প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৬ মার্চ : ‘ভূমিপুত্র’-কে প্রার্থী করার দাবি পুরণ হয়নি । তৃণমূল নেতৃত্ব পুর্ব বর্ধমানের জামালপুর বিধানসভায় প্রার্থী করেছে ‘বগিরাগত’ অলোক মাঝিকে । তা নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছিলেন জামালপুরের বিধানসভার তৃণমূলের কর্মী ও সমর্থকরা। সেই ক্ষোভের আগুনে ঘৃতাহূতি পড়লো মঙ্গলবার । ব্লক তৃণমূল সভাপতির পদ থেকে এদিনই সরিয়ে দেওয়া হল প্রার্থী ঘোষনার পর প্রথম থেকে আলোক মাঝিকে সঙ্গ দেওয়া শ্রীমন্ত রায়কে ।
পরিবর্তে ব্লক সভাপতি করা হয়েছে জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খানকে। জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি স্বপন দেবনাথ এদিন সকালেই ব্লক সভাপতি পদে নিয়োগপত্র তুলে দেন মেহেমুদ খানের হাতে । এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই
চরমে উঠেছে জামালপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের
অভ্যন্তরিন সংঘাত । প্রকাশ্যে অনেকে মুখ খুলতে না চাইলেও হাবে ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন ভোটের দিন তাঁরা বুথে ঢুকে ‘সাপ লুডো’ খেলে বেরিয়ে আসবেন ।
জামালপুর বিধানসভায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নতুন কোনও ঘটনা নয় । ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে মেহেমুদ খানের সঙ্গে গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের কারণে তৃণমূল প্রার্থী উজ্জ্বল প্রামাণিক জয়ের দোরগোড়ায় পৌছেও হেরে যান । সেবার মাত্র ১৪২৩ ভোটে বাম প্রার্থী সমর হাজরার কাছে হেরে যান উজ্জ্বলবাবু। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে জামালপুরের তৃণমূল কর্মীারা সুনীল মণ্ডল কে ব্যাপক ভোটে লিড দিলেও এবারের বিধানসভা ভোটের ঢাক বাজার আগেই তিনি বিজেপিতে যোগ দেন । পরাজিত হলেও উজ্জ্বল বাবু জামালপুরে দলের সাংগাঠনিক কাজ কর্ম দেখা বন্ধ করেননি । গত লোকসভা নির্বাচনের পর রাজ্যের অন্যান অংশের পাশাপাশি জামালপুরেও বিজেপির বাড়বাড়ন্ত ঘটে । কিন্তু তা সত্ত্বেও তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে কোনও ছেদ পড়ে নি ।গোষ্ঠী-রাজনীতিতে’ লাগাম পড়াতে শেষমেষ অরবিন্দ ভট্টাচার্য্য কে ব্লক সভাপতির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে বয়সে তরুণ শ্রীমন্ত রায়কে ব্লক তৃণমূলের সভাপতি করে দল । বিধানসভা ভোটের ঢাক বাজার অনেক আগে থেকেই তৃণমূল কর্মীরা জামালপুরের ভূমিপুত্রকে প্রার্থী করার দাবি তোলেন । প্রার্থী হিসাবে মেহেমুদ খান তাঁর অনুগামী উচ্চ শিক্ষিত ভূতনাথ মালিককে তুলে ধরেন । এই ভূতনাথ মালিক আবার ব্লক তৃণমূলের যুব সভাপতি । অপর দিকে শ্রীমন্ত রায়ের অনুগামীরা জেলাপরিষদ সদস্য ক্ষেত্রমোহন মাঝির নাম প্রার্থী হিসাবে তুলে ধরেন । কিন্তু রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব জামালপুরের তৃণমূল কর্মীদের দাবিকে কোন গুরুত্ব না দিয়ে গলসির তৃণমূল কর্মীদের ক্ষোভ মেটাতে অলোক মাঝিকে সেখানথেকে তুলে এনে জামালপুর আসনে প্রার্থী করেন ।
অলোক মাঝিকে প্রার্থী করা হয়েছে জানার পরেই মেহেমুদ খান ও তাঁর অনুগামীরা বেঁকে বসেন । কিন্তু ব্লক সভাপতি হিসাব শ্রীমন্ত রায় প্রথম থেকে অলোক মাঝিকে সঙ্গ দিয়ে ভোটের প্রচারে ঝাপিয়ে পড়েন ।তার পরে কোপে পড়তে হওয়ায় হতাশ শ্রীমন্ত রায় ও তার অনুগামীরা । এদিন থেকে তারা আবার নিজেদেরকে রাজনীতির ময়দান থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছেন । তাঁদের বক্তব্য ভোটের দিন খেলা হবে , তবে খেলা হবে ’সাপ লুডো‘ ।
তৃণমূল সূত্রে খবর,প্রার্থী ঘোষনা হয়ে যাওয়ার পরেও মেহেমুদ খানের নিষ্কৃয় থাকার খবর তৃণমূলের ভোট কুশলী সংস্থা এবং রাজ্য নেতৃত্বের কাছে । পূর্ব বর্ধমান জেলার বাইরের দলের দুই মন্ত্রী অলোক মাঝিকে মেনে নেওয়ার কথা বলেন মেহেমুদ খানকে । তখন প্রতুত্বরে মেহেমুদ খান তাঁদের বলেন ,দল তাকে ব্লকের সাংগঠনিক কোনও দায়িত্ব দেয়নি।তাই আলোক মাঝিকে জেতানোর ব্যাপারে তার কোন দায় দায়িত্ব কিছুই বর্তায় না ।প্রার্থী অলোক মাঝিও ভোট কুশলী সংস্থা ও দলকে জানায়, ভূতনাথ মালিককে নিয়ে বিশেষ সমস্যার কিছু নেই । তবে মেহেমুদ খান কে ব্লক সভাপতি করা না হলে মেহেমুদ মাঠে নামবে না।জানা গিয়েছে,রাজ্য নেতৃত্ব এই রিপোর্ট পাওয়ার পরেই গত দুদিন আগে
কলকাতা থেকে দলের এক প্রথম শারীর নেতা
ব্লক সভাপতি থেকে শ্রীমন্ত রায়কে জানিয়ে দেন তাঁকে আর ব্লক সভাপতি রাখা হচ্ছে না । মেহেমুদ খান কে ব্লক তৃণমূলের সভাপতি করা হচ্ছে । শ্রীমন্ত রায়কে জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক পদ দেওয়া হয়েছে ।
জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি স্বপন দেবনাথের সঙ্গে এদিন ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন,“শ্রীমন্তকে জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দলের নির্দেশে মেহেমুদ খানকে ব্লক সভাপতি করা হয়েছে। দু’জনেই হাতে হাত মিলিয়ে দলকে জেতানোর জন্যে ঝাঁপিয়ে পড়বে।“শ্রীমন্ত রায় এদিন শুধু বলেন ,’দলের সিদ্ধান্ত আমি মাথা পেতে নিয়েছি । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্য তাঁকে যদি আরও স্বার্থ ত্যাগ করতে হয় তাঁর জন্য তিনি প্রস্তুত রয়েছেন ’।
তবে শ্রীমন্তর অনুগামীরা দলের এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভে ফুঁসছেন ।সভাপতি মনোনিত হওয়ার পর মেহেমুদ খান এদিন একটি কর্মী সম্লেলন থেকে বলেন , ‘দল তাঁকে যে দায়িত্ব দিয়েছে তা তিনি যথাযথ ভাবেই পালন করবেন । অলোক মাঝিকে ভোটে জেতানোই এখন তাঁর মূল লক্ষ্য’ । তবে ভোটের আগে এইভাবে সভাপতি বদলের সিদ্ধান্তে জামালপুর ব্লকে তৃণমূল কংগ্রেস দল বিপদে পড়বে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল ।
বিজেপির জামালপুর বিধানসভার আহ্বায়ক জিতেন ডকালের কটাক্ষ, “যে প্রার্থীর নিজের দলের সভাপতি কে বিশ্বাস করতে পারেন না, তাঁকে জামালপুরের মানুষও বিশ্বাস করে ভোট দেবেন বলে মনে হয় না। ভোটের দিন যত এগিয়ে আসবে তৃণমূলে দক্ষ যজ্ঞ তত প্রকট হবে ।’।