দিব্যেন্দু রায়,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),১৩ নভেম্বর : সহায়কমূল্যে ধান বিক্রির টোকেন বিলিতে হয়রানির অভিযোগ তুলে পথ অবরোধ করলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার ব্লকের মাহাচান্দা অঞ্চলের কৃষকরা । শনিবার সকাল প্রায় ১০ টা থেকে শতাধিক ক্ষিপ্ত কৃষক ভাতারের বিডিও কার্যালয়ের সামনে বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্য সড়কপথ অবরোধ করে রাখেন । যার ফলে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয় । এদিকে অবরোধস্থল থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বেই ভাতার থানা ও তৃণমূলের ব্লক কার্যালয় । সেই সময় দলীয় কার্যালয়ে বেশ কিছু তৃণমূল কর্মী জড়ো হয়ে ছিলেন । তাঁরা পুলিশের সহায়তা নিয়ে অবরোধ তুলতে আসেন । শেষে কৃষকদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে তাঁরা ঘন্টা খানেক পর অবরোধ তোলেন ।
ভাতার ব্লকের কৃষকদের সরকারি সহায়কমূল্যে ধান বিক্রির জন্য টোকেন বিলি ও টোকেনের জন্য রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে । ভাতারে কৃষিমাণ্ডিতে করা হয়েছে রেজিস্ট্রেশন ও টোকেন বিলির কেন্দ্রটি । প্রশাসনের তরফ থেকে প্রতি অঞ্চলের জন্য নির্দিষ্টি দিন ঠিক করে দেওয়া হয়েছে । শুক্রবার ছিল বামুনাড়া অঞ্চলের কৃষকদের রেজিস্ট্রেশন ও টোকেন সংগ্রহের দিন । ওইদিন প্রায় ২৫০ জন কৃষক রেজিস্ট্রেশন করাতে এসেছিলেন । কিন্তু কর্তৃপক্ষের গাইডলাইন অনুযায়ী অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৫০ জন চাষীর রেজিস্ট্রেশন করার কথা । এই কথা জানতে পেরে তুমুল বিক্ষোভ শুরু করে দেন কৃষকরা । শেষে চাপে পড়ে সব কৃষকদের রেজিষ্ট্রেশন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তরফ থেকে জানানো হলে কৃষকরা শান্ত হন । তার জের কাটতে না কাটতেই শনিবার ফের টোকেন বিলি নিয়ে অশান্তি ছড়াল ভাতারে ।
জানা গেছে,শনিবার ছিল মাহাচান্দা অঞ্চলের কৃষকদের সহায়কমূল্যে ধান বিক্রির টোকেনের জন্য রেজিস্ট্রেশনের দিন । মাহাচান্দা অঞ্চলের শিবপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহেবুব আলম,পারহাটের বাসিন্দা চিত্তরঞ্জন ঘোষ, মাহাচান্দা গ্রামের বাসিন্দা অশোক ঘোষ প্রভৃতি কৃষকরা বলেন, ‘,আমরা অনেকে আগের দিন রাত্রি থেকে কৃষিমান্ডির সামনে লাইন দিয়েছি । গেট বন্ধ ছিল । তাই ঠান্ডার মধ্যে বর্ধমান-কাটোয়া সড়ক পথের আশেপাশে শুয়ে বসে কাটিয়েছি । পরে এদিন সকালে অফিস খোলা হলে বলা হয় ৫০ টির বেশি টোকেন দেওয়া হবে না । এমনকি রেজিষ্ট্রেশনও করা হবে না । আবার ১১ দিন পর আসতে হবে ।’তাঁরা বলেন, ‘মাহাচান্দা অঞ্চলে ২৭ টি গ্রাম ও ২২ টি সংসদ । হাজার পাঁচেক কৃষক আছেন । এই পদ্ধতিতে টোকেন দেওয়া হলে সকলে টোকেন পেতে ২ বছর লেগে যাবে ।’
বেলেন্ডা গ্রামের চাঁদ মহম্মদ,বাসুদা গ্রামের বাসিন্দা প্রিয় রাখাল কর্মকারদের অভিযোগ, ‘শুধু টোকেন বিলিতে হয়রানিই নয়,ভাতারের কৃষকদের বস্তা পিছু ধানের দামও কম দেওয়া হচ্ছে । ৬০ কেজি বস্তা ধানের সরকারি সহায়কমূল্য হল ১১৭৬ টাকা । গত বছর ভাতারের কৃষকদের প্রতি বস্তায় ১০২০ টাকা করে দেওয়া হয়েছিল । এবারে দেওয়া হচ্ছে ১০৫০ টাকা করে । অথচ ওড়গ্রাম,গলসির কৃষকরা সরকারি রেট পাচ্ছেন । আর আমাদের এখানের মিল মালিক কৃষকদের ১১৫ টাকা করে ধানের দাম কম দিচ্ছে ।’
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে,এদিনও ৩০০-৪০০ কৃষক টোকেনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করাতে না পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে ভাতারের বিডিও কার্যালয়ের সামনে বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্য সড়কপথ অবরোধ করে দেন । কয়েকজন পুলিশকর্মীক অবরোধস্থলে এসে কৃষকদের বোঝানোর চেষ্টা করেন । কিন্তু কৃষকদের অবরোধ চলতে থাকে । শেষে বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারীর নির্দেশ পেয়ে কয়েকজন তৃণমূল কর্মীরা পুলিশের সহায়তায় অবরোধকারীদের বুঝিয়ে অবরোধ তুলতে সক্ষম হয় । যদিও বিক্ষোভকারী মাহাচান্দা গ্রামের বাসিন্দা অনাদি ঘোষের অভিযোগ, ‘তৃণমূল গায়ের জোরে সব কিছু চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে । আমাদের কোনও কথাই ওরা মানছে না ।’ এনিয়ে ফের আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কৃষকরা ।।