দিব্যেন্দু রায়,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),২৬ এপ্রিল : রোজার মাঝেই দূর্ঘটনায় নিহত প্রতিবেশী হিন্দু যুবকের সৎকার করলেন দুই মুসলিম যুবক । সারাদিন নিহতের পরিবারের পাশে থেকে সান্ত্বনা দেওয়ার পাশাপাশি বাড়িয়ে দিলেন সাহায্যের হাত । সম্প্রীতির এমনই এক অনন্য নজির দেখতে পাওয়া গেল পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার মুরাতিপুর গ্রামে । চরম বিপদের সময় পাশে দাঁড়ানোয় শেখ আমির, বাপি শেখ নামে ওই দুই মুসলিম যুবককে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন নিহত দিলীপ কর্মকারের ( ৩৫) অসহায় পরিবার । ওই দুই যুবকের মানসিকতার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন এলাকার মানুষ ।
জানা গেছে,মুরাতিপুরে বাদশাহী রোডের ধারে একটি ঝুপড়িঘরে বসবাস করতেন নিহত দিলীপ কর্মকার । স্ত্রী,তিন নাবালক ছেলে মেয়ে, বৃদ্ধা মামি এবং মামির এক বোনকে নিয়েই ছিল তাঁর সংসার । দিলীপবাবু ও তাঁর স্ত্রী মিলিদেবী জনমজুরের কাজ করে কোনও রকমে ৭ জনের দু’বেলার অন্ন সংস্থান করতেন ।
প্রতিদিনের মত সোমবার রাতেও খাওয়া দাওয়া সেরে শৌচকর্ম করতে গিয়েছিলেন দিলীপবাবু । রাত প্রায় দশটা নাগাদ বাড়ি ফেরার পথে বাদশাহী রোড পারাপার করার সময় একটি বেপরোয়া গতির গাড়ি দিলীপবাবুকে পিষে দিয়ে পালায় । ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয় । এদিকে গৃহকর্তার আকস্মিক মৃত্যুতে কার্যত দিশেহারা হয়ে পড়ে ওই অসহায় পরিবারটি । আর তখনই পরিবারটির দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন দিলীপবাবুর দুই প্রতিবেশী শেখ আমির এবং বাপি শেখ ।
জানা গেছে,মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হলে দিনভর সেখানেই ছিলেন বাপি । এদিকে আমির তখন ব্যস্ত ছিলেন দেহ সৎকারের জন্য আয়োজনের পাশাপাশি নিহতের পরিবারের খাওয়াদাওয়ার জোগাড় করতে । তারপর ময়নাতদন্তের পর মঙ্গলবার বিকেল নাগাদ আনা হলে ওই দুই মুসলিম যুবক কয়েকজনকে সঙ্গে করে স্থানীয় শ্মশানে গিয়ে দেহ সৎকার করেন । এদিকে রমজান মাসে রোজা রেখেছেন তাঁরা । কিন্তু এই কৃচ্ছসাধনের মধ্যেও দিনভর তাঁরা নিহত প্রতিবেশীর পরিবারের সাহায্যার্থে ছোটাছুটি করে গেছেন ।
শেখ আমিরের কথায়, ‘পরিবারটি খুব দরিদ্র । তার উপর গৃহকর্তার দূর্ঘটনায় মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা । এই পরিস্থিতিতে আমরা যদি ওদের পাশে না দাঁড়াই তাহলে অত্যন্ত অমানবিক কাজ হয়ে যাবে । হৃদয়ের তাগিদ থেকেই ওই পরিবারটির পাশে থাকার চেষ্টা করেছি ।’ পাশাপাশি তাঁরা ওই অসহায় পরিবারটিকে সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করার দাবি তুলেছেন ।।