এইদিন ওয়েবডেস্ক,বেইজিং,২৭ জুলাই : প্রাচীন যুগে পুরুষদের খোজা করার প্রথা প্রচলন ছিল । ইংরেজি ইউনাক (Eunuch) শব্দের প্রতিশব্দ হচ্ছে খোজা। ইউনাক শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ইউনোখোস (Eunoukhos) থেকে, যার অর্থ শয়নকক্ষের পাহারাদার । খোজা করার উদ্দেশ্য হল সংশ্লিষ্ট পুরুষের প্রজনন ক্ষমতাকে একেবারে নষ্ট করে দেওয়া । যাতে সেই ব্যক্তি কোনো মহিলার সঙ্গে সহবাস করে সন্তান উৎপাদন না করতে পারে,সেই উদ্দেশ্যে প্রাচীন যুগে প্রভাবশালীরা নিজেদের স্বার্থে খোজা পুরুষের সৃষ্টি করত । আর খোজা পুরুষদের উপর হারেমের মহিলাদের সুরক্ষার ভার দেওয়া হত । প্রাচীন চীনে এক একজন রাজা বা প্রভাবশালীদের হারেমে প্রায় ২০ হাজার করে মহিলাকে আটকে রাখা হত । ওই সমস্ত মহিলাদের মূলত জৈবিক চাহিদা মেটানো ও বিনোদনের কাজে ব্যবহার করা হত । এছাড়া রাজকীয় রক্তে অধিক পরিমাণ উত্তরাধিকার রেখে যাওয়ার উদ্দেশ্যে মহিলাদের কাজে লাগানো হত বংশবৃদ্ধির জন্যও ।
মহিলাদের অল্প বয়সে জোর করে ধরে আনা হত কিংবা পরিবারের কাছ থেকে ছিনিয়ে আনা হত । তারা যাতে কোনোভাবে পালাতে না পারে তার জন্য হারেমের পাহাড়ায় রাখা হত খোজা পুরুষদের । ওই সমস্ত পুরুষরা যাতে কোনো ভাবে হারেমের মহিলাদের সঙ্গে সহবাস না করতে পারে সেজন্য তাদের আগেই প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট করে দেওয়া হত ।
প্রাচীন চীনে খোজা করণের পদ্ধতিটা ছিল অত্যন্ত নির্মম ও বেদনাদায়ক । মূলত তিন প্রকারে খোজাকরণ হত চীনে । প্রথমত,শুধু পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলা । দ্বিতীয়ত,শুধুমাত্র শুক্রথলী কেটে বাদ দেওয়া এবং তৃতীয়ত,পুরুষাঙ্গ ও শুক্রথলী উভয়ই কেটে ফেলা । সেই সময় চিকিৎসা বিজ্ঞানও উন্নত ছিল না । ছিল না সংশ্লিষ্ট পুরুষদের অজ্ঞান করার কোনো ব্যবস্থাও । পুরুষদের হাত-পাসহ গোটা শরীর শক্ত করে বেঁধে ধারালো ছুরির সাহায্যে পুরুষাঙ্গ ও অণ্ডকোষ উভয়ই কেটে ফেলা হত । আর এই নৃশংস প্রক্রিয়াটা যতটাই অমানবিক, ততটাই যন্ত্রণাদায়ক । খোজা করার সময় প্রবল রক্তক্ষরণের পাশাপাশি তীব্র যন্ত্রণা সহ্য করতে না করতে পেরে বহু মানুষের প্রাণহানি পর্যন্ত হত । তাই মৃত্যুহার কমানোর জন্য পরবর্তী কালে পুরুষাঙ্গ রেখে শুধুমাত্র শুক্রথলী কেটে খোজা বানানোর প্রক্রিয়া শুরু হয় ।
প্রাচীন চীনে খোজাকরণের কাজটি করা মূল প্রাসাদের বাইরে কোনো নির্জন জাগগায় নির্মিত উঁচু
প্রাচীর দিয়ে ঘেরা পরিত্যক্ত ভবনের গোপন কুঠুরিতে । তবে কেউ স্বইচ্ছায় খোজা হত না । খোজা করার জন্য পুরুষ নির্বাচনের ভার বর্তাতো কোনো মন্ত্রীর উপর । রাজার সেনাবাহিনী তাকে বন্দি করে ওই পরিত্যক্ত ভবনে নিয়ে আসত । তারপর গোপন কুঠুরিতে নিয়ে গিয়ে একটা পাটাতনের উপর তাকে নগ্ন করে শোয়ানো হত । আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলা হত তার গোটা শরীর । এরপর গরম জল দিয়ে ধোওয়া হত তার যৌনাঙ্গ ও যৌনাঙ্গের আশেপাশের স্থান । অবশ করার জন্য দেওয়া হত অত্যন্ত ঝাল লঙ্কার প্রলেপ । আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা ওই ব্যক্তির দুই পা ফাঁকা করে ধরে শক্ত করে ধরে থাকত দুই সৈনিক । আরও দু’জন ধরে থাকত তার দু’হাত । ওই অবস্থায় কবিরাজ ধারালো ছুরি দিয়ে একে একে কেটে ফেলত ওই ব্যক্তির পুরুষাঙ্গ ও শুক্রথলী ।
নির্মম ওই অস্ত্রপচারের পর খোজা করার ব্যক্তির মূত্রনালিতে একটি নল প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হত, যাতে তার প্রস্রাব বের হবার রাস্তা যেন বন্ধ হয়ে না যায় । নল ছিল অনেকটা আজকের যুগের স্যালাইনের পাইপের মতো, এর ভেতর দিয়ে প্রস্রাব বের হতো ।
এদিকে প্রবল রক্তক্ষরণ ও যন্ত্রণা সহ্য করেও খোজা করা ব্যক্তি বেঁচে থাকলে তাকে ওই ঘরের ভিতরে দিন তিনেক আটকে রেখে দেওয়া হত । তার মধ্যেই মৃত্যু হত অনেকের । বেঁচে থাকলে চতুর্থ দিনে খোজা পুরুষকে প্রস্রাব করতে বলা হত । প্রস্রাব করতে পারলে অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে বলে ধরা হত । আর প্রস্রাব করতে না পারলে তিল তিল করে মৃত্যু হত ওই ব্যক্তির । তবে প্রাচীন চীনা বৈদ্যরা ধীরে ধীরে এই কাজে এতটাই দক্ষ হয়ে উঠেছিল যে খোজা করণে মৃত্যুহার নেমে এসেছিল প্রতি হাজারে একজনে । কিন্তু খোজা করা ব্যক্তিদের ওই দিনগুলি অবর্ণনীয় যন্ত্রণা সহ্য করে কাটাতে হত ।।