দিব্যেন্দু রায়,কেতুগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),২৬ নভেম্বর : তখন ঘর ভর্তি রোগী । কেউ এসেছেন রক্ত পরীক্ষার জন্য । কেউ কেউ নিজের নিজের মল,মুত্র, থুতু, কফের নমুনা পরীক্ষার জন্য সঙ্গে করে এনেছেন । চরম ব্যস্ততা স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে । আর ঠিক তখনই ছাদ থেকে খসে পড়ল বড়সড় একটি চাঙড় । শুক্রবার সকাল প্রায় ১১ টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমা এলাকার কেতুগ্রাম-১ ব্লকে কান্দরা রামজীবনপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্যাথলজিক্যাল বিভাগে । যদিও এই ঘটনায় কেউ জখম হননি । রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সকলেই বরাত জোরে প্রাণে বেঁচে যান । তবে ঘটনা ঘিরে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়ায় হাসপাতাল চত্বরে ।
স্থানীয় গ্রামবাসীদের অভিযোগ, শুধু কেতুগ্রাম ব্লকই নয়,পাশের বীরভূম জেলা থেকে প্রতিদিন প্রচুর রোগী এই ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা করাতে আসেন । অথচ এত গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র হওয়া সত্ত্বেও হাসপাতাল ভবন দীর্ঘদিন ধরে বেহাল হয়ে পড়ে আছে । সংস্কারের কোনও উদ্যোগই নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ । যে কোনও সময় বড়সড় দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা, রোগীর পরিবার পরিজন থেকে শুরু করে হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা । এনিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এলাকায় ।
যদিও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন সংস্কারের বিষয়ে বিধায়ক সেখ শাহনওয়াজ বলেন, ‘ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন সংস্কারের কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে ১ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা চাওয়া হয়েছে । টাকা এলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।’ কিন্তু কবে বরাদ্দ করা হবে স্বাস্থ্যকেন্দ্র সংস্কারের টাকা ? যদিও এই বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানাতে না পারলেও বিধায়ক বলেন, ‘আশা করি খুব শীঘ্রই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে ।’
জানা গেছে,কান্দরা রামজীবনপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেটি ৩০টি শয্যা বিশিষ্ট । আউটডোরে প্রতিদিন গড়ে ৩৫০ থেকে ৪০০ জন রোগী চিকিৎসা করাতে আসেন । প্রতি মাসে গড়ে প্রায় এক হাজার প্রসুতির প্রসব করানো হয় । অথচ স্বাস্থ্যকেন্দ্রেটিতে মাত্র ২ জন চিকিৎসকরা রয়েছেন । নার্স রয়েছেন ৬ জন । ফলে রোগীর চাপ সামলাতে কার্যত নাজেহাল অবস্থা হয় চিকিৎসক,নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ।
এদিকে আবার দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবনের পাশাপাশি হাসপাতালের আবাসনগুলি বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে । গত বছর বোলপুরে প্রশাসনিক সভায় এসে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে গ্রামীণ হাসপাতাল হিসাবে গড়ে তোলার আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । কিন্তু আশ্বাসই সার । গ্রামীন হাসপাতালে রুপান্তর তো দূর অস্ত,আজ পর্যন্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন সংস্কারের ব্যাবস্থা করা হল না বলে অভিযোগ তুলেছেন কেতুগ্রামের বাসিন্দারা ।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট রাজেশ মণ্ডল বলেন, ‘স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ল্যাবরটরি বিভাগের ঘরটি অনেক দিন ধরে অত্যন্ত বেহাল অবস্থায় রয়েছে । ঘরে বড় বড় ফাটল । মাঝে মাঝে ছাদ থেকে ছোটখাটো চাঙড় খসে পড়ে ৷ এদিন আমরা বড়সড় দূর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেলাম ।’
জানা গেছে,অনান্য দিনের মত এদিনও সকাল থেকে প্রচুর রোগী ভিড় জমিয়েছিলেন কান্দরা রামজীবনপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে । বিশেষ করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্যাথলজিক্যাল বিভাগে তিল ধারনের জায়গা ছিল না । আর ঠিক তখনই ঘটে যায় বিপত্তি । ছাদ থেকে একটা বড়সড় চাঙড় খসে পরে ঘরে থাকা একটি কাঠের টুলের উপর । নিমেষের মধ্যে বদলে যায় প্যাথলজিক্যাল বিভাগের চিত্র । আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করে দেন রোগী থেকে স্বাস্থ্য কর্মীরা । এই বিষয়ে কেতুগ্রাম-১ ব্লকের বিএমওএইচ নবকুমার দাস বলেন, ‘ওই ভবনটি অনেক দিন ধরেই বেহাল হয়ে আছে । আজ একটা দূর্ঘটনা ঘটে যায় । তবে কেউ জখম হননি । এই বিষয়ে আমি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি ।’।