এইদিন ওয়েবডেস্ক,কাবুল,০৩ মে : তালিবানরা আফগানিস্তানে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়ার পর এটাই ছিল প্রথম ঈদ উদযাপন । পয়লা মে ঈদ উদযাপন করেছে আফগানিস্তানের মানুষ । কিন্তু খুশির ঈদ যেন কোনো আনন্দই বয়ে আনতে পারেনি আফগানিদের জীবনে । ঈদের দিনেও এক মুঠো অন্নের জন্য লড়াই করতে হয়েছে সে দেশের দরিদ্র মানুষদের । অর্ধাহারে অনাহারে কাটাতে হয়েছে আবালবৃদ্ধবনিতাকে । তাই শিশুদের চোখের জলে কার্যত ভেসে গেল আফগানিস্তানিদের এবারের ঈদ-উল ফিতর উৎসব ।
তালিবানরা ক্ষমতা দখলের পর প্রতিনিয়ত কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে আফগানিস্তানের সাধারন মানুষকে । কর্মসংস্থান নেই । খাদ্য নেই । ধুঁকছে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো । জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আফগানিস্তানের প্রায় ৯৫ শতাংশের বেশি মানুষ তীব্র খাদ্য সংকটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন । দেশের সিংহভাগ পরিবারের পর্যাপ্ত খাবার জুটছে না । ভয়াবহ মানবিক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে আফগানিস্তান । অনাহারক্লিষ্ট এক ব্যাক্তি জানান, আমরা বড়রা খাবার না খেয়েও কোনোভাবে থাকতে পারি। কিন্তু যখন শিশুরা খাবারের জন্য বায়না ধরে, তখন আমাদের মুখে ভাষা থাকে না । ওরা ক্ষুধার জ্বালায় যখন কাঁদে তখন বুক ফেটে যায় ৷ মরে যেতে ইচ্ছা করে ।’
আফগানিস্তানের গণস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে গত মাস পর্যন্ত প্রায় ১৩ হাজার ৭০০ নবাজাতক এবং ২৬ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছিল । আর সব মৃত্যুর ক্ষেত্রেই অনাহারকেই কারন বলে মনে করা হচ্ছে । যদিও এই দাবি মানতে চায়নি তালিবান সরকার ।
বছর ছত্রিশের এক আফগানি যুবকের কথায়,’দিন দিন আফগানিস্তানের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে । পুরো শহরের মানুষ ক্ষুধা আর দরিদ্রের সঙ্গে যুজছে । আমি যে শরণার্থী শিবিরে বড় হয়েছি সেখানেও এত খারাপ পরিস্থিতি কখনও দেখিনি । সেহেরি বা ইফতারে একটু খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য গোটা রমজান মাস জুড়ে একটা কাজের জন্য আমি হন্যে হয়ে ঘুরেছিলাম । কিন্তু কাজ জোটেনি ।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তির কথায়, ‘তালিবানরা ক্ষমতায় আসার পর থেকে আমার পরিবারের সদস্যরা কখনও পেট ভরে খাবার পায়নি । এবারের পুরো রমজানেই আমরা ইফতার করেছি শুধু জল আর রুটি দিয়ে । ঈদের দিনেও সেই একই খাবার খেয়েছি । আমাদের কাছে উৎসব এখন মূল্যহীন ।’।