আমিরুল ইসলাম,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),১৩ জুলাই : প্রৌঢ়ের পেশা লটারির টিকিট বিক্রি করা । টিকিট বিক্রির জন্য তিনি মানুষকে ভাগ্য পরীক্ষা করার পরামর্শ দিতেন । সকাল হলেই টিকিট হাতে নিয়ে মানুষের সামনে দাঁড়ানোই ছিল তাঁর নিত্যদিনের কাজ । কিন্তু এই লটারির টিকিট বিক্রির ব্যাবসা চালাতে গিয়ে কার্যত নিঃস্ব হতে হয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার ভাতার গ্রামের বাসিন্দা রামকৃষ্ণ দাস নামে ওই প্রৌঢ়কে । তাই একবার নিজের ভাগ্য পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন । আর তাতেই রাতারাতি কোটিপতি বনে গেলেন তিনি । তবে এই পেশার সঙ্গে আর যুক্ত থাকতে চাননা রামকৃষ্ণবাবু । তিনি বলেন, ‘লটারির ব্যবসা করতে গিয়ে আমি সর্বসান্ত হয়ে গিয়েছি । কয়েক লক্ষ টাকার ঋণ হয়ে গেছে । প্রথমে সব ধারদেনা শোধ করব । তারপর একটা টোটো কিনে চালাবো । আর লটারির টিকিট বিক্রির ব্যাবসা করবো না ।’
জানা গেছে, ভাতার গ্রামের বাসিন্দা পেশায় লটারির টিকিট বিক্রেতা রামকৃষ্ণ দাসরা ৫ ভাই ও ২ বোন । রামকৃষ্ণবাবুর একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে । সরকারি জায়গার উপর অ্যাসবেস্টসের ছাউনি দেওয়া একতলা মাটির পৈতৃক বাড়ি রয়েছে তাঁদের । ওই বাড়ির একটি ঘরে স্ত্রী মনাদেবীকে নিয়ে পৃথক সংসারে থাকেন রামকৃষ্ণবাবু । একটি মাত্র ঘরের মধ্যেই রান্না খাওয়া ও ঘুমনো । নুন আনতে পান্তা ফোরানো সংসার । পৈতৃক কোনও জমিজমা নেই । লটারির টিকিট বিক্রির আয়ের উপরেই নির্ভর ছিল স্বামী-স্ত্রীর জীবন ।
রামকৃষ্ণবাবুর কথায়, ‘বিগত ১৮ বছর ধরে লটারির টিকিট বিক্রি করছি । সেই স্বল্প রোজগারেই অতিকষ্টে সংসার খরচ চালিয়ে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছি । কিন্তু নিজের ভাগ্য পরীক্ষার জন্য কোনও দিন লটারির টিকিট কেটে দেখিনি । মনে করতাম আমি অভাগা । লটারির টিকিট কেটে আমি পুরষ্কার পাবো, কোনও দিন ভাবিনি । তাও প্রথম পুরষ্কার ।’
জানা গেছে,সোমবার বিকেলে যথারীতি ভাতার বাজারে এসেছিলেন রামকৃষ্ণবাবু । বাজারের একটি লটারির দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার সময় ৬ সেমের একটি নৈশকালীন টিকিটের নম্বর তাঁর পছন্দ হয়ে যায় । তৎক্ষনাৎ ৩০ টাকা দিয়ে ওই টিকিটটি কিনে নেন । এরপর তিনি বাড়ি ফিরে এলে রাতের দিকে ওই লটারির দোকান থেকে তাঁকে ফোনে জানানো হয় ওই টিকিটে ১ কোটি টাকার প্রথম পুরষ্কার পড়েছে । খবর পেতেই গোটা পরিবার আনন্দে মেতে ওঠে ।
রামকৃষ্ণ দাসের স্ত্রী মনাদেবী বলেন, ‘আমার বিয়ের পর থেকেই ওই একটি ঘরের মধ্যে সব কিছু । দু’মেয়েকে বড় করে বিয়ে দিয়েছি । খুব কষ্টে কেটেছে । এখনও মেয়ে-জামাইরা এলে আমাদের খোলা বারান্দায় ঘুমাতে হয় । শীতকালে বা বৃষ্টি হলে চরম কষ্ট ভোগ করতে হয় । ভালো বাড়িতে থাকা আমার দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন । এবার সেই স্বপ্নপূরণ হবে ।’।