এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,১৭ এপ্রিল : মুসলিম ছেলের সাথে হিন্দু মেয়ের প্রেমের প্রেক্ষাপটে নির্মিত বাংলাদেশের একটি সিনেমাকে নিয়ে জোর বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে । “আদম” নামে ওই ছবির ট্রেলর সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ । অভিযোগ,ওই ছবির মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন সুকৌশলে লাভ জিহাদে ইন্ধন জোগানো হয়েছে, অন্যদিকে হিন্দু ও মুসলিম উভয় ধর্মকে ছোট করা হয়েছে । এদিকে ইদের দিনে ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কথা । তবে তার আগেই বাংলাদেশের চলচিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের পরিচালক এবং ছবিটির প্রযোজককে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ সনাতন পার্টির(বিএস পি) সভাপতি আশীষ কুমার দাস ।
রবিবার(১৬ এপ্রিল ২০২৩) বাংলাদেশের চলচিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের পরিচালক আবু তৌহিদ হিরণ ও আদম চলচিত্রের প্রযোজক তামিম হোসেনের কাছে পাঠানো ওই লিগ্যাল নোটিশে আশীষবাবুর আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেছেন,’আমার মোয়াক্কেল একজন ধার্মিক ব্যক্তি ও রাজনীতিবিদ ও সচেতন ব্যক্তি বটে। তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “আদম” ছবির ট্রেলর প্রকাশ হয়েছে তাতে তিনি দেখতে পান যে,”বদম” নামে একটি ছেলের সঙ্গে কামিনী নামের একটি মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে । এক পর্যায়ে কামিনী অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়েন। কুমারী কামিনীর অন্তঃস্বত্ত্বা নিয়ে সমাজে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ট্রেলরে দেখা যায় মুসলিম সমাজে ফতোয়াকে উসকে দেয়া হয়েছে। গ্রাম্য বিচারে কামিনীকে মাটিতে পাথর নিক্ষেপ করে মেরে ফেলার ফতোয়া দেন ইমাম সাহেব । হিন্দু পুরোহিত কামিনীকে আগুনে পুড়িয়ে মারার সিদ্ধান্ত দেন। বৌদ্ধ ধর্ম প্রধান জীব হত্যা মহাপাপ এবং খ্রিষ্টান যাজক অনাগত সন্তানকে পৃথিবীর আলোয় আনতে মতামত প্রদান করেন। শালিসের মধ্য কেউ একজন আযান দেন। তখন তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, এই-থাম। আযান দিচ্ছে-তুই জানস ও হিন্দু না মুসলিম পৃথক চারটি ধর্মকে মুখোমুখি করা হয়েছে যা বর্তমান সমাজ ব্যবহারের জন্য চরম হুমকি এবং সম্প্রদায়িক সম্প্রতি বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বিদ্যমান।’
তিনি লেখেন,’উক্ত চলচিত্রের ট্রায়াল ভার্সন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথে হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্য ক্ষোভ বিরাজ করছে। অত্র চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মকে মহান ও সনাতন এবং ইসলাম ধর্মকে সুগ্ধ ও তিক্ষ্ণভাবে
ফতোয়াবাজ, উগ্রপন্থী ও মানবিক বিরোধী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে । যার মধ্য দিয়ে সুক্ষ ও পরিকল্পিত ভাবে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে । আপনাদের নির্মিত অত্র ট্রায়াল ভার্সন পর্যবেক্ষণ করে সারা বিশ্বের কোটি কোটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতো আমার মোয়াক্কেল চরমভাবে হতাশ, মারাত্মক মর্মাহত ও আহত হয়েছেন । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারই ব্যাপক ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। আমার মোয়াক্কেল মনে করেন আপনাদের এ ধরণের সাম্প্রদায়িক উস্কানীমূলক চলচ্চিত্রের মুক্তি পেলে বাংলাদেশে বসবাসরত সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করবে যা অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানের সম্পূর্ণ পরিপন্থী । পরিকল্পিত ভাবে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়নে এবং দেশকে অস্থিতিশীল করার হীনউদ্দেশ্যে বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার একটি নীল নকশা ও অপকৌশল মাত্র।’
আইনজীবী সুমন কুমার রায়ের ওই নোটিশে অভিযোগ করা হয়েছে, ‘অত্র চলচ্চিত্রের ট্রায়ালটি পর্যবেক্ষণ করে প্রতীয়মান হয় যে, চলচ্চিত্রে সনাতন ও ইসলাম ধর্মের মানুষে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মতো সংলাপ ও দৃশ্য রয়েছে বিপরীতে খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধধর্মকে মহান হিসেবে দেখানো হয়েছে। বিভিন্ন ধর্মকে পাশাপাশি দাঁড় করে সুকৌশলে ধর্মীয় বিভাজন তৈরী করা হয়েছে, যা স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী বটে। এই চলচ্চিত্র মুক্তি পেলে সাম্প্রদায়িক সংঘাত হওয়ার সম্ভাবনা উক্ত ট্রেলারে বিদ্যমান। অত্র চলচ্চিত্রের মাধ্যমে “আদম” নাম বৃিকত করে “বদম” এবং হিন্দু মেয়ে কামেনীর অর্থাৎ হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের ছেলে-মেয়েদের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ককে উস্কে দেওয়া হয়েছে। যা সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতাকে বিনষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই সাম্প্রদায়িক সংঘাত এড়াতে পবিত্র রমজান ও পবিত্র ঈদুল ফিতরে চলচ্চিত্রটি মুক্তি দেওয়া থেকে বিরত ও এই চলচ্চিত্রের সেন্সর সনদপত্র বাতিল করে প্রদর্শন ও প্রচার বন্ধ করা একান্ত আবশ্যক বলে আমার মোয়াক্কেল মনে করেন।’
পাশাপাশি তিনি সতর্ক করে দিয়ে লেখেন,’আপনি/আপনারা অত্র লিগ্যাল নোটিশ গ্রহীতা অত্র লিগ্যাল নোটিশ প্রাপ্তির ০৭ (সাত) দিনের মধ্যে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের ভাবাবেগ ও অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আপনি/আপনার নির্মিত বিতর্কিত ও সাম্প্রদায়িক উস্কানীমূলক ও মানহানীকর চলচ্চিত্র প্রচার ও প্রদর্শন বন্ধ করতঃ নোটিশ দাতাকে অবগত করতে বিনীত অনুরোধ করা গেল। অন্যথায় আপনি/আপনার বিরুদ্ধে আমার মোয়াক্কেল দেশের প্রচলিত ও ফৌজদারী আইন মোতাবেক বিজ্ঞ আদালতে মামলা-মোকদ্দমা আনয়ন করিয়া প্রতিকার প্রার্থনা করিতে বাধ্য করা হবে। যার সকল দায়-দায়িত্ব আপনাকে বহন করিতে হইবে ।’।