা। তবে কিছুকাল আগে এটি কোনো এক দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খায়নি। তাই আমরা এটিকে স্থগিত করতে বাধ্য হই। আমরা দুঃখিত এবং সবাইকে আবারও একত্র করতে চাই। এটাই আমাদের সমস্যাগুলোর সমাধানের একমাত্র পথ। ইউনূস আরও বলেন, ‘আমি বললাম, নেপাল, ভুটানের মতো প্রতিবেশী এবং ভারতের সাতটি রাজ্যের দিকে তাকাচ্ছেন না কেন। বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে সাতটি রাজ্য রয়েছে, যেগুলোর সাগরের সঙ্গে কোনো সংযোগ নেই। এগুলো স্থলবেষ্টিত অঞ্চল।’
তিনি বলেন, আসিয়ানের বর্তমান চেয়ার মালয়েশিয়া। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই সমঝোতায় আসা সহজ নয়, বিশেষ করে মিয়ানমার, যাদের রোহিঙ্গা বিষয়ক সমস্যা রয়েছে। ইউনূস বলেন, ‘সে কারণে তারা হয়তো এগিয়ে আসবে না, তবে আমরা কাজ চালিয়ে যাব। আমরা মনে করি না, এটি মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে স্থায়ী দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করবে। আমাদের তা করার দরকার নেই। তাই সব সমস্যা সমাধান করতে হবে। রোহিঙ্গারা চাইলে মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারবে, তাদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা ও পেশায় ফিরে যেতে পারবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মিয়ানমারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকবে। একে অপরের সঙ্গে বিরোধ করা কারও জন্যই উপকারী নয়। তাই সমস্যার সমাধান করতে হবে।’ বাংলাদেশের আসিয়ানের অনানুষ্ঠানিক সদস্য হওয়ার সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে ইউনূস বলেন, ‘আমরা এটা করতে পারি। আসিয়ান একটি ভালো প্ল্যাটফর্ম, যেখানে আঞ্চলিক সমন্বয় ও আন্তসংযোগ গড়ে তোলা সম্ভব।’।