এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,২০ এপ্রিল : বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৩৩০ কিলোমিটার দূরে দিনাজপুরের বসুদেবপুর গ্রামে হিন্দু নেতা ভবেশ চন্দ্র রায় (৫৮)-কে বাড়ি থেকে অপহরণ করে নারাবাড়িতে নিয়ে গিয়ে তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করেছে জিহাদিরা । ইতিমধ্যেই এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে ভারত । ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশের লেখিকা তসলিমা নাসরিন আজ রবিবার ভবেশ চন্দ্র রায়ের নৃশংস হত্যার জন্য বাংলাদেশের সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দায়ি করে মন্তব্য করেছেন, ‘ইউনূস থাকলে দ্রুত হিন্দু শূণ্য হয়ে যাবে বাংলাদেশ’ ।
তিনি এক্স-এ লিখেছেন,’হিন্দু নেতা ভবেশ চন্দ্র রায়কে তার বাড়ি থেকে অপহরণ করে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে । আমরা অবশ্যই অনুমান করতে পারি যে খুনিরা কারা। মিস্টার ইউনূস হিন্দুদের হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেন না। তিনি প্রচার করেন যে হিন্দুরা ঠিকঠাক আছে, এবং হিন্দু নির্যাতনের খবরগুলি সবই মিথ্যা, গুজব, অথবা ভারত কর্তৃক তৈরি। ইউনূস যদি আর ক্ষমতায় থাকেন, তাহলে শীঘ্রই দেশ হিন্দু শূন্য হয়ে যাবে। হিন্দুদের বাঁচাতে হলে, ইউনূসকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করতে হবে ।’
ভবেশ চন্দ্র বাংলাদেশে যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের বিরাল ইউনিটের ভাইস প্রেসিডেন্টও ছিলেন। ভবেশ চন্দ্রের স্ত্রী শান্তনা রায় জানান, বৃহস্পতিবার রাতে দুটি বাইকে করে চারজন দুষ্কৃতী আসে এবং বাড়ির সামনে থেকেই ভবেশ চন্দ্রকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করেছে, ভবেশকে নারাবাড়িতে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয়। নৃশংস অত্যাচারেই তাঁর মৃত্যু হয়।জানা গিয়েছে, গুরুতর জখম অবস্থায় ভবেশকে দুষ্কৃতীরা ভ্যানে করে নিয়ে এসে বাড়ির সামনে ফেলে দেয়। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে উদ্ধার করে বিরাল উপজেলার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। এরপর তাঁকে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। শনিবার (১৯ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া পোস্টে তিনি বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে, বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘু নেতা ভবেশ চন্দ্র রায়কে অপহরণ ও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে।’ পোস্টে তিনি আরও বলেন, এই হত্যাকাণ্ডটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর ধারাবাহিক ও পদ্ধতিগত নির্যাতনের একটি অংশ, যেখানে আগের এমন ঘটনার অপরাধীরাও শাস্তি না পেয়ে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’
তিনি বলেন,’আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং আবারও অন্তর্বর্তী সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি যে, তারা যেন কোনও অজুহাত তৈরি না করে কিংবা কোনও প্রকার ভেদাভেদ না করে, সব সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করে।’
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে আহ্বান জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের যেন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। তারপরে অবশ্য ঢাকার তরফ থেকে পালটা বিবৃতি দিয়ে ওয়াকফ ইস্যুতে সুর চড়াতে শোনা যায়। এর মধ্যেই ভবেশ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের অগস্ট মাসে হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপরে নির্মম অত্যাচার চলছে। তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, নৃশংসভাবে খুন করা হচ্ছে। গত মাসেই ঢাকার একটি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্রে’র তরফে জানানো হয়, বাংলাদেশ জুড়ে হিন্দুদের বাড়ি, দোকানপাট ও মন্দির ভাঙচুরের ১৪৭টি ঘটনা ঘটেছে। ৩৬টি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।।