প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৭ জুন : পথ আছে ।কিন্তু বেহাল সেই পথে পা ফেলাই দায় । হেঁটেও যাতায়াত করা যায় না ওই পথ দিয়ে। তাই স্কুলে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে পড়ুয়ারা। এই ঘটনা ঘটেছে ’পথশ্রী প্রকল্প’ নিয়ে বড়ই করা রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতারের গ্রামে। যা নিয়ে সমালোচনার বন্যা বওয়া শুরু হতেই শাসক দলের জনপ্রতিনিধিরা নড়ে চড়ে বসেছেন।
ভাতার ব্লকের মাধপুর গ্রাম। ভাতার মালডাঙ্গা সড়কের বড়বেলুন ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের সামনে বাঁদিক দিয়ে চলে যাচ্ছে সালুন যাওয়ার রাস্তা। প্রধানমন্ত্রী গ্রামসড়ক যোজনার প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার এই রাস্তাটি যাচ্ছে মাধপুর গ্রামের ভিতর দিয়ে। মাধপুর গ্রামের ময়রাপাড়া থেকে সংযোগকারী একটি রাস্তা চলে যাচ্ছে ভাতারের কোশিগ্রাম মেলাতলা পর্যন্ত। সেখানে বলগোনা মালডাঙ্গা রোডের সঙ্গে মিশছে।
গ্রামবাসীদের কথা অনুযায়ী, মাধপুর ময়রাতলা থেকে কোশিগ্রাম মেলাতলা পর্যন্ত রাস্তা প্রায় তিন কিলোমিটার। তার মধ্যে দেড় কিলোমিটার পড়ছে মন্তেশ্বর ব্লক এলাকার মধ্যে। প্রায় ২০ বছর আগে এই রাস্তাটি মাটি ফেলে কাজ করা হয়। কিন্তু তারপর থেকে দেখা যাচ্ছে বছর পাঁচেক আগে দেড় কিলোমিটার অংশ মন্তেশ্বর ব্লক থেকে পিচ করা হয়েছে। কিন্তু ভাতার এলাকার বাকি দেড় কিলোমিটার অংশ এখনও কাঁচা রয়ে গিয়েছে।
দু’দশকের বেশী রাস্তার কাজ হয়নি। বর্তমানে মাটির রাস্তার উপর হাঁটুভর্তি জলকাদা। যানবাহন চলাচল তো দূর অস্ত, হেঁটে যাতায়াত করা যায় না। ভাতারের মাধপুর গ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ ঘুরি সেখ বলেন, বারবার পঞ্চায়েতের কাছে আবেদন নিবেদন করেও ফল মেলেনি। আর এইু ঝড়বৃষ্টির মরশুমে আপাতত স্কুল যাতায়াত বন্ধ ছাত্রছাত্রীদের।
গ্রামবাসী জরিনা বিবি,সেখ মনিরুলরা বলেন, শীতের সময় শুকনো থাকলে তবুও যাতায়াত করা যায়। কিন্তু বৃষ্টি পড়লেই যাতায়াত করা কঠিন হয়ে পড়ে। মাটির রাস্তার উপর তৈরি হয়েছে বড় বড় খাল। তাতে জল জমে থাকছে। প্রায় কোমরসমান খাল। শুধুমাত্র এই মূল রাস্তাটি নয়, মাধবপুর গ্রামের মুসলিমপাড়া, দাসপাড়া, হাজরাপাড়া,ময়রাপাড়া প্রভৃতি পাড়ার মধ্যের রাস্তাগুলিও এখনও কাঁচা। এইসব রাস্তা গুলিরও একই অবস্থা। এমনকি মাধপুরের মুসলিম পাড়ার কাছে কবরস্থানে যাওয়ার রাস্তাটির ভয়ঙ্কর অবস্থা । মাধপুর গ্রামে মুসলিমপাড়া ও দাসপাড়ার কাছে রয়েছে একটি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। এছাড়া ছাত্রছাত্রীরা কোশিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় এবং নাসিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে যায়। বর্ষার মরশুমে ছেলেমেয়েদের যাতায়াতের সমস্যার কারণে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিতে হয়েছে। টিউশনও বন্ধ। এমনকি গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ারাও বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। প্রায় রোজই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে।
এই বিষয় বড়বেলুন ২ নম্বর পঞ্চায়েত প্রধান সুশান্ত সাহা বলেন,”মাধপুর ময়রাতলা থেকে কোশিগ্রাম রাস্তা জেলাপরিষদের। আর পাড়াগুলির মধ্যে যে রাস্তাগুলি রয়েছে সেগুলির হালহকিকত নিয়ে ওই এলাকার পঞ্চায়েত সদস্যদের পঞ্চায়েতের কাছে জানানো উচিত। সেই অনুযায়ী স্কিম পাঠানো হবে।” আমি মাধপুরের পরিস্থিতি গিয়ে দেখে আসব।”
স্থানীয় গ্রামবাসীদের অভিযোগ বারবার পঞ্চায়েতের কাছে আবেদন নিবেদন করেও রাস্তার কাজ হয়নি। বাসিন্দারা বলেন,’আমাদের পাড়ার বাসিন্দারা মিলে চাঁদা তুলে পাড়ার রাস্তায় মাটি ভরাট করেছি। বারবার পঞ্চায়েতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও বিহিত হয়নি।”ঘটনা বিষয়টি নিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, খোঁজ নিয়ে দেখছি। তবে জেলায় কোন রাস্তার এরকম অবস্থা হবার কথা নয়।’।

