এইদিন ওয়েবডেস্ক,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),০২ জুলাই : সাত বছরের শিশুকন্যা ক্যান্সার আক্রান্ত । কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে । চিকিৎসা বাবদ খরচ কয়েক লক্ষ টাকা । এখন এই বিপুল পরিমান চিকিৎসার খরচ জোটাতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়ে গেছে কাটোয়া শহরের সার্কাস ময়দান এলাকার বাসিন্দা তিতলি মণ্ডল নামে ওই শিশুর পরিবারের লোকজন । যদিও তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও প্রতিবেশীরা । তাঁরা শিশুটির চিকিৎসায় সাহায্যের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় আবেদন জানিয়েছেন । একটু একটু করে যে পরিমান অর্থ সংগৃহীত হচ্ছে তা শিশুটির পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে । কিন্তু কতদিন এভাবে এই ব্যায়বহুল চিকিৎসার খরচ জোটানো সম্ভব হবে তা নিয়ে শিশুটির পরিবার পরিজন ও প্রতিবেশীরা আশঙ্কার মধ্যে রয়েছেন।
স্থানীয় ও পরিবার সুত্রে জানা গেছে, কাটোয়া শহরের সার্কাস ময়দান এলাকার বাসিন্দা বুল্টি মণ্ডলের দুই মেয়ের মধ্যে ছোট তিতলি । সে স্থানীয় একটি বেসরকারি স্কুলে প্রথম শ্রেনীতে পড়াশোনা করে । বুল্টিদেবীর বড় মেয়ে সৌমিলী নবম শ্রেনীর ছাত্রী । তিতলির যখন বছর দেড়েক বয়স তখন তাদের বাবা সুফল মণ্ডল মারা যান । তারপর বুল্টিদেবীর দ্বিতীয় বিয়ে দেওয়া হয় । দ্বিতীয় পক্ষের স্বামী প্রসূন নাথ ছোটখাটো ব্যবসা করেন । সার্কাস ময়দান এলাকায় সুফলবাবুর তৈরি করা একতলা বাড়িতে দ্বিতীয় পক্ষের স্বামী ও দুই মেয়েকে নিয়ে থাকেন বুল্টিদেবী ।
বুল্টিদেবী জানিয়েছেন,কয়েক মাস আগে তাঁর ছোটো মেয়ে তিতলির ডান পায়ের হাঁটুতে একটা ছোট্ট ফোস্কা হয় । সেই সঙ্গে শুরু হয় তীব্র যন্ত্রনা । মেয়েকে কাটোয়া হাসপাতালে এনে চিকিৎসা করানো হয় । কাটোয়া হাসপাতালের চিকিৎসকরা জবাব দিলে কলকাতার এক চিকিৎসককের কাছে মেয়েকে নিয়ে যাওয়া হয় । কিন্তু ওই চিকিৎসকও রোগ ধরতে পারেননি । এদিকে মেয়ের শারিরীক অবস্থা ক্রমশ অবনতি হতে থাকে । তখন কলকাতায় টাটা ক্যান্সার হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ সেন্টারে মেয়েকে ভর্তি করা হয় । তারপর বিভিন্ন পরীক্ষা করার পর ২০-২৫ দিন আগে জানা যায় মেয়ের ডান পায়ের ফিমার বোনে ক্যান্সার হয়েছে । অপারেশন ও কেমো থেরাপি নিয়ে প্রায় ১৫ লাখ টাকা খরচ হবে। গত বৃহস্পতিবার থেকে মেয়ের কেমোথেরাপিও শুরু হয়ে গেছে ।’
জানা গেছে,বুল্টিদেবীর বাড়িতে একটি দোকানঘর রয়েছে । যেটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে জনৈক এক ব্যবসায়ীকে । ভাড়া বাবদ পাওয়া টাকা ও বুল্টিদেবীর ভাই পেশায় ব্যবসায়ী তন্ময় মণ্ডলের পাঠানো সাহায্যেই মূলত তিনি অতিকষ্টে সংসার চালান । তারই মধ্যে মেয়ের চিকিৎসায় এত বিপুল অঙ্কের খরচ হবে শুনে অতান্তরে পড়ে গেছেন ওই মহিলা ও তাঁর স্বামী ।
বুল্টিদেবীর ভাই তন্ময় মণ্ডল বলেন, ‘ভাগনীর চিকিৎসায় এযাবৎ প্রায় দেড় লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গেছে । আমার কিছু সঞ্চয় ছিল তা থেকেই ওই খরচ করেছি । আমি ছোটখাটো ব্যাবসা করি । সেই উপার্জনে নিজের সংসার চালিয়ে দিদিকে মাসে মাসে কিছু দিই । আমার পক্ষে ভাগনীর ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ চালানো সম্ভব নয় দেখে সাহায্যের জন্য বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম । ওনারা চাঁদা তুলে চিকিৎসার জন্য অর্থ সংগ্রহ করছেন ।’
জানা গেছে, তন্ময়বাবু ও তাঁর দিদির বন্ধু বান্ধবরা সোশ্যাল মিডিয়ায় বুল্টিদেবী ও তাঁর অসুস্থ মেয়ের ছবি পোস্ট করে সাহায্যের জন্য আবেদন জানিয়েছেন । এগিয়ে এসেছে ‘প্রচেষ্টা’ নামে কাটোয়ার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও । ওই সংস্থার পক্ষ থেকে অর্থ সাহায্যের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় আবেদন জানানো হয়েছে । সম্প্রতি ওই সংস্থা ১২০১৭ টাকা সংগ্রহ করে ওই শিশুর মায়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করেছে বলে জানা গেছে । এভাবে এযাবৎ প্রায় ৩ লাখ টাকা সংগৃহীত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তন্ময়বাবু ।
পরিবার সুত্রে জানা গেছে, কলকাতার ওই বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে গত বুধবার তিতলির মাথায় স্ক্যান করা হয় । রিপোর্টে একটি ছোট টিউমার ধরা পড়েছে । যদিও এই বিষয়ে ওই হাসপাতালের তরফ থেকে স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি । তবে নতুন এই উপসর্গের জন্য ওই শিশুকে একজন স্নায়ূরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখানোর জন্য হাসপাতালের তরফ থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে । বুল্টিদেবী বলেন, ‘পায়ের হাড়ের ক্যান্সারের চিকিৎসার খরচ কিভাবে জোগাবো সেই নিয়ে চরম দুঃশ্চিন্তায় আছি । এই পরিস্থিতিতে নতুন উপসর্গের কারনে আরও কত খরচ বাড়বে কে জানে । তাই সকলের কাছে অনুরোধ করছি, আপনারা আমার মেয়েকে বাঁচান ।’।