প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৭ জুন : লোকসভা ভোটে পুর এলাকায় তৃণমূলের ভোটের ফল খারাপ হতেই কড়া পদক্ষেপ গ্রহন শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।পুকুর ভরাট থেকে শুরু করে জবর দখল ও অনৈতিক কাজে মদত দেওয়া বন্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে শুরু হয়েছে ব্যবস্থা গ্রহন।আর ঠিক এমনই আবহে বর্ধমান শহরে হয়েচলা অনৈতিক কাজ ও দুর্নীতি নিয়ে কার্যত বোমা ফাটালেন বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যান পরেশ চন্দ্র সরকার।নিজের দলের প্রভাবশালীদের নিশানা করে পরেশ সরকার বলেন, ‘শহরে এখন কাজ করাই ভীষণ কঠিন ।যেখানেই হাত দিতে যাওয়া হবে কেউটের ছোবল খেতে হবে।’ তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত পুর বোর্ডের চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্য রাজনৈতিক মহলেও শোরগোল ফেলে দিয়েছে।
লোকসভা ভোটের ফলাফলেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বর্ধমান শহর এখন পদ্ম কাঁটায় বিদ্ধ । বর্ধমান পৌর সভার ৩৫ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৯ টিতে পদ্ম ফুটেছে।আর সেটাই যেন বিড়ম্বনা বাড়িয়েছে তৃণমূল শিবিরে। যার বহিপ্রকাশ ঘটে গিয়েছে বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যানের কথাতেই । মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি নিয়ে রাজ্যজুড়ে বাড়ে পুলিশি সক্রিয়তা।এমন আবহে বুধবার বর্ধমান শহরের একটি স্কুলে অনুষ্ঠানে গিয়ে পুর চেয়ারম্যান পরেশ সরকার বর্ধমান শহরে হওয়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হন। তিনি পুলিশের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।তিনি বলেন,’যারা দুর্নীতি করে এমন মানুষের সঙ্গে বেশ কিছু অসামাজিক লোক যুক্ত থাকে। এদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। কাগজে দেখি পুলিশ খুব সক্রিয়, বালি চোরদের ধরছে। তবে ছবি দেখতে চাইলে আমি দেখাতে পারি যেখান থেকে আমাদের গ্যালারি থেকে জল উঠছে তার চারপাশে নৌকাগুলো ঘুরছে, আর মেশিনে বালি তুলছে।এরকম যদি ছ’মাস চলে তাহলে তিনশো কোটি টাকা ব্যয়ে অম্রুত প্রকল্পের গ্যালারি ভেঙে পড়বে।আর জল উঠবে না ।’ পরেশ সরকারের এমন বক্তব্য রাখার বিষয়টি রাতে জানাজানি হতেই হুলস্থুল পড়ে যায় ।
চেয়ারম্যান পরেশর এও বলেছেন, বেআইনী নির্মাণ এক জন সাধারণ মানুষ করতে পারে না। তিন তলা থেকে চার তলা এমনি করতে পারে না।নিশ্চই মদত আছে। হয় তার টাকার জন্য পারে,না হয় কারো মদত আছে। পুকুর ভরাট ’খুব লাভ জনক’ ব্যবসা।একটা পাঁচ কাটা ছ’কাটা পুকুর যদি ভরাট করতে পারে তাহলে এক কোটি টাকার সম্পত্তি। কোন রকমে ভরাট করতে পারলেই হল। অথচ ডোবাটা থেকে তার কিছু রিটার্ন নাই।এখন এই ’কুয়েদের’ কাছেই ভীড়।তারা বেআইনি নির্মাণ করিয়ে দিতে পারে, তারা বেআইনিভাবে পুকুর ভরাট করিয়ে দিতে পারে, সরকারি জমি দখল করিয়ে দিতে পারে। রাস্তাঘাট হাঁটার অযোগ্য হয়ে পড়া নিয়েও তিনি মুখ খুলেছেন। তিনি বলেন,সবকিছুতেই দুর্নীতিতে ভরে গেছে। জিটি রোডের পাশে সুন্দর করে পাথরের ফুটপাত তৈরি করা হলো। কিন্তু সব ফুটপাত বন্ধ।ফুটপাত জুড়ে চলছে রান্না খাওয়া-দাওয়া থাকা। আর ধরতে গেলেই বলছে পেটে লাথি মারছে।
এই সব কিছুতেই কারোর না কারোর লোকের মদত আছে বলেও দাবি করেছেন বর্ধমান পৌরসভার চেয়ারম্যান পরেশ চন্দ্র সরকার।তাঁর কথায়,জেলখানা মোড় হয়ে বর্ধমান ইউনিভার্সিটির হোস্টেল মোড় অবদি গেলে দেখা যাবে দু’পাশে দোকান বসে গেছে।এরা কারা? এরা কেউ বর্ধমানের লোক নয়, বাইরে থেকে এনে টাকার বিনিময়ে তাদের বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদের বসার কারণেই যানজট হচ্ছে।তার জন্যেই সাধারণ মানুষ অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। তাদের ধরতে গেলে দেখাযাবে এক একটা ’কেউটে সাপের’ বাচ্চা ।কেউ বলে আমার পিছনে অমুক কাকা আছে।
আবার কেউ অমুক দাদা আছে, অমুক মামা আছে, সবার পিছনেই একটা না একটা লোক আছে। শুধ আমার পিছনে কেউ নেই। কাজ করাই এখন ভীষণ কঠিন। যেখানেই হাত দিতে যাওয়া হবে ছোবল খেতে হবে বলেও ক্ষোভ উগড়ে দেন বর্ধমান পৌরসভার চেয়ারম্যান পরেশ চন্দ্র সরকার।
বিল্ডিং নিয়ে তিনি বলেন ’ছিল জি প্লাস ফোর।একতলা বাড়ি ফাইভ হয়ে গেল।একতলা বেড়ে গেল। পাঁচ ছটা ফ্লাট বেশী হয়ে গেল। ধরতে গেলে এমন সব লোকের নাম বলছে।আইন ভঙ্গকারী হিসেবে চিহ্নিত হলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না।পরেশ বাবু জানান,“মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন বলে এই নিয়ে মিটিং করেছি। আমরা একটা রূপরেখা তৈরি করে অন্যায় যা হয়েছে তার প্রতিবিধান করার চেষ্টা করবো ।’ যদিও জেলা বিজেপির সভাপতি অভিজিৎ তা বলেন, ‘শাসকদলের গোষ্ঠী কোন্দল আর সব জায়গাতেই। আর ভাগ নিয়ে সমস্যা। তাই উনি এসব বলছেন।’।