এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,২০ জুলাই : হিংসার আগুনে জ্বলছে ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ । সরকার ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে লাগাতার সংঘর্ষ চলছে । দাঙ্গায় এখন পর্যন্ত ১০০ জনের অধিক মারা গেছে বলে ডিডি নিউজের খবর । স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবাও । দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনা নামানো হয়েছে দেশে । তবুও হিংসাত্মক আন্দোলন বন্ধ করা যায়নি । বাংলাদেশে আন্দোলনকারীদের অধিকাংশই ছাত্র । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের ‘রাজাকার‘ বলে অবিহিত করেছেন । রাজাকার বা রেজাকার হলো ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক গঠিত একটি আধাসামরিক বাহিনী । যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি । দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে শেখ হাসিনা সরকার সর্বতোভাবে চেষ্টা চালিয়ে গেলেও পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে । সন্দেহ করা হচ্ছে যে সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনের নামে কোনো কোনো গোষ্ঠী পিছন থেকে দাঙ্গায় মদত জোগাচ্ছে ।
আন্দোলনকারীদের রসদ জোগাচ্ছে। অলক্ষ্যে থেকে দাঙ্গায় মদত জুগিয়ে কোনো গোষ্ঠী কি বাংলাদেশে কট্টর ইসলামি শাসন লাগু করতে চাইছে ? এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে এখন ।
আসলে সংরক্ষণ সংক্রান্ত বাংলাদেশের হাইকোর্টের দেওয়া সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে দাঙ্গার সূত্রপাত । বাংলাদেশের হাইকোর্ট গত পয়লা জুলাই, একটি রায়ে, দেশে ৫৬ শতাংশ সংরক্ষণ পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদের বংশধরদের জন্য ৩০ শতাংশ সংরক্ষণ করা হয়। যদিও চাপে পড়ে ২০১৮ সালে ৫৬ শতাংশ সংরক্ষণ বিলুপ্ত করেছিল শেখ হাসিনার সরকার । কিন্তু এখন আবার তা বাস্তবায়নের পক্ষে হাইকোর্ট । যদিও হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্তের ওপর সাময়িক স্থগিতাদেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। তার পরেও হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে বাংলাদেশের কলেজ পড়ুয়ারা । তাদের প্রশ্ন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে লড়াই করা তৃতীয় প্রজন্মকে কেন সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ দেওয়া হচ্ছে ? তাদের দাবি , সরকারের উচিত অবিলম্বে এর ওপর স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করা ।
সংরক্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন যে বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই কম সরকারি চাকরি রয়েছে, তার উপরে, ৫৬ শতাংশ সংরক্ষণ দিলে মেধাবী প্রার্থীরা বঞ্চিত হবে । শিক্ষার্থীরা বেকারত্বের ইস্যুতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দখল করে রেখেছে। ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ চলছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র মোর্চার সঙ্গেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে । বিক্ষোভকারীরা সহিংস হয়ে উঠলে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেয়। এর জেরে বহু আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও বিপুল সংখ্যক আহত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা বেশ কয়েকটি সরকারি ভবনে হামলা ও ভাংচুর করে। তারা বাংলাদেশের সরকারি চ্যানেল বিটিভির প্রধান কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
প্রসঙ্গত,বাংলাদেশের কিছু কট্টর ইসলামি মৌলবাদী দল রয়েছে যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়াদের বংশধরদের সংরক্ষণের ঘোর বিরোধী । অভিযোগ উঠছে সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনকে পিছন থেকে মদত দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারকে ফেলে দেশে কট্টর ইসলামি শাসন লাগু করার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে তারা । আর তারা যদি সফল হয় তাহলে ভারতের জন্য হবে অশনি সঙ্কেত । কারন ভারত এমনিতেই পাকিস্তানি মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদ নিয়ে অতিষ্ঠ । তার উপর বাংলাদেশেও যদি পাকিস্তানের মত কট্টর ইসলামি রাষ্ট্রে পরিনত হয় তাহলে ভারতের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে । এখন দেখার দেশের বর্তমান পরিস্থিতি কিভাবে নিয়ন্ত্রণে আনেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।।