প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৪ জুলাই : পঞ্চায়েত ভোটে মহিলা ভোটরদের নিজেদের পক্ষে টানতে ’লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পকে হাতিয়ার করে জোর প্রচার চালাচ্ছে তৃণমূল।তার সঙ্গে অন্য সামাজিক প্রকল্পের সুবিধা প্রদান নিয়েও তারা সমান তালে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।এর পাল্টা সিপিএম আবার তৃণমূলের বিরুদ্ধে ওঠা চুরি ও দুর্নীতির নানা তথ্য তুলে ধরা ফ্লেক্স গলায় ঝুলিয়ে গ্রামে গ্রামে প্রচারে নেমে পড়েছে।তা দেখে এখন তৃণমূলের নেতারা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে বাম আমলে হওয়া সমস্ত গন হত্যকাণ্ডের কথা। ভোটের দিন এগিয়ে আসার সাথে সাথে শাসক ও বিরোধীদের এমন প্রচার ও পাল্টা প্রচার ঘিরে এখন তপ্ত পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর।তবে বড়সড় কোন অশান্তির ঘটনা না ঘটায় আপাতত স্বস্তিতে জামালপুরবাসী।
তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের নির্দেশ মতোই রাজ্যে চালু হওয়া সামাজিক নানা প্রকল্প ও উন্নয়ন কাজকে হাতিয়ার করে প্রচারে নেমেছে তৃণমূলের প্রার্থীরা।যেহেতু লক্ষ্মীর ভাণ্ডর প্রকল্প গ্রামের মহিলা মহলে বেশী জনপ্রিয়তা পেয়েছে তাই জামালপুরের তৃণমূলের প্রার্থীরা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পকে সামনে রেখে প্রচারে বেশী জোর দিয়েছেন। যার উদ্দেশ্য হল,মহিলা ভোট ব্যাঙ্ক নিজেদের পক্ষে এক-কাট্টা করা। উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য তৃণমূলের প্রার্থীরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দেবী লক্ষ্মীর ছবি এবং লক্ষ্মীর ভাঁড় হাতে নিয়ে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের কথা বাড়ি বাড়ি ঘুরে তুলে ধরছেন।
তবে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প যে সত্যি সত্যি বিরোধীদের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠেছে তা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য থেকেই পরিস্কার হয়ে গিয়েছে। শুভেন্দু অধিকারী ঘোষণা করেছেন,“ বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় এলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে মহিলাদের প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে“।আর শুভেন্দু আধিকারীর এই বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সোমবার পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডির জনসভা থেকে তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমাণ্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,’বিজেপি দেশের ১২ টা রাজ্যে ক্ষমতায় আছে।তার মধ্যে যে কোন একটা রাজ্যের সরকার সেখানকার সব মহিলাদের জন্য লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প চালু করে মাসে ২ হাজার নয়, ১ হাজার টাকা করেই দিয়ে দেখাক।’ যদি কোন বিজেপি শাসিত রাজ্যের সরকার এটা করে দেখায় তাহলে রাজনীতি থেকে চিরতরে বিদায় নেবেন বলে অভিষেক ঘোষণা করেন ।
এদিকে তৃণমূল আর বিজেপি যখন লক্ষ্মীর ভাণ্ঠার
প্রকল্প নিয়ে তরজায় ব্যস্ত সেই সময় সিপিএম প্রচারের হাতিয়ার করেছে তৃণমূলের নেতা ও মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ওঠা চুরি ও দুর্নীতির অভিযোগকে । তা নিয়ে তারা বেশ কিছু ছোট ছোট ফ্লেক্স তৈরি করেছে। যার কোনটিতে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের ছবির সাথে লেখা রয়েছে কয়লা চোর, পাথর চোর ,বালি চোর।অপর ফ্লেক্সে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং কুন্তল ঘোষের ছবি দিয়ে লেখা রয়েছে চাকরি চোর।আর তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমাণ্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ে ছবি সহযোগে তৈরি ফ্লেক্সে আবার লেখা রয়েছে ১০০ দিনের কাজ চোর। এছাড়াও রয়েছে,সরকারী কর্মীদের ডি-এ চোর, মিডডে মিলের চাল চোর এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীর টাকা চোর টি-এম-সি লেখা ফ্লেক্স।পাশাপাশি শিক্ষা দুর্নীতি কাণ্ডে বর্তমানে জেলে থাকা বিধায়ক মাণিক ভট্টাচার্য্য সহ তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ , কালিঘাটের কাকু এবং বহিস্কৃত তৃণমূল নেতা সান্তুনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে দুর্নীতিগ্রস্তদের তালিকায় ফেলে ফ্লেক্স তৈরি করেছে সিপিএম।
গলায় সেইসব ফ্লেক্স ঝুলিয়ে নিয়ে থাকা দলের কর্মী ও নেতাদের সঙ্গে সিপিএম প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি প্রচারে গিয়ে ভোটারদের বলছে,ভারতের বুকে পশ্চিমবাংলায় সবচেয়ে বড় দুর্নীতি তৃণমূল করেছে । তাঁরা আরও বলছেন,বাংলায় তৃণমূলের রাজত্বে সর্বক্ষেত্রে চুরি ও দুর্নীতি চলছে। তাই চোর মুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত পঞ্চায়েত গড়ার জন্য সিপিএম প্রার্থীদের ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন,এই আবেদন রাখছেন সিপিএম নেতারা।
যদিও সিপিএমের এহেন প্রচারকে কোন গুরুত্ব দিতে চাইছে না শাসক দলের নেতৃত্ব। তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা জামালপুরের বিধায়ক অলক মাঝি এই প্রসঙ্গে বলেন,“৩৪ বছর রাজ্যে ক্ষমতায় থেকেও সিপিএম
কোন জনমুখি প্রকল্প চালু করাতো দূরের কথা,
কোন উন্নয়ন কাজও সেভাবে করে নি । বাম আমলে শুধু ছিল ,গণ হত্যা,ভেঙে দাও- গুঁড়িয়ে দাও’ আর বনধ ও ধর্মঘটের রাজনীতি।বর্ধমানের সাঁইবাড়ি ও আনন্দমার্গী হত্যাকাণ্ড সহ সিঙ্গুর,নেতাই, নন্দীগ্রাম মরিচঝাঁপির গণ হত্যকাণ্ডের ঘটনার কথা আজও রাজ্যের মানুষ ভোলেননি। অলক মাঝি এও বলেন,বাম আমলে জালপুরের তৃণমূল কর্মীরাও রেহাই পায় নি।বামেদের হার্মাদদের আক্রমনে জামালপুরের তৃণমূল কর্মী ফিরদৌস রহমান,উত্তম ভুল,ইসাহক মল্লিক ও পাঁচুগোপাল রুইদাস খুন হন ।
এইসব হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে অলক মাঝি পরিস্কার জানিয়ে দেন,সিপিএম যে কায়দাতেই প্রচার করুক না কেন তাতে লাভের লাভ কিছু হবে না।সিপিএমের সন্ত্রাসের রাজত্ব জামালপুর সহ গোটা বাংলার মানুষ আর ফিরিয়ে আনতে চান না।তাই তৃণমূল সরকারের চালু করা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প ছাড়াও বাকি কোন না কোন সামাজিক প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া মানুষজন এই পঞ্চায়েত ভোটে সিপিএমকে কুপোকাত করে দিয়ে সর্বত্র তৃণমূলের প্রার্থীদেরই জয়ী করবেন ।
তৃণমূল বিধায়কের এই মন্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছেন সিপিএম নেতৃত্ব । সিপিএমের মহিলা সংগঠন সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সহ- সভানেত্রী ভারতী ঘোষাল বলেন,আমরা চমকের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না।বাস্তবেই তৃণমূলের রাজত্বে যে চুরি ও দুর্নীতির রমরমা ঘটেছে সেটা গোটা বাংলার মানুষই জানেন।তাই বাস্তবের এই ঘটনা এবং চুরি দুর্নীতিতে জড়িতদের মুখোশ খুলে দেওয়া ফ্লেক্স বুকে পিঠে ঝুলিয়ে সিপিএম প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইছে চোর মুক্ত পঞ্চায়েত গড়ার জন্য । আর সিপিএমের জামালপুর -১ এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুকুমার মিত্র বলেন,
‘তৃণমূল লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্বাস্থ্যসাথী এইসব প্রকল্পকে সামনে রেখে অভিনব প্রচারে নেমেছে।ঠিক সেই ভাবে আমরাও চুরি ও দুর্নীতিতে জড়িত তৃণমূলের নেতা ও মন্ত্রীদের ছবি সহ চুরি দুর্নীতির তথ্য সম্বৃদ্ধ ফ্লেক্স বুকে ও পিঠে ঝুলিয়ে অভিনব প্রচার চালাচ্ছি।তাতে মানুষের ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছি।’চোর মুক্ত পঞ্চায়েত গড়ার লক্ষে সিপিএম প্রার্থীদের জয়ী করার জন্য ভোটাররা মুখিয়ে আছে বলে সিপিএম নেতা সুকুমার মিত্র দাবি করেন ।।