প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১০ মে : ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসা চলছে বলে অভিযোগ তুলে প্রতি মুহুর্তে গলা ফাটাচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্ব । কিন্তু সেই সবে কান না দিয়ে আতঙ্কে ঘর ছাড়া বিজেপি কর্মীদের ঘরে ফেরানোর কাজ অব্যাহত রাখলো শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের পূর্ব বর্ধমান জেলার কর্মীরা । এমনকি তৃণমূলের কর্মীরাই দায়িত্ব নিয়ে খোলাচ্ছেন বিজেপির কর্মী ও সমর্থকদের দোকান । তৃণমূলের নেতা,কর্মীও বিধায়করা মহানুভবতা দেখানোয় আপাতত স্বস্তিতে বিজেপি কর্মীরা ।
রবিবারের পর সোমবারও পূর্ব বর্ধমানের তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা একদল ঘর ছাড়া বিজেপি কর্মীদের ঘরে ফেরালো। রবিবার জেলার রায়ান গ্রামের ঘরছাড়া বিজেপি কর্মীদের ঘরে ফেরায় তৃণমূল । ২-মে ভোটের ফল ঘোষণার পরেই আতঙ্কে ওই বিজেপি কর্মী ঘর ছেড়েছিল । এদিন ফের বর্ধমান-১ নম্বর ব্লকের হটুদেওয়ান এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা এলাকার ২০ জন বিজেপি কর্মীকে ঘরে ফেরালো ।
ঘরছাড়া বিজেপি কর্মী শেখ সাগর এদিন বলেন, ভোটের ফল বের হওয়ার পর তৃণমূল নেতাদের হুমকির ভয়ে তাঁরা ঘরছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন ।কারণ এলাকার কয়েকজন তৃণমূল নেতা হুমকি দিয়ে বলেছিল,ঘরে থাকলে ঘরে ভাঙচুর করা হবে।সেই ভয়ে তারা এলাকার বেশ কয়েকজন বিজেপি কর্মী সমর্থক বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছিলেন ।কিন্তু রবিবার রাতে এলাকার তৃণমূল নেতা শেখ কাজল,শেখ জামালরা তাদের ফোন করে নির্ভয়ে বাড়ি ফিরে আসতে বলেন।সেই আশ্বাসে তারা এদিন বাড়িতে ফিরেছেন।শেখ সাগর জানান ,সামনেই ইদ। তার আগে বাড়ি ফিরতে পেরে তারা খুশী ।
এই বিষয়ে বর্ধমান উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক নিশীথ মালিক বলেন, “আমাদের নেত্রী পরিস্কার নির্দেশ দিয়েছেন কোন রকম অশান্তি বা হিংসা বরদাস্ত করা হবে না।তাই যারা ভোটের পর নিজেরা ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা আমাদের দলের কর্মীরাই করছেন। নিশীথ বাবু দাবি করেন ,তৃণমূল যে রাজ্যে অশান্তি চায় না এই ঘটনা তারই প্রমাণ“ । যদিও বর্ধমান উত্তরের বিজেপি প্রার্থী রাধাকান্ত রায় বলেন, জেলায় হিংসার ঘটনায় বিরাম এখনও পড়ে নি ।প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও তাঁদের দলের কর্মী সমর্থকরা আক্রান্ত হচ্ছেন। তাঁদের বাড়িতেও হামলা হচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেস যেহেতু এখন শাসক দল তাই তাঁদের উচিত এসব বন্ধ করা ।
একই ভাবে কালনা বিধানসভার তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বও বিজেপি কর্মীদের দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ।গত ২ মে ভোটের ফল ঘোষণার পর তৃণমূল কর্মীদের রোষের মুখে পড়েন কালনার কল্যানপুর অঞ্চলের জিউধারা মোড় এলাকার সবজি ব্যবসায়ী সজল দাস। তিনি বিজেপির সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তার জন্যে তৃণমূলের কিছু কর্মী সজল বাবুর সবজি বিক্রির দোকানের দখল নিয়ে নেয় বলে অভিযোগ ওঠে ।সজল বাবুর দোকানের ভেতর থেকে সমস্ত জিনিসপত্র বাইরে বের করে দিয়ে দোকান ঘরটিতে তৃণমূলের পতাকায় মুড়িয়ে দেওয়া হয়। এরফলে বিজেপি কর্মী সজল বাবুর রুটি রুজি যোগাড়ের পথ বন্ধ হয়ে যায় । তবুও ভয়ে তিনি দোকানে আসতে পারছিলেন না।
এই কথা জানার পর কালনা বিধানসভার নবনিযুক্ত তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগ এদিন দুপুরে সজল বাবুর সবজি দোকানে পৌছান। তিনি ওই দোকান ঘরে লাগানো থাকা তৃণমূলের সমস্ত পতাকা খুলে দিয়ে বিজেপি কর্মী সজল দাসকে তাঁর দোকান ফিরিয়ে দেন। দোকান ফিরে পেয়ে
তৃণমূল বিধায়ককে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বিজেপি কর্মী সজল দাস ।
বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগ এই প্রসঙ্গে বলেন, “কালনার মানুষ তাঁর উপরে ভরসা রেখেছেন। মানুষের সুবিধা অসুবিধায় পাশে দাঁড়ানোই তাঁর কাজ। সেই কাজই তিনি এদিন করেছেন। তবে সজল দাসের দোকান ঘরটি তৃণমূলের কর্মীরা দখল করেছিল এই অভিযোগ সত্য নয় বলে দেবপ্রসাদ বাগ জানিয়েছেন । বিধায়ক বলেন ,ওই বিজেপি কর্মী ভয় পেয়ে গিয়ে দোকান খুলতে আসছিলেন না “। বিপাকে পড়ে যাওয়া বিজেপি কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যে কালনার বিজেপি নেতা সুশান্ত পাণ্ডে এদিন তৃণমূল বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগ কে সাধুবাদ জানিয়েছেন ।।