বিজলি মহাদেব মন্দির : হিমাচল প্রদেশের কুল্লুতে সাত হাজার আটশো ফুট উচ্চতায় বিজলি মহাদেবের মন্দির অবস্থিত । ভক্তদের বিশ্বাস যে এই মন্দিরে মহাদেব স্বয়ং ভক্তদের বজ্রপাত থেকে রক্ষা করেন । বজ্রপাতে ভক্তদের যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য ভোলেনাথ নিজেই বজ্রপাত শুষে নেন। প্রতি ১২ বছর পর, মহাদেব মন্দিরের শিবলিঙ্গে বজ্রপাত হলে শিবলিঙ্গটি টুকরো টুকরো হয়ে যায়। মন্দিরের বাইরে প্রায় ৫০ ফুট উঁচুতে একটি গাছে স্থাপিত ত্রিশূলের মাধ্যমে বজ্র সরাসরি শিবলিঙ্গে পৌঁছায়। তাই এই মন্দিরের নাম বিজলি মহাদেব মন্দির ।
যাইহোক, শিবলিঙ্গ টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও, মহাদেবের শিবলিঙ্গ রহস্যজনকভাবে নিজেকে পুনরায় যুক্ত করে। এটা বিশ্বাস করা হয় যে মন্দিরের পুরোহিত শিবলিঙ্গের প্রতিটি টুকরো সংগ্রহ করেন এবং নুন, মাখন এবং ছাতুর মিশ্রণ দিয়ে শিবলিঙ্গের টুকরোগুলি আবার একসাথে জুড়ে দেন । জোড়া লাগানোর কয়েক মাস পরে শিবলিঙ্গটি সম্পূর্ণ ভাবে জুড়ে যায়। তখন দেখে মনেই হয় না, যে কয়েক মাসে আগে এটি টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে গিয়েছিল। আশ্চর্যজনকভাবে, প্রতি ১২ বছর পর পর এই বজ্রপাত হয়,তবে বজ্রপাতের কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। বজ্রপাত সরাসরি শিবলিঙ্গের উপর হয় । কিন্তু এতে কখনো কোনো ভক্তের ক্ষতি হয়নি।
কুল্লুতে অবস্থিত মহাদেবের মন্দিরটি পার্বতী ও বিয়াস নদীর সঙ্গমস্থলের কাছে অবস্থিত। এই মন্দিরে শ্রাবণ মাসে হাজার হাজার ভক্ত মহাদেবের দর্শনে আসেন। ভক্তদের বিশ্বাস, ভগবান এলাকার মানুষকে কোনো অমঙ্গল থেকে বাঁচাতে শিবলিঙ্গে বজ্রপাত করেন । ১২ বছরে একবার বজ্রপাতের রহস্য এখনও সমাধান হয়নি। তবে, এমনও বিশ্বাস রয়েছে যে বজ্রপাত এক ধরণের ঐশ্বরিক বর বা আশীর্বাদ, যার অনেক ক্ষমতা রয়েছে। যার কারণে কুল্লু শহর ও সেখানকার মানুষ নিরাপদে থাকে।
পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, প্রাচীন কালে এই স্থানের কাছে কুলান্তক নামে এক রাক্ষস বসবাস করত । একদিন রাক্ষসটি মাথান নমক গ্রামে বিয়াস নদীর জলে বৃহৎ আকারের অজগরের রূপ ধারণ করে কুন্ডলী পাকিয়ে ছিল । যেকারণে বিয়াস নদীর জল থমকে যায় এবং আশপাশের গ্রামকে প্লাবিত করে যাতে বহু মানুষের মৃত্যু হয় । তারপর, ভগবান শিব কুলান্তককে হত্যা করে, যার পরে তার দেহ একটি বড় পর্বতে পরিণত হয়েছিল। প্রথমে কুলুট পরে কুল্লু এবং সবশেষে এই স্থান কুলান্ত(Kulant) নামে পরিচিত হয় । কিন্তু কুলান্তকের মৃত্যুর পর গ্রামবাসীদের ভয় দূর হয়নি এবং তারা সর্বদা আশঙ্কায় দিন কাটাত যে ওই রাক্ষস ফিরে এসে ফের অনিষ্ট করবে । সেই কারনে মানুষকে আশ্বস্ত করতে ভগবান ভোলেনাথ সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি পর্বতের চুড়ায় অবস্থান করবেন । পাশাপাশি তিনি কুলান্ত-এর অশুভ শক্তিকে(Negative Energy) নষ্ট করতে দেবরাজ ইন্দ্রকে নির্দেশ দেন প্রতি ১২ বছর অন্তর বজ্রপাত করার । বহু প্রাচীন এই মন্দিরটি কুলু থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখানে পৌঁছতে ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা ট্রেক করতে হয়।।