এইদিন ওয়েবডেস্ক,হবিগঞ্জ,০৯ এপ্রিল : মধ্যযুগীয় বর্বরতার স্বাক্ষী থাকলো বাংলাদেশের হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের মানুষ । পরকীয়া সম্পর্কের জেরে এক বধূকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে এবং পাথর ছুড়ে মারার সাজা শোনালো গ্রামের মৌলবীরা । ঘটনার পর গুরুতর জখম মহিলা স্থানীয় চুনারুঘাট থানার দ্বারস্থ হয় । তার অভিযোগের ভিত্তিতে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ । ধৃতরা হল নুরুল ইসলাম (৩৫), বায়েজিদ হোসেন (৭০), আকবর আলী (৬৮) ও আতিক উল্লাহ (৫০)। তারা সকলেই উপজেলার বড়জুম গ্রামের বাসিন্দা । শুক্রবার (৭ এপ্রিল ২০২৩) রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় ।
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে,চুনারুঘাট উপজেলার বড়জুম গ্রামের বাসিন্দা ওই মহিলার স্বামী কর্মসূত্রে ওমানে থাকেন । সেই সূযোগে বধূদের বাড়িতে যাতায়ত শুরু করে প্রতিবেশী আবুল কালাম । সে পেশায় সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চালক । মহিলার অজান্তে তার কিছু অপ্রীতিকর ভিডিও নিজের মোবাইল ক্যামেরায় রেকর্ড করে রাখে আবুল কালাম । পরে সেই ভিডিও দেখিয়ে সে বধূকে ব্লাকমেল করে সহবাস করতে বাধ্য করে । পাশাপাশি ভিডিও দেখিয়ে বধূর সঙ্গে শারিরীক সম্পর্কের কথা এলাকায় প্রচারও করে দেয় আবুল কালাম । এদিকে ঘটনাটা নিয়ে কাঁনাঘুঁষো হতেই স্থানীয় বাসিন্দাদের যত রাগ গিয়ে পড়ে ওই বধূর উপর ।
এরপর গত ৪ এপ্রিল রাতে এনিয়ে গ্রামে একটি সালিশি সভা বসে । সভায় বায়েজিদ হোসেনের নেতৃত্বে এলাকার মৌলবীরা উপস্থিত হয়েছিল । ওই মৌলবীরাই মহিলাকে ৮২ বার বেত্রাঘাত এবং পাথর ছুড়ে মারার ফতোয়া জারি করে । মৌলবীদের নির্দেশের পরেই তালিবানি কায়দায় মহিলার উপর শুরু হয় অমানবিক অত্যাচার ।
জানা গেছে,আকবর আলী (৬৮) নামে এক মৌলবী ওই বধূকে ৮২ বার বেত্রাঘাত করে । বেত্রাঘাত শেষ হলে উপস্থিত জনতা মহিলার দিকে এলোপাথাড়ি পাথর নিক্ষেপ করতে শুরু করে । এদিকে এই পাশবিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ওই মহিলা । শুধু তালিবানি কায়দায় নির্যাতনই নয়,মহিলাকে এক মাস ঘর থেকে বের হওয়ার উপরে ফতোয়াও জারি করেছে মৌলবীরা ।
জানা গেছে,এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার দেশে ফিরে আসেন মহিলার স্বামী । তিনি এনিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে স্থানীয় কট্টরপন্থীরা তাকে বাধা দেয় । শেষে অত্যাচারিত মহিলাই নিজেই চুনারুঘাট থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন । এদিকে এ ঘটনার পর ওই অটোরিক্সা চালক আবুল কালাম চম্পট দিয়েছে । পুলিশ তাকে খুঁজছে ।
যদিও প্রহৃত মহিলা জানিয়েছেন,তাদের বাড়িতে যাতায়ত ছিল আবুল কালামের । সেই সূযোগে সে তার অজান্তে কিছু অপ্রীতিকর ভিডিও নিজের মোবাইল ক্যামেরায় তুলে রেখেছিল । সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাকে কুপ্রস্তাব দিত আবুল কালাম । কিন্তু তার সেই প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় সে এলাকায় ওই সমস্ত ভিডিও দেখিয়ে সহবাসের মিথ্যা প্রচার করেছে । পাশাপাশি নির্যাতিতার স্বামী বলেছেন,‘অপরাধ যদি সত্যি হয় তাহলে উভয়েই দায়ি । কিন্তু গ্রামবাসীরা শুধু আমার স্ত্রীর বিচার করেছেন। অথচ যে ভিডিও ছড়িয়ে আমার স্ত্রীকে হেয় করেছেন, তার বিচার কে করবে ?’