এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাগদাদ,১৫ মার্চ : ক্রপ টপ (crop tops) পরা ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার অপরাধে ইরাকের প্রখ্যাত টিকটক তারকা ইমান সামি মাগদিদকে (২০) গুলি করে খুন করল তাঁর কিশোর ভাই (১৭) । আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দুই দিন আগে অর্থাৎ গত ৬ মার্চ রবিবার এরবিল শহরের একটি রাস্তায় নিজের দিদিকে লক্ষ্য করে আট থেকে নয়টি গুলি করে কট্টর ইসলাম মতাদর্শে বিশ্বাসী ওই কিশোর । ইমান সামি মাগদির হত্যাকাণ্ড ইরাকের সাম্প্রতিকতম অনার কিলিং-এর ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে । এদিকে দিদিকে খুন করার পর অন্য এক ব্যক্তির বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল ওই কিশোর । পরে হত্যাকারী ও তার আশ্রয়দাতা ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানা গেছে । যদিও তাঁদের যথাযথ সাজার বিষয়ে সন্দিহান বিশ্ববাসী ।
ইমান সামি মাগদিদ ইরাকের একজন বিখ্যাত টিকটকার ছিলেন । সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে তাঁর ৬০.২ হাজার ফলোয়ার্স ছিল । অনুগামীদের কাছে মারি বা মারিয়া নামে পরিচিত ছিলেন তিনি । ইরাকের মত এই চরম রক্ষণশীল দেশের এক তরুনী হয়েও সোশ্যাল মিডিয়ায় যথেষ্ট সাহসী ছবি এবং ভিডিও পোস্ট করাতেন মারিয়া । তার মধ্যে অন্যতম হল সিগারেট খাওয়া,ক্রপ টপ ও ক্রুশ পরা প্রভৃতি ছবি । বেশিরভাগ মানুষ তাঁর সাহসিকতার প্রশংসা করতেন । আবার কারোর সমালোচনার শিকারও হতে হত তাঁকে । তাঁর এক ফলোয়ার্স মন্তব্য করেছিলেন ‘আপনি যদি কুর্দিস্তানে ভিন্ন হওয়ার চেষ্টা করেন তবে আপনি মারা যাবেন ।’ অবশেষে ওই ফলোয়ার্সের কথাই সত্যি হল । ইসলামিক রীতিনীতি লঙ্ঘনের অপরাধে নিজের ভাইয়ের হাতেই খুন হতে হল ইমান সামি মাগদিদকে ।
প্রসঙ্গত,ইসলামিক স্টেট ও অন্যান্য সন্ত্রাসী সংগঠনের জন্মদাতা ইরাকে মহিলাদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক এবং যৌন লালসার বস্তু হিসাবে গন্য করা হয় । মহিলাদের জন্য রয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ । কোনও মহিলা বিদ্রোহী হলেই তাঁকে যৌন নিপীড়ন,গার্হস্থ্য হিংসা, যৌনাঙ্গ বিচ্ছেদের মত নৃসংসতা সহ্য করা ছাড়াও অনার কিলিংয়ের শিকার হতে হয় । এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এযাবৎ এরবিল (Erbil), সুলাইমানি (Sulaimani), দুহোক(Duhok) এবং কোয়াতে(Koya) কমপক্ষে ১০ জন মহিলাকে নৃসংসভাবে খুন করা হয়েছে । গত সপ্তাহে রুদাউ(Rudaw)-এর দুহোকের খানকে ক্যাম্পে(Khanke camp) দশ সন্তানের মাকে পর্যন্ত খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ । গত মাসের শেষের দিকে সুলাইমানিতে (Sulaimani) এক মহিলাকে তার স্বামী আগুনে পুড়েছিলেন । আর এসবই অনার কিলিংয়ের জলজ্যান্ত ঘটনা । নানা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বন্ধ হওয়া তো দূরের কথা, ইরাকের একের পর এক মহিলা অনার-কিলিংয়ের শিকার হচ্ছেন