এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৪ জুন : নদীয়া জেলার কালীগঞ্জ উপনির্বাচনে রেকর্ড ভোটে জিতেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী আলিফা আহমেদ । তিনি পেয়েছেন ১,০২,৭৫৯ ভোট। যা প্রদত্ত ভোটের ৫৫.১৫ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থান পাওয়া বিজেপির আশিস ঘোষ পেয়েছেন ৫২,৭১০ ভোট । প্রদত্ত ভোটের ২৮.২৯ শতাংশ । গতকাল বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছিলেন,কালিগঞ্জে মোট হিন্দু ভোটার এক লাখ দশ হাজার । হিন্দু ভোট পড়েছে ৬৬ শতাংশ । মোট ৭২ হাজার ৬০০ জন হিন্দু ভোট দিয়েছে । তার মধ্যে বিজেপি ভোট পেয়েছে ব্যালট নিয়ে ৫২৭১০ টি । শতাংশের বিচারে এটি হলো ৭২.৬০ বা প্রায় ৭৩ শতাংশ । ১০৯ টা হিন্দু বহুল বুথের মধ্যে ১০৮ টা বুথেই বিজেপি লিড আছে বলে তিনি জানান ।
আজ মঙ্গলবার তিনি জানান,কালীগঞ্জ উপনির্বাচনে মুসলিম অধ্যুষিত সিংহভাগ বুথ গুলিতে বিজেপি প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট হয় ‘একক সংখ্যায়’ সীমাবদ্ধ অথবা পঞ্চাশের গন্ডি পেরায় নি। বিজেপি প্রার্থী মুসলিমদের ভোট পাননি। আবার হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ বুথে প্রায় সবগুলোতেই বিজেপি এগিয়ে। পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু ভোটারদের এই ঐক্যের চিত্র আগামী দিনে রাজ্যে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ধ্বজ ওড়ানোর ইতিহাস রচনা করতে চলেছে। হিন্দু ঐক্যই একমাত্র পথ। হিন্দুরা জোটবদ্ধ না হলে মোথাবাড়ি, মুর্শিদাবাদ, মহেশতলা, বাড়তেই থাকবে আক্রমণ ও হামলা… যদি সারা বাংলার হিন্দুরা এক হয়, তাহলে ২০২৬-এ পরিবর্তন অনিবার্য । শুভেন্দু অধিকারী কালীগঞ্জের মুসলিম অধ্যুষিত ৭৪ টি বুথের একটা তালিকাও পোস্ট করেছেন এক্স-এ । সেই তালিকা অনুযায়ী প্রতি বুথে মাত্র ১ থেকে ৯ টি ভোট পেয়েছে বিজেপি ।
কালীগঞ্জ উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থীর কাছে প্রায় ৫০ হাজার ভোটে পরাজিত হওয়ার পরেও রাজ্য বিজেপির যুবনেতা ও কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী তরুনজ্যোতি তিওয়ারি মনে করছেন যে “কালীগঞ্জ মডেল হল পশ্চিমবঙ্গে পরিবর্তনের সূচনা” । তিনি এই উপনির্বাচনের ফলাফল প্রসঙ্গে এক্স-এ লিখেছেন, ‘কালীগঞ্জ মডেল: পরিবর্তনের সূচনা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে হিন্দুদের ঐক্যের ডাক । কালীগঞ্জ উপনির্বাচনের ফলাফল : তৃণমূল কংগ্রেস — ১,০২,১৭৯,ভারতীয় জনতা পার্টি — ৫২,৪২৪,কংগ্রেস — ২৮,২৬২ এবং নোটা — ২,৫০০ ।’
তিনি লিখেছেন,’এই উপনির্বাচনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল হিন্দু ভোটের অভূতপূর্ব ঐক্য। কালীগঞ্জের মোট ভোটারের মধ্যে হিন্দু ভোটার ছিলেন প্রায় ৪০ শতাংশ। চরম বর্ষা, উপনির্বাচনের কম গুরুত্ব, প্রশাসনিক ভয়, তৃণমূলের সন্ত্রাস, লুঙ্গি বাহিনীর ভীতি—সবকিছুকে উপেক্ষা করে সাহসের সঙ্গে বহু হিন্দু ভোট দিতে এগিয়ে এসেছেন। তুলনামূলকভাবে হিন্দু এলাকাগুলিতে ভোটের হার ১০ শতাংশ কম হলেও বিজেপি নিজের ভোটব্যাঙ্ক ধরে রেখেছে।’
তিনি বিগত চার বছরের ভোটের পরিসংখ্যান তুলে ধরে লিখেছেন,’২০১৯ লোকসভা — বিজেপি পেয়েছিল ৩১% ভোট । ২০২১ বিধানসভা — বিজেপি পেয়েছিল ৩০% ভোট । ২০২৪ কালীগঞ্জ উপনির্বাচন — বিজেপি পেয়েছে ২৮.৩% ভোট (হিন্দু বুথে প্রায় ৮০% পর্যন্ত) । এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে—হিন্দুরা জেগে উঠছে।’
তরুনজ্যোতি লিখেছেন,’তৃণমূলের মুসলিম তোষণের রাজনীতি, হিন্দু উৎসবের উপর লাগাতার আঘাত, রামনবমী ও দুর্গাপূজা নিয়ে প্রশাসনিক বাধা, মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের রক্ষার চেষ্টা, হিন্দুদের জমি ও জীবনকে অনিরাপদ করে তোলার ষড়যন্ত্র—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে হিন্দুরা এখন আর নীরব নয়।কালীগঞ্জে হিন্দুরা সংখ্যালঘু হয়েও ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।’
গোটা বাংলার হিন্দুরা যদি ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহলে ২০২৬-এ পরিবর্তন অনিবার্য বলে মনে করছেন তিনি ।’ তরুনজ্যোতি তিওয়ারির কথায়,’শত প্রতিকূলতার মধ্যেও হিন্দু ভোটব্যাঙ্ক বিজেপির শক্তি । রাজ্যের ২০০+ বিধানসভায় হিন্দুরা এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ । হিন্দুরা ঐক্যবদ্ধ হলে সরকার বদল শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা । এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব — হিন্দু সমাজকে জাগিয়ে তোলা, একত্রিত করা। তৃণমূল কংগ্রেস সরকার বাংলাকে বারবার ভাগ করেছে—হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের রাজনীতি করে। তারা শুধুমাত্র এক শ্রেণির তোষণ করেছে, বাকি সমাজকে বঞ্চিত করেছে। হিন্দুরা যদি হিন্দু হিসেবেই একত্রিত হয়,যদি কালীগঞ্জের মতো প্রতিটি হিন্দু বুথ থেকে সাহসের ভোট উঠে আসে, তাহলে ২০২৬-এ বাংলায় হিন্দুদের সরকার আসবে।’
তিনি আশ্বাস দিয়েছেন,’একটি সরকার যা ভক্তিকে সম্মান দেবে,একটি সরকার যা নিরাপত্তা দেবে,একটি সরকার যা বাংলার গৌরব পুনরুদ্ধার করবে,একটি সরকার যেটা রাজ্যে শিল্প আনবে, একটি সরকার যেটি স্বচ্ছ নিয়োগ করবে, একটি সরকার যেটা মানুষদের সমান সুযোগ দেবে, একটি সরকার যার আমলে পশ্চিমবঙ্গের লোকেদের পরিযায়ী শ্রমিক হতে হবে না,একটি সরকার যারা সব প্রকল্প দুর্নীতিমুক্ত করবে।’ বিজেপির এই যুবনেতা আশাবাদী যে ‘বিজেপি সরকার পশ্চিমবঙ্গে আসছে।’ তিনি লিখেছেন,এটাই সময়।এটাই সুযোগ। এটাই কালীগঞ্জ মডেল।জয় হিন্দু সমাজ। জয় ভারত। জয় পশ্চিমবঙ্গ।’।