এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৮ মে : মালদা জেলার রতুয়া’য় হিন্দুদের উপর হামলা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীসহ বিজেপি নেতারা । রতুয়া’য় পাথরবাজির ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে শুভেন্দুবাবু দাবি করেন যে একটি মন্দির নির্মান করা নিয়ে বিবাদের সূত্রপাত । তবে শুধু শুভেন্দু অধিকারীই নন,রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার থেকে বিজেপির নেতারাও একই অভিযোগ তুলেছেন । তবে মালদা জেলা পুলিশের দাবি,’মালদার রতুয়া থানার অন্তর্গত একটি ঘটনাকে ঘিরে কিছু মহল থেকে ভুল তথ্য ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে’ এবং এই ঘটনায় ‘দুই পক্ষ থেকে মোট ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে’ ।
কিন্তু শুভেন্দু অধিকারী মালদার রতুয়া’য় ক্ষতিগ্রস্তদের পরিসংখ্যান তুলে ধরে ফের একটি পোস্ট করে বলেছেন,’পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুদের ধর্মাচরণ করাটাই এখন ‘অপরাধ’৷ পাথরবাজির ভিডিও ফুটেজ শেয়ার করে তিনি লিখেছেন, ‘গতকাল রাত্রে পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার রতুয়া’য় কিছু চরমপন্থী জেহাদি, হিন্দুদের উপর আবারও একটি পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে। নির্মীয়মাণ একটি মন্দিরকে কেন্দ্র করে এই হামলা চালানো হয়। একটা বিশেষ সম্প্রদায়ের কাছে পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুদের ধর্মাচরণ করাটাই এখন ‘অপরাধ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে যা অত্যন্ত উদ্বেগের। কালকের ভয়াবহ হামলায় নির্বিচারে ইঁট ও পাথর ছোঁড়া হয়, যার ফলে এলাকায় ভয় ও বিশৃঙ্খলার পরিবেশ তৈরী হয়েছে। ঘটনার সময় পুলিশ সেখানে অনুপস্থিত ছিল। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে প্রশাসনের এই উদাসীনতা অত্যন্ত উদ্বেগের। হামলার সময়ে একাধিক দোকান ও ঘরবাড়ি লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়েছে : অশোক ঘোষ-এর মুদি দোকান ভাঙচুরের পর তা লুটপাট করা হয়েছে। কল্যাণ সাহা-র দোকান এবং তার দোকানে থাকা জিনিসপত্র লুট করা হয়েছে। তার বাড়ি এবং ব্যক্তিগত গাড়িটিও ভাঙচুর করা হয়েছে। শেখর সাহা-র দোকান এবং সেখানে থাকা নগদ টাকা লুট করা হয়েছে। পাশেই একটি সারের দোকান ছিল সেটিও লুট করা হয়েছে। বিনয় সাহা-র বাড়ির দরজা ইট-পাথর দিয়ে ভাঙ্গা হয়। ঘটনাস্থলে থাকা একটি টোটো (ই-রিকশা) সম্পূর্ণভাবে ভাঙচুর করা হয়।একটি স্থানীয় চায়ের দোকানও ভাঙচুর করা হয়।’
তিনি আরও লিখেছেন,’এই ঘটনায় আমি আমার আইনজীবীর মাধ্যমে মালদার জেলা শাসক (District Magistrate), মালদার পুলিশ সুপার (Superintendent of Police), কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের মহাপরিদর্শক (Director General), এবং রাজ্যের মুখ্য সচিব কে তথ্য সহ অবহিত করেছি এবং দ্রুত হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানিয়েছি। রাজ্যে শুধু একটি সম্প্রদায়ের দ্বারা হিন্দুদের উপর বার বার এই ধরনের আক্রমণের ঘটনা দেশের সাংবিধানিক গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপক্ষতার উপর সরাসরি আঘাত হানছে। আমরা অবিলম্বে আইন-শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, দোষীদের গ্রেফতার, আক্রান্ত পরিবারগুলির সুরক্ষা এবং পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করছি ।’
যদিও মালদা জেলা পুলিশ ফেসবুকে একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘১৭.০৫.২০২৫ তারিখ সন্ধ্যায় মালদার রতুয়া থানার অন্তর্গত একটি ঘটনাকে ঘিরে কিছু মহল থেকে ভুল তথ্য ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রকৃত ঘটনা হলো, একটি দোকানের সামনে টোটো পার্কিং নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সামান্য বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়। পরে উভয় পক্ষ পাথর ও ইটবৃষ্টি শুরু করে, যার ফলে দুই পক্ষের কয়েকটি দোকান ও কাঠামোর সামান্য ক্ষতি হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং প্রয়োজনীয় বলপ্রয়োগ করে উভয় পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। এই ঘটনায় বড় কোনো আঘাতের খবর নেই। দুই পক্ষ থেকে মোট ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পুলিশ সতর্ক রয়েছে।পুনরায় সবাইকে অনুরোধ করা হচ্ছে গুজব না ছড়াতে ও সামাজিক মাধ্যমে উস্কানিমূলক বা ভুয়ো বার্তা পোস্ট করা থেকে বিরত থাকতে। কেউ এরকম কাজ করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তবে রাজ্য বিজেপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার ফেসবুকে লিখেছেন,’ব্যর্থ মুখ্যমন্ত্রীর নির্লজ্জ তোষণের রাজত্বে জেহাদী তাণ্ডবের কোনও লাগাম নেই! মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান, সামশেরগঞ্জের পর এবার মালদার রতুয়া বিধানসভার অন্তর্গত দুর্গাপুরে দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় রাতের অন্ধকারে আবার হিন্দুদের বাড়িঘর, দোকান লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছোঁড়া হলো, নিরীহ হিন্দুদের হুমকি দেওয়া হলো। এলাকায় একটি হিন্দু মন্দির নির্মাণকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি একাধিক সময় হুমকির অভিযোগ আসছিল। গতকাল রাতে মমতা ব্যানার্জির ‘বিশেষ স্নেহধন্য’ মৌলবাদী জেহাদীদের আক্রমনে ওই এলাকায় প্রচুর বাড়ি, দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মুর্শিদাবাদের কায়দায় হিন্দুদের বাড়ির গোশালা থেকে গরু, বাছুর উধাও করে দেওয়ার অভিযোগও এসেছে।’
তিনি লিখেছেন,’আর নির্লজ্জতার চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করা প্রশাসনের ভূমিকা? মমতাময়ীর কৃপার পাত্র অপদার্থ মেরুদন্ডহীন রাজ্য পুলিশ ব্যবস্থা নেওয়া তো দূর অস্ত, এত বড়ো জেহাদী তাণ্ডব চলছে দেখেও অন্ধের ভূমিকা পালন করেছে! সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের ঘটনায় আদালতের একের পর এক থাপ্পড় খেয়েও কোনও বদল নেই রাজ্য প্রশাসনের! যদি এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ওই ঘটনায় জড়িত প্রতিটি মৌলবাদী দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে বাকিটা বৃহত্তর আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে বিজেপি বুঝে নেবে। নিরীহ হিন্দু ভাই-বোনেদের উপর নির্বিচারে আক্রমণ আমরা কোনওভাবেই মুখ বুজে সহ্য করব না।’।


