এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,১১ আগস্ট : কংগ্রেসের মুখপাত্র পবন খেড়ার একটা রহস্যজনক টুইট দেশ জুড়ে তুমুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছে । খেড়া লিখেছেন, ‘তোমরা ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র করতে চাও,কিন্তু এটা চাও যে বাংলাদেশ সেকুলার রাষ্ট্র হোক । হে রাম !’ তার এই বক্তব্যের বিভিন্নজন বিভিন্ন অর্থ করছেন । কেউ বলছেন, পবন খেড়া ও তার দল চেয়েছিল যে বাংলাদেশ ইসলামি রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করুক । কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, আসলে বাংলাদেশের হিন্দুদের নরসংহারকে ন্যাহ্যতা দিচ্ছে কংগ্রেস । এদিকে এরই মাঝে কংগ্রেস নেতা তথা সংসদের বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে একটা চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলেছেন বাংলাদেশের একজন বর্ষীয়ান সাংবাদিক । তার দাবি শেখ হাসিনাকে সরানোর ষড়যন্ত্রে আমেরিকা,পাকিস্তানের কুখ্যাত গুপ্তচর সংস্থা আই এস আই, চীনের পাশাপাশি সামিল ছিলেন রাহুল গান্ধীও ।
তিনি অভিযোগ করেছেন,ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী লন্ডন সফরকালে বাংলাদেশের মৌলবাদী নেত্রী খালেদা জিয়ার পলাতক ছেলে তারিক রহমানের সঙ্গে দেখা করেছিলেন । তারিক রহমান একজন দণ্ডিত ইসলামিক সন্ত্রাসী। তিনি ২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশ থেকে পলাতক এবং ব্রিটেনে বসবাস করছেন । খালেদা জিয়া কারাগারে থাকার সময় তারেক রহমানকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়। শনিবার রিপাবলিক টিভির একটি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি সংবাদপত্র ‘ব্লিটজ’-এর সম্পাদক সালাহউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী এই দাবি করেন। চৌধুরী বিতর্কের সময় বলেছিলেন যে লন্ডনে অনুষ্ঠিত এই গোপন বৈঠকটি বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করার জন্য মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এবং পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ।
সালাহউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী দাবি করেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারিক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে রাহুল গান্ধী এতে সম্মতি দিয়েছেন, যা আজ বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে। তার মানে শেখ হাসিনাকে সরানোর জন্য দুজনের মধ্যে সমঝোতা হয়েছিল। সালাহউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ তালেবানদের দখলে রয়েছে এবং হিন্দুদের গণহত্যা চলছে।’
বাংলাদেশের প্রবীণ সাংবাদিকের এই দাবি নিয়ে কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছে বিজেপি। বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য বলেছেন,’এটি একটি গুরুতর বিষয়। শিশু বুদ্ধিমত্তাকে এই যাত্রা সম্পর্কে একটি ব্যাখ্যা দিতে হবে এবং কার সাথে দেখা হয়েছিল তাও বলা উচিত।’ রাহুল গান্ধীকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি নেতা সর্দার আরপি সিংও।
সরদার আরপি সিং সোশ্যাল মিডিয়া সাইট এক্স (আগের টুইটারে) লিখেছেন,’লন্ডনে বিএনপির তারিক রেহমানের সাথে তার বৈঠকের বিষয়ে রাহুল গান্ধীর স্পষ্ট করা উচিত। তিনি কি বাংলাদেশে হিন্দুদের অভ্যুত্থান ও গণহত্যাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন? বাংলাদেশে বসে ব্লিটজের সম্পাদক এ তথ্য জানিয়েছেন।’ এর আগে সালাহউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী অভিযোগ তুলেছিলেন যে খালেদা জিয়ার বিএনপি ছাত্রদের শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাতে নেতৃত্ব দিয়েছে,তারা সন্ত্রাসী সংগঠন আল কায়েদার সাথে যুক্ত ।তিনি বলেন, তারিক রেহমান শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর জন্য ডেভিড বার্গম্যান এবং জন ড্যানিলোভিচের মতো প্রক্তন মার্কিন কূটনীতিকদের নিয়োগ করেছিলেন ।
প্রসঙ্গত,তারিক রহমান বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং বাংলাদেশের সপ্তম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছেলে। তিনি ১৯৬৭ সালের ২০ নভেম্বর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। রহমান ১৯৮৮ সালে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি তার মায়ের পক্ষে প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত জীবনযাপনকারী তারিক রেহমান ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড নিক্ষেপের মূল পরিকল্পনাকারী। এতে শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে সামরিক গ্রেডের আর্গাস গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়। হামলায় মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ নেতাকর্মী নিহত হন। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার অজুহাতে রেহমান লন্ডনে পালিয়ে যান। ভবিষ্যতে রাজনীতিতে যোগ দেবেন না বলে লিখিত মুচলেকা দিয়েছেন বলেও জানা গেছে। এরপর তাকে লন্ডনে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে খালেদা জিয়া জানিয়েছেন যে তার ছেলে দেশে ফিরে ফের সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেবে ।।