জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,গুসকরা(পূর্ব বর্ধমান),২২ ডিসেম্বর : কলকাতার লেকটাউনের একেবি মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ও গুসকরা রামধনু কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির ‘অন্নকূট’-এর যৌথ উদ্যোগে পূর্ব বর্ধমানের গুসকরা রটন্তী কালীতলা সংলগ্ন স্থানে আশেপাশের প্রায় পঞ্চাশ জন দুঃস্থ শিশু ও বয়ঃসন্ধি বালিকার দুপুরের আহারের ব্যবস্থা করা হয়। আহার বলতে নিছকই ডাল, ভাত ছিলনা, যথেষ্ট প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার ছিল। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে খাওয়ার আগে প্রতিটি বাচ্চার হাতে স্যানিটাইজার দেওয়া হয়। পিকনিকের মরশুমে এই দ্বিপ্রাহরিক আহার কার্যত এই অসহায় শিশুদের কাছে পিকনিক স্বরূপ হয়ে উঠেছিল। ফলে প্রথম বারের জন্য পিকনিকের সুযোগ পেয়ে শিশুগুলির মুখ আনন্দে ভরে উঠেছিল।
বিভিন্ন সূত্রে গুসকরার সংস্থাটির সেবামূলক কাজের খবর পেয়ে ২২ শে ডিসেম্বর আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় কলকাতার সংস্থাটি। অন্যদিকে গুসকরার সংস্থাটির সম্পাদক বিপ্লব ভাণ্ডারী ও সভাপতি শিউলি সেনগুপ্ত সহ অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত থেকে খাদ্য বিতরণ করেন ।
প্রসঙ্গত, গুসকরার সংস্হাটি গত ১০-১২ বছর ধরে বিভিন্ন এলাকায় দুস্থদের আহার, বস্ত্র বিতরণ সহ বিভিন্ন ধরনের সমাজসেবামূলক কাজ করলেও এই প্রথম বারের জন্য গুসকরার বুকে দুস্থদের পাশে দাঁড়াল। জানা যাচ্ছে আগামী ২৫ শে ডিসেম্বর সংস্হাটি বর্ধমানের একটি ‘হোম’-এর প্রায় পঁচিশ জন অনাথ শিশুর হাতে শীতবস্ত্র তুলে দেবে।
অন্যদিকে কলকাতার সংস্থাটি দীর্ঘদিন ধরে সমাজ সেবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের উপস্থিতির উজ্জ্বল ছাপ রাখলেও সংস্থাটির ‘ডি-উইস’ শাখা গত দু-তিন বছর ধরে বিশেষ ভাবে সক্ষম শিশু যারা অটিজমে আক্রান্ত তাদের নিয়ে কাজ করে চলেছে এবং সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তাছাড়া স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহযোগিতায় অনেক সময় তারা কলকাতা থেকে দূরবর্তী এলাকার দুঃস্থদের পাশে দাঁড়ায় । করোনা অতিমারির সময় তাদের কার্যকরী ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মত। অন্য একটি সংস্থার সহযোগিতায় তারা বিনামূল্যে শতাধিক ব্যক্তির ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করেছে।
সংস্থার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্যা সুমিত্রা পাল বক্সীর ঠাকুরদা লেক টাউনের বিশিষ্ট সমাজসেবী নিত্যগোপাল পাল ১৯৮৭ সালের ২২ শে ডিসেম্বর না ফেরার দেশে চলে যান। তারপর থেকেই তাঁর মৃত্যুবার্ষিকির দিন পরিবারের সদস্যরা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের দুস্থদের পাশে থাকছেন। যদিও গুসকরার পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন নিত্যগোপাল বাবুর জেষ্ঠ্যপুত্র নন্দগোপাল পাল । এছাড়া বিভিন্ন সময়ে সংস্থার সদস্য দেবার্ঘ্য বক্সী, দেবকল্প বক্সী, দেবর্ষি বক্সী, বর্ণশ্রী বক্সী, রাজীব দত্ত, সুমিত্রা পাল বক্সী,শুক্লা পাল, বহ্নি ভট্টাচার্য মন্ডল প্রমুখরা সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেন ।
রামধনু কমিউনিটির সম্পাদক বিপ্লব ভাণ্ডারী বলেন, ‘আমাদের টিমের সদস্য আছে নয়জন । আমরা বিভিন্ন সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। সহৃদয় মানুষ পাশে থাকলে আরও বেশি সংখ্যক দুঃস্থ মানুষের পাশে আমরা দাঁড়াতে পারবো । তিনি আরও বলেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি দুঃস্থদের খাওয়াতে চান সেক্ষেত্রে আমাদের জানালে আমরা অবশ্যই তাকে খাদ্য বিতরণে সাহায্য করব ।’
একেবি মেমোরিয়াল ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যা বহ্নি দেবী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য বেশি সংখ্যক দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানো । কিন্তু কলকাতা থেকে দূরবর্তী এলাকার মানুষের পাশে সরাসরি দাঁড়ানোর সুযোগ আমাদের থাকে না । তাই অনেক সময় স্থানীয় যেসব সংস্থা সত্যিকারের সেবার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসে তাদের সহযোগিতা নিয়ে থাকি । যেমন নিলাম গুসকরার সংস্থাটির। আগামী দিনে অন্যান্য সংস্থার সাহায্য নেব। আমাদের বিশ্বাস সবার মিলিত প্রচেষ্টায় একদিন হয়তো অন্নহীন অসহায় মানুষগুলো একমুঠো অন্ন পাবে ।।