এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৫ অক্টোবর : হাওড়ার শ্যামপুর বাজার ব্যাবসায়ী সমিতি দুর্গাপূজা প্যান্ডেলে আগুন ও প্রতিমা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় স্থানীয় হিন্দুরা চরম ক্ষুব্ধ । নারী-পুরুষ নির্বিশেষে রাস্তায় নেমেছেন ‘জিহাদি’ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্থানীয় হিন্দুদের প্রতিবাদের বেশ কিছু ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে । যদিও শ্যামপুর বাজারের ঘটনায় রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস এখনো মুখে কুলুপ এঁটে আছে । তবে প্রথম থেকেই হামলার নিন্দায় সরব হচ্ছে বিজেপি । বিষয়টি সর্বপ্রথম প্রকাশ্যে এনেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । যদিও হিংসা ছড়ানোর সূত্রপাত সম্পর্কে তিনি কিছু জানাননি । হিন্দুদের আস্থার উপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন তিনি ।
পাশাপাশি হাওড়ার শ্যামপুরে দুর্গাপ্রতিমা ভাঙচুর ও প্যান্ডেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও বিজেপি নেতা অমিত মালব্য । দিলীপ ঘোষ প্রতিমা ভাঙচুরের ছবি এক্স-এ পোস্ট করে লিখেছেন,’গ্রেটার বাংলাদেশের পথে পশ্চিমবঙ্গ । বাংলাদেশের জিহাদিদের ডাকে ভারত থেকে পশ্চিমবঙ্গকে আলাদা করার চক্রান্তের প্রথম ধাপ স্বরূপ এই দুর্গা পূজায় দিকে দিকে ভাংচুর চালানো হল। কলকাতার গার্ডেনরিচ, হাওড়ার শ্যামপুর, উত্তরবঙ্গের কোচবিহার – কোথাও দুর্গা প্রতিমার ভাঙচুর চালানো হল, কোথাও মন্ডপে ঢাক , পূজার মন্ত্র বন্ধ করে দেওয়া হল তো কোথাও পূজা মণ্ডপে রেখে যাওয়া হল গোমাংস। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় হিন্দুদের নিরাপত্তা ও ধর্মাচরণের বিষয়টি নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তিত নন, তিনি শুধু কার্নিভাল আর উৎসব নিয়েই ব্যস্ত। প্রশাসনও কার্যত ঠুঁটো হয়ে রইল। এর আগেও আমরা দেখেছি কখনও কলকাতার মেয়র এবং পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ডাক দিচ্ছেন হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করাও তো কোথাও তৃণমূলের বিধায়ক প্রকাশ্যে বলছেন হিন্দুদের কেটে ভাসিয়ে দেওয়া হবে গঙ্গায়। প্রতিবার চুপ থাকতে দেখা গেছে মুখ্যমন্ত্রীকে। কেন? মমতা ব্যানার্জি কেন এতো হিন্দু বিরোধী ?’
অমিত মালব্যর প্রতিক্রিয়া,’পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি – যেমন শ্যামপুরে মা দুর্গা প্রতিমা পোড়ানো ও ভাঙচুর, কৃষ্ণনগরে প্রশাসনিক কর্মীদের দ্বারা একটি দুর্গা মূর্তি ভেঙে ফেলা এবং মেটিয়াবুরুজে আজানের সাথে হস্তক্ষেপের কারণে দুর্গাপূজা বন্ধ করার হুমকি – উত্থাপিত হয়েছে গুরুতর উদ্বেগ। হাওড়ার বাউরিয়ায় সাম্প্রতিক উদ্বেগজনক ঘটনা, যেখানে দুর্গা পূজার মিছিলে হিন্দুদের সহিংসভাবে আক্রমণ করা হয়েছিল, এটি একটি উদ্বেগজনক বৃদ্ধিকে চিহ্নিত করে৷ ভিজ্যুয়াল ইঙ্গিত করে যে হিন্দুদের হত্যা করার জন্য মিছিলে পাথর, কাচের বোতল এবং পেট্রোল বোমা ব্যবহার করা হয়েছিল, পুলিশ হয় লাঞ্ছিত হয়েছিল বা ঘটনাস্থল থেকে পিছু হটছিল।’
তিনি লিখেছেন,’এই অঞ্চলে রাম নবমী এবং এখন দুর্গাপূজার মতো উৎসবগুলিতে হিন্দুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার পুনরাবৃত্তির প্যাটার্নের পরিপ্রেক্ষিতে, এই অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের জন্য জবাবদিহিতার জরুরি প্রয়োজন৷ গতবার, রাম নবমীর সময় রিষরা এবং অন্যান্য বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক সহিংসতার পরে, কলকাতা হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন এবং এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দেয়, যার ফলে ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, যাদের অনেকেরই টিএমসি সংশ্লিষ্টতা ছিল। ২০২২ সালে, কোজাগরী লক্ষ্মী পূর্ণিমার সময় মমিনপুরে হিন্দুদের আক্রমণ করা হয়েছিল, যা আবার এই সপ্তাহে পড়ে। আমরা আশা করি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শান্তি নিশ্চিত করবেন এবং হিন্দুদের তাদের উৎসব উদযাপন করতে দেবেন।’ পাশাপাশি তিনি প্রশ্ন তুলেছেন,’বাঙালি হিন্দু উৎসব এবং ভক্তদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে লক্ষ্য করা একটি সমন্বিত প্রচেষ্টার পরামর্শ দেয়। অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য উদঘাটন এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জরুরী প্রয়োজন। এখন প্রশ্ন উঠেছে: এই হুমকি ও সহিংসতার কারণে কি বাঙালি হিন্দুদের তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় উৎসব ত্যাগ করতে হবে?’
উল্লেখ্য যে হাওড়ার শ্যামপুরে হিংসার ঘটনায় প্রদেশ কংগ্রেস উদ্বেগ প্রকাশ করলেও তাদের দুই জোট সঙ্গী তৃণমূল ও সিপিএম এখনো মুখ খোলেনি । ফলে দুই দলের ‘তোষামোদি রাজনীতি’ নিয়ে অনেকে কটাক্ষ করছেন ।।