প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৩ মে : ভোটোত্তর রাজনৈতিক হিংসায় পূর্ব বর্ধমান জেলায় খুন হলেন ৪ জন। জখম হয়েছেন আরও একাধিক ব্যক্তি। সংঘর্ষের ঘটনা গুলি ঘটেছে রায়নার সমসপুর ও জামালপুরের নবগ্রামে । ঘটনার জেরে উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে গোটা এলাকা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় মোতায়েত করা হয়েছে বিশাল পুলিশ,র্যাফ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী । পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যান সিংহ রায়,এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিন ) আমিনুল ইসলাম খান এর নেতৃত্বে নবগ্রামে চলে ধরপাকড় অভিযান ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,মৃতরা হলেন গনেশ মালিক (৬০),কাকলি ক্ষেত্রপাল (৪৭), শাজাহান শা ওরফে সাজু(৩০)এবং বিভাস বাগ ওরফে বিনোদ (২৭)। মৃতদের মধ্যে গনেশের বাড়ি রায়না থানার সমসপুর গ্রামে । অপর মৃতদের মধ্যে কাকলি ও বিভাসের বাড়ি জামালপুরের নবগ্রামের ষষ্ঠিতলা ও উড়িষ্যা পাড়ায় ।আর সাজু শেখের বাড়ি জামালপুরের ভেড়িলি গ্রামে। গুরুতর জখম মানু ক্ষেত্রপাল ওরফে রুপো এবং অনিল ক্ষেত্রপালকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।অপর জখম মিঠু রহমানের চিকিৎসা হয় জামালপুর ব্লক হাসপাতালে। সে এখন বিপদ মুক্ত ।
রায়নার সমসপুরের বাসিন্দাদের কথায় জানা গিয়েছে,ভোটের ফল ঘোষনার পর রবিবার রাতে সমসপুর গ্রামে বিজেপি ও তৃণমূলের কর্মীদের মধ্যে বচসা বাঁধে । তা দেখে এলাকার বাসিন্দা গনেশ মালিক থামাতে যান। তখনই তাঁর মাথায় কেউ বাঁশের বাড়ি মারে । তাতে তিনি গুরুতর জখম হন । গনেশ মালিককে উদ্ধার করে রাতেই পাঠানো হয় বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে । সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।মৃতর ছেলে মনোজ মালিক দাবী করেছেন , তাঁর বাবা গনেশ মালিক তৃণমূল কংগ্রেস পার্টি করেন । তাঁদের গ্রামের একটা মাচায় বসে সবাই গল্পগুজব করে। রবিবার সেখানে বসে থাকা তৃণমূল কর্মীদের উপরে চড়াও হয়ে হঠাৎতই বিজেপি কর্মীরা মারধোর শুরু করে । তখন গনেশ বাবু তাদের থামাতে যান। ওই সময়েই হামলাকারীরা তাঁর বাবার মাথায় বাঁশ দিয়ে আঘাত করে। মনোজ মালিক জানিয়েছেন ,মাথায় গুরুতর আঘাত লাগাতেই তাঁর বাবার মৃত্যু হয়েছে । এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রায়না থানার পুলিশ তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে ।
অন্যদিকে সোমবার বেলা থেকে রাজনৈতিক
উত্তেজনার পারদ চড়ে জামালপুর থানার নবগ্রামের ষষ্ঠিতলা ও উড়িষ্যা পাড়ায় । এই এলাকায় হওয়া সংঘর্ষের ঘটনার এদিন বিজেপি কর্মী পরিবারের মহিলা কাকলি ক্ষেত্রপাল ও তৃণমূলের দুই কর্মী সাজু শা ও বিভাষ বাগের মৃত্যু হয় । জখম হন তৃণমূলের মিঠু রহমান এবং কাকলির স্বামী অনিল ক্ষেত্র পাল ও দেওর রুপো ক্ষেত্রপাল ।
এই ঘটনা বিষয়ে জামালপুর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মেহেমুদ খান জানিয়েছেন ,মৃত ও জখম তৃণমূলের কর্মীরা সহ কয়েকজন নবগ্রাম থেকে ফিরছিল । ফেরার সময়ে তারা জয়বাংলা শ্লোগান দিচ্ছিল । পথে নবগ্রামের উড়িষ্যাপাড়ার কাছে সশস্ত্র বিজেপি মহিলা ও পুরুষ কর্মীরা তৃণমূল কর্মীদের উপরে হামলা চালায় । প্রথমে তারা তৃণমূলের কর্মীদের বাইকে ভাঙচুর করে । পরে টাঙ্গি,তরোয়াল রড় , লাঠি নিয়ে তৃণমূলের কর্মীদের ব্যাপক মারধোর করা হয় । আশঙ্কা জনক অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে জামালপুর ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয় । শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় সাজু ও বিভাস কে বর্ধমান হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষনা করেন । মিঠু রহমানের মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হলেও সে এখন বিপদ মুক্ত বলে মেহেমুদ খান জানিয়েছেন । ভোটে হেরে যাওয়ার বদলা নিতেই বিজেপি কর্মীরা পরিকল্পনা মাফিক জামালপুরে সন্ত্রাস চালানো শুরু করেছে বলে মেহেমুদ খান অভিযোগ করছেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ যদিও মানতে চাননি বিজেপির নবগ্রামের শক্তি প্রধান আশিষ ক্ষেত্রপাল । তিনি জানিয়েছেন ,তার বাড়ি নবগ্রামের ষষ্ঠি তলায়। আশিষ বলেন ,
এদিন বেলা ১১ টা নাগাদ গ্রামের তিনি ও তার সতীর্থরা মাচায় বসে ছিলেন । ওই সময়ে সবুজ আবিরে মাখামাখি হয়ে উড়িষ্যা পড়ার দিক থেকে বেশ কয়েকটি বাইকে চেপে তৃণমূলের কর্মীরা তাঁদের কাছে এসে জয় বাংলা , খেলা হবে এইসব শ্লোগান দেওয়া শুরু করে । আশিষ ক্ষেত্রপাল বলেন ,তিনি ও তাঁর সতীর্থরা তাবড়া কাটিয়ে ওই তৃণমূল কর্মীদের এলাকা থেকে সরিয়ে দেন । এর কিছুক্ষণ পরেই ওই তৃণমূলের কর্মীরা অন্যপথ দিয়ে ঘুরে এসে তাঁর বাড়িতে চড়াও হয় । তখন তাঁর বাবা , মা , কাকা , কাকিমা সবাই বাধা দেয় । কিন্তু সশস্ত্র তৃণমূলের কর্মীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে টাঙ্গি ও তরোয়াল দিয়ে তার পরিবারের সবাইকে আঘাত করে । আশিষ জানিয়েছেন, টাঙ্গির আঘাতে গুরুতর জখম হয়ে তাঁর মা কাকলি মারা যান । আর বাবা অনিল ক্ষেত্রপাল ও কাকা রুপো ক্ষেত্রপাল মাাত্মক জখম হয়েছেন । গ্রামের ১৬-১৭ টি
বাড়িতেও তৃণমূলের কর্মীরা ভাঙচুর চালিয়ে তছনছ করে দিয়েছে বলে আশিষ ক্ষেত্রপাল এদিন অভিযোগে জানিয়েছেন ।জামালপুরের
নবগ্রাম নিবাসী প্রাক্তন বাম বিধায়ক সমর হাজরা যদিও এদিনের ঘটনায় তাঁর দলের কেউ আক্রান্ত হয়েছেন বলে মানতে চাননি ।
এদিকে এই ঘটনার পর থেকেই নবগ্রাম এলাকা জুড়ে ধর পাকড় অভিযানে নামে পুলিশ । এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ নবগ্রাম এলাকা থেকে ২৩ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে গিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, উত্তেজনা থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ররেছে । ঘটনায় জড়িত বাকি অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে ।।