এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতাড়,১৬ ডিসেম্বর : আদিবাসী কিশোরীকে ‘শ্লীলতাহানীর’ ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠল ভাতাড় । শ্লীলতাহানীর পরিবর্তে ধর্ষনের মামলা রজু করা ও আরও এক অভিযুক্তকে গ্রেফতারের দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে এগারোটা থেকে ভাতাড় থানা ঘেরাও করে রাখে আদিবাসী সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পরগনা মহলের ভাতাড় ব্লকের সদস্যরা । পাশাপাশি চলে বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্য সড়ক পথ অবরোধ । শেষে পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে প্রায় ঘন্টা দুয়েক পর অবরোধ তুলে নেওয়া হয় ।
জানা গেছে, ভাতাড়ের নৃসিংপুর গ্রামে বাড়ি বছর পনেরোর ওই আদিবাসী কিশোরীর । ঘটনাটি ঘটে গত সোমবার সন্ধ্যায় । ওইদিন বাড়ির অদুরে ক্যানেলের ধারে শৌচকর্ম সারতে গিয়েছিল ওই কিশোরী । সেই সময় পাশের সেরুয়া গ্রামের বাসিন্দা শেখ জামাল ও শেখ রেজাউল নামে দুই যুবক ওই রাস্তা দিয়ে বাইকে চড়ে বাড়ি ফিরছিল । তারা ওই কিশোরীকে জোর করে বাইকে তুলে নিয়ে নির্জন জায়গায় চলে যায় বলে অভিযোগ ৷ বেশ কিছুক্ষন পর ওই কিশোরী বাড়ি ফিরে এসে ঘটনার কথা জানায় । তারপর ওইদিন রাতেই দিকে ওই দুই যুবকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করে কিশোরীর পরিবার । গত মঙ্গলবার প্রতিবন্ধী যুবক শেখ রেজাউলকে গ্রেফতার করে পুলিশ । ধৃতের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানী ও পকসো আইনে মামলা দায়ের করা হয় বলে গেছে । আর এনিয়েই আদিবাসী সংগঠনের মধ্যে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি হয় ।
দেখুন ভিডিও :
আদিবাসী সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পরগনা মহলের পুর্ব বর্ধমান জেলার ইনচার্জ সুকল হাঁসদার অভিযোগ, ‘ওই দিন শেখ জামাল ও শেখ রেজাউল ওই কিশোরীকে ধর্ষন করেছিল । অথচ তাদের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানীর মামলা রজু করা হয়েছে । তাও একজনকে গ্রেফতার করা হলেও আরও একজন বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে । আমাদের দাবি অবিলম্বে দ্বিতীয় অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে হবে । সেই সঙ্গে দোষীদের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানীর পরিবর্তে ধর্ষনের মামলা রজু করতে হবে ।’ যদিও পুলিশের দাবি কিশোরীর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতেই মামলা রজু করা হয়েছে ।
জানা গেছে,এদিন আদিবাসী সংগঠনের ভাতার ব্লকের প্রায় দুই শতাধিক সদস্য লাঠি-সোঁটা, তির-ধনুক নিয়ে মিছিল করে ভাতাড় থানার সামনে এসে জড়ো হয় । তাঁরা থানা ঘেরাও করে পুলিশের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে । পাশাপাশি বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্য সড়ক পথ অবরোধ করে রাখে সংগঠনের সদস্যরা ।
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে নৃসিংহপুর গ্রামের বাসিন্দা বিএড ছাত্রী শম্পা মুর্মুর অভিযোগ, ‘আমাদের গ্রামের ক্যানেল পাড়ের রাস্তা দিয়ে স্কুল কলেজে যাতায়তের সময় প্রতিনিয়ত আমাদের সেরুয়া গ্রামের কয়েকজন দুষ্কৃতির ইভটিজিং-এর শিকার হতে হয় । অন্ধকার হয়ে গেলে ওই রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরতে ভয় লাগে । আমাদের দাবি, পুলিশ আমাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করুক ।’ সেই সঙ্গে ওই কিশোরীর ঘটনায় অন্য আরও এক অভিযুক্তকে অবিলম্বে গ্রেফতারের পাশাপাশি ধৃতদের বিরুদ্ধে ধর্ষনের মামলা রজু করার দাবি জানিয়েছেন তিনি ।
জানা গেছে, ভাতাড় থানার সামনে আদিবাসী সংগঠনের অবরোধের জেরে বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্য সড়ক পথের দু’ধারে অনেক যানবাহন আটকে যায় । তবে অ্যাম্বুলেন্স ও অনান্য রোগীর গাড়িগুলি ছেড়ে দেওয়া হয় । ভাতাড় থানার ওসি প্রনব বন্দ্যোপাধ্যায় বিক্ষোভকারীদের অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ করেন । কিন্তু তাঁর কোনও কথাতেই কর্নপাত করেনি বিক্ষোভকারীরা । শেষে নির্যাতিতা কিশোরীর পরিবারের লোকজন ও আদিবাসী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন ভাতাড় থানার ওসি । তারপর ওসির আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেওয়া হয় ।।