এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১০ সেপ্টেম্বর : আরজি করের তরুনী চিকিৎসক ‘অভয়া’র ধর্ষণ বা গনধর্ষণের পর নৃশংস বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনার এক মাস অধিক পরেও এখনো ন্যায় বিচার অধরা । তদন্তের গতিপ্রকৃতি যে দিকে যাচ্ছে তাতে নিহত ‘অভয়া’র পরিবার আদপেই ন্যায় বিচার পাবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দাঁনা বেঁধেছে । এই মামলায় প্রথম থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও তার অধীনে থাকা পুলিশ এবং স্বাস্থ্যদপ্তরের বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি অভিযোগ উঠেছে । সোমবার আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকরা রাজ্য সরকারের কার্যত কাছা খুলে দেয় । স্বাস্থ্যদপ্তরের পাহাড় প্রমান দূর্নীতি এবং দুর্বল পরিকাঠামো নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে কার্যত তুলোধুনো করেন আন্দোলকারী ডাক্তার পড়ুয়ারা । যাই হোক,সকলের দাবি মেনে আরজি করের ধর্ষণ-খুনের মামলার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট । কিন্তু সিবিআইয়ের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে এবারে বিস্তর প্রশ্ন উঠছে । স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে এই মামলা নিজের হাতে তুলে নেওয়া খোদ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের ভূমিকাকে এখন কাঠগড়ায় তুলছে সাধারণ মানুষ । কারন ‘আমাদের উপর বিশ্বাস রাখতে পারেন’ বলে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের আশ্বস্ত করা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় সোমবার কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে জুনিয়র চিকিৎসকদের কাজে ফেরার ‘হুঁশিয়ারি’ দিয়েছিলেন । যাতে রাজ্যের চিকিৎসক সংগঠন চরম ক্ষুব্ধ । তাই এখন একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সকলের মনে, আদপেই ন্যায় বিচার পাবে তো ‘অভয়া’র পরিবার ?
প্রথমে ধর্ষণ-খুনের মামলা সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হলেও একজনকেও এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা । বরঞ্চ আরজি করের দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ, বিপ্লব সিং, সুমন হাজরা এবং আফসার আলিকে। আজ মঙ্গলবার তাদের আদালতে তুলেছিল সিবিআই । কিন্তু খোদ সিবিআই তাদের কাউকে নিজেদের হেফাজতে নিতে চাওয়ার জন্য আবেদন জানানোয় তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দলকে । এত বড় একটা গুরুত্বপূর্ণ মামলায় সিবিআইয়ের এই প্রকার গাছাড়া মনোভাব নিয়ে সন্দেহ ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে । খোদ বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, ভবিষ্যতে রায় কী হবে, তা এখন থেকেই ঠিক করতে চাইছেন নাকি ? পরিস্থিতি বুঝে সেই সময় নির্দেশ দেওয়া হবে বলে জানান বিচারক ।
অন্যদিকে সিবিআইয়ের আইনজীবীর যুক্তি হল, ‘প্রয়োজনে পরে তাঁদের ফের হেফাজতে নেওয়ার দাবি জানানো হবে। এখন তাদের জেল হেফাজতে পাঠানো হোক । কারন ভারতীয় ন্যায় সুরক্ষা সংহিতার ১৮৭ ধারার ২ উপধারা’য় এই বিষয়ে ব্যাখ্য আছে । আর সেই অনুযায়ী প্রয়োজনে তদন্তের স্বার্থে অপরাধীকে ১৪ + ৬০ দিনের হিসাবে হেফাজতে নেওয়া যায় বলেও জানায় সিবিআইয়ের আইনজীবী । শেষ পর্যন্ত বিচারক বাধ্য হয়ে সন্দীপ-সহ চারজনকে আগামী ২৩ তারিখ পর্যন্ত বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন । আপাতত প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে রাখা হবে তাদের।
এর আগে মামলার শুনানিতে আইনজীবী না থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে শিয়ালদহ কোর্ট। এমনকি মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে জামিন দিয়ে দেওয়ার কথাও বলতে শোনা যায় বিচারককে । এখন রাজ্য সরকার- সিবিআই ও সুপ্রিম কোর্টের এই চক্রবুহ্যে আরজি করের তরুনী চিকিৎসক ‘অভয়া’র ধর্ষণ-খুন মামলা কোন দিকে মোড় নেয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।।