প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৫ অক্টোবর : জন প্রতিনিধি থেকে শুরুকরে প্রশাসন,সবার কাছে
বহু আবেদন নিবেদন করেও জোটেনি একটা পাকা বাড়ি।তাই বিপদের ঝুঁকি নিয়েই পূর্ব বর্ধমানের রায়নার মাঝপুর গ্রামের বাসিন্দা নিখিল সরকার সপরিবার মাটির বাড়িতেই বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছিলেন।বৃহস্পতিবার ভোরে সেই মাটির বাড়ির দেওয়াল ভেঙে পড়ায় নিখিল সরকার ও তাঁর স্ত্রী টুম্পাদেবী জখম হতেই সহানুভূতি দেখাতে প্রশাসনিক কর্তারা পৌছে যান তাদের বাড়িতে। আর তা নিয়ে কটাক্ষ করে প্রতিবেশীরা বলে বসে ঘর ভেঙে কেউ চাপা না পড়লে প্রশাসনের হুুঁশ ফেরেনা ।
মাঝপুর গ্রামটি পূর্ব বর্ধমানের রায়না-১ ব্লকের শ্যামসুন্দর গ্রাম পঞ্চায়েতের আধীন। এই গ্রামের বাসিন্দা নিখিল সরকার দীর্ঘদিন ধরেই মাটির বাড়িতে বসবাস করছেন। মাথা গোঁজার জন্যে বিকল্প আর কোন ঠাঁই তাদের ছিল না।মাটির বাড়ির একটি দেওয়াল আগেই ভেঙেছিল। সেই জায়গাটি তারা ত্রিপল দিয়ে ঘিরে রেখে ছিলেন।
এদিকে গত কয়েক দিন ধরে চলা টানা বৃষ্টিতে ওই মাটির বাড়ির আরও একটি দেওয়াল বৃহস্পতিবার
ভোরে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। ভেঙে পড়া সেই দেওয়ালের নিচে চাপাপড়ে জখম হন নিখিল সরকার ও তাঁর স্ত্রী টুম্পাদেবী।তা জানতে পেরেই শ্যামসুন্দর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান অসীম নায়েক ঘটনাস্থলে পৌছান।তিনি স্থানীয়দের সহযোগীতা নিয়ে সরকার দম্পতিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্যে রায়নার মহেশবাটি হাসপাতালে নিয়ে যান ।
বেলা বাড়তেই এই ঘটনার খবর জেলা প্রশানের কাছেও পৌছায় । দুপুরে বর্ধমান দক্ষিণের মহকুমা শাসক কৃষ্ণেন্দু মন্ডল,মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সুপ্রভাত চক্রবর্তী এবং ব্লকের বিডিও রিমলি সোরেন ওই গ্রামে পৌছেন। প্রশাসনের কর্তাদের কাছে পেয়েই গ্রামের মানুষজন ক্ষোভ উগরে দেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন ,বারবার পাকা বাড়ির জন্যে আবেদন করলেও সমীক্ষা ঠিক মতো হয়নি। তাই মাটির বাড়িতে বসবাস করা অনেকের নামই তালিকায় নেই।সরকারী ঘর পাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক বাদ বিচার হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন মাঝপুর গ্রামের বাসিন্দারা।
এমন অভিযোগ পাওয়ার পর মহকুমা শাসক কৃষ্ণেন্দু মণ্ডল সরেজমিন বেশ কয়েকটি বাড়ি ঘুরে দেখেন।তখনই তাঁর নজরে আসে গ্রামের বেশিরভাগ বাড়ি মাটির। অনেকের বাড়ির দেওয়ালে ও চালে ত্রিপল দেওয়া রয়েছে। যে সব মাটির বাড়ি ‘দুর্বল’, সেই সব পরিবারকে অন্যত্র উঠে যাওয়ার জন্যেও মহকুমা শাসক অনুরোধ করেন। এর পরেই মহকুমা শাসকের প্রশ্নের মুখে পড়েন বিডিও রিমলি সোরেন। কেন ঠিকমতো সমীক্ষা করে রিপোর্ট দেওয়া হয়নি তা বিডিওর কাছে জানতে চান মহকুমা শাসক । বিডিও উত্তরে বলেন,’আমি সরাসরি গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলবো’।আর হাসপাতালের বেডে শুয়ে নিখিল সরকার বলেন,’একটা পাকা বাড়ির জন্যে বারবার প্রশাসনকে জানিয়ে ছিলাম। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরেও চিঠি দিয়েছি। সপ্তাহখানেক আগেও মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে খোঁজ নিয়েছে, কিন্তু সুরাহা হয়নি ।’
বিজেপির জেলা সভাপতি (বর্ধমান পূর্ব লোকসভা) গোপাল চট্টোপাধ্যায় বলেন,’তৃণমূলের নেতাদের পাকা অট্টালিকা হয়েছে।আর গরিব মানুষ ভাঙা মাটির বাড়ি ত্রিপল দিয়ে ঘিরে থাকছে।সেই বাড়ির দেওয়াল ভেঙে পড়ে গরিব পরিবারের সদস্যরা জখম হচ্ছে। এটাই আসলে তৃণমূলের উন্নয়ন।’
পাল্টা জবাবে রায়নার তৃণমূল বিধায়ক শম্পা ধাড়া বলেন,’আবাস যোজনা থেকে ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রেখেছে বিজেপি। সেই টাকা কেন্দ্রের বিজেপি সরকার দিলে গরিব মানুষরা পাকা বাড়ি তৈরি করতে পারত।’।