এইদিন ওয়েবডেস্ক,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),১৫ আগস্ট : যুবকের প্রেমের টানে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে বিয়ে করেছিল একাদশ শ্রেণীর এক ছাত্রী ৷ কিন্তু বিয়ের ৩ সপ্তাহের মাথাতেই শ্বশুরবাড়িতে রহস্যজনকভাবে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হল নববধু । এদিকে সেই আঘাত সহ্য করতে না পেরে একই ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হলেন তাঁর স্বামী । মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া থানার শ্রীখন্ড গ্রামে ৷ মৃতদের নাম রাজেশ রায়(২৪) ও সোনালী মাজি(১৭)। পুলিশ রবিবার দেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে পাঠিয়েছে । পুলিশ জানিয়েছে, কোনও পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের হয়নি । দুটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ।
জানা গেছে, শ্রীখন্ড গ্রামের খাড়াপুকুর পাড়ে বাড়ি রাজেশ রায়দের । রাজেশ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ছবি তোলার কাজ করতেন। বাড়িতে রয়েছেন বাবা মধু রায় ও ভাই মঙ্গল । মঙ্গল ভিনরাজ্যে কাজ করেন। মাস তিনেক আগে বাড়ি এসেছেন । তাঁদের মা নেই । বছর চারেক আগে ওই পাড়াতেই একটি মেয়ের সঙ্গে প্রথম বিয়ে হয়েছিল রাজেশের । অশান্তির কারনে পরে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় ।
অপরদিকে জানা গেছে, মঙ্গলকোটের পিন্ডিরা গ্রামে বাপেরবাড়ি সোনালীর । সে পিন্ডিরা উচ্চ বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণীতে পড়াশোনা করত । সোনালীরা এক ভাই এক বোন। ভাই দশম শ্রেণীর ছাত্র । ফেসবুকের সুত্রে রাজেশের সঙ্গে পরিচয় সোনালীর । ক্রমে দু’জনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে । তারপর তিনসপ্তাহ আগে সোনালী বাড়ি থেকে লুকিয়ে পালিয়ে এসে রাজেশের সঙ্গে বিয়ে করে ।
সোনালীর কাকা তারক মাজি বলেন, ‘রাজেশ প্রথমে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল । কিন্তু সোনালির বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়নি । তাই আমরা ভাইঝির বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চেয়েছিলাম । কিন্তু ওরা বিয়ে করে নিলে আমরা আর ঝুট ঝামেলায় যাইনি ।’
পরিবার সুত্রে জানা গেছে,শনিবার রাতে একটি বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানে কাজে গিয়েছিলেন রাজেশ । বাড়িতে ছিলেন রাজেশের স্ত্রী সোনালী,বাবা ও ভাই । সেই সময় নিজের ঘরে চলে যায় সোনালী । কিন্তু সে দীর্ঘক্ষন ধরে ঘর না খোলায় পরে পরিবারের লোকজন দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকতেই তার ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান । সঙ্গে সঙ্গে তাকে উদ্ধার করে শ্রীখন্ড স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। ততক্ষণে খবর পেয়ে রাজেশও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌছে যান । এদিকে সোনালীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা ।
এদিকে স্ত্রীর শোক সামলাতে না পেরে ওইদিন গভীর রাতে শ্রীখন্ড হাসপাতাল থেকে ফিরে একই ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হন রাজেশ । খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে দেহ উদ্ধার করে।
মৃত রাজেশের বাবা মধুবাবুর দাবি, ‘বিয়ের পর সব কিছু স্বাভাবিকই ছিল । বৌমা হঠাৎ কেন এই কাজ করল বুঝতে পারছি না । বৌমার মৃত্যুর শোক সামলাতে না পেরে আমার ছেলেও আত্মঘাতী হল ।’ এদিকে যুগলের এই মর্মান্তিক পরিনতিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে এলাকায় ।।