প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২০ জুন : প্রসূতি পুত্র সন্তানের জন্ম দিলে দিতে হবে ৫০০ টাকা। আর কন্যা সন্তান হলে দিতে হবে ৩০০ টাকা।এমনই ফতোয়া জারি করার অভিযোগ উঠেছে পূর্ব বর্ধমানের কালনা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের লেবার রুমের ওয়ার্ড গার্লদের বিরুদ্ধে।ফতোয়া জারির বিষয়টি নিয়ে সোমবার তীব্র ক্ষোভ উগরে দেন হাসপাতালে থাকা প্রসুতি ও তাঁদের পরিজনরা ।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদিও জানিয়ে দেন,এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলেই তাঁরা কড়া ব্যবস্থা নেবেন ।
কালনা মহকুমার মানুষজন যাতে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা পান সেই লক্ষে রাজ্য সরকারের অর্থানুকুল্যে তৈরি হয় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল।চিকিৎসা পরিষেবা পেতে নদীয়া ও হুগলী জেলার একাংশ মানুষও ওই হাসপাতালে হাজির হন।এমনই এক গুরুত্বপূর্ণ সরকারী হাসপাতালের লেবার রুমের ওয়ার্ড গার্লদের ফতোয়া জারির বিষয়টি হাসপাতালের বদনাম করছে বলে মনে করছেন কালনাবাসী।তারা ওয়ার্ড গার্লদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবীতে সরব হয়েছেন।
কালনা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে এদিন হাজির থাকা এক প্রসুতি পরিবারের সদস্য নিরা হেমব্রব বলেন ,প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে তাঁদের বাড়ির মেয়ে কয়েকদিন আখে কালনা হাসপাতালে ভর্তি হয়। সন্তান প্রসব হওয়ার পর লেবার রুম থেকে বেরিয়ে নীল পোষাক পরে থাকা তিন মহিলা তাঁর কাছে এসে ৩০০ টাকা চায় । ওই মহিলারা তাঁকে জানায়,পুত্র সন্তান জন্মালে ৫০০ টাকা , আর কন্যা সন্তান হলে ৩০০ টাকা ওদের দিতে হবে। নিরা হেমব্রম জানান ,তাঁদের বাড়ির মেয়ের কন্যা সন্তান হয়েছে বলে তিনি নীল পোষাক পরে থাকা ওই মহিলাদের ২০০ টাকা নিতে অনুরোধ করেন।কিন্তু ওরা স্পষ্ট জানিয়ে দেয় ২০০ টাকায় হবে না ,৩০০ টাকাই দিতে হবে। শেষপর্যন্ত ৩০০ টাকাই ওরা তাঁর কাছ থেকে আদায় করে ছাড়ে বলে নিরাদেবী জানিয়েছেন ।
একই অভিযোগ করেছেন নদীয়ার শান্তিপুর থেকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অপর এক প্রসুতির পরিবারে সদস্য হাওয়া বিবি । তিনি বলেন ,নীল পোষাক পরে থাকা লেবার রুমের ওই ওয়ার্ড গার্লরা সব প্রসুতির পরিবারের কাছ থেকেই টাকা আদায় করছে । যাঁদের ছেলে হয়েছে তাঁদের কাছথেকে ৫০০ টাকা আদায় করেছে ।আর তাঁদের মেয়ে হয়েছে তাবলে ৩০০ টাকা নিয়েছে।সরকারী হাসপাতালে সন্তান প্রসব করতে আসা প্রসুতির পরিবারকে কেন টাকা দিতে হবে তার উত্তর নীল পোষাক পরা ওই মহিলারা তাঁকে দিতে চায় নি। হাওয়া বিবি জানান ,প্রসুতি কিংবা তাঁর সন্তানের যদি কোন ক্ষতি করে দেয় এই ভয়ে তাঁরা টাকা আদায়ের ঘটনার কথা কাউকে জানানোর শাহস পান নি ।এই দুই মহিলা ছাড়াও কালনার সমুদ্রগড় নিবাসী প্রসুতি পরিবারের সদস্য পার্বতি বিশ্বাস বলেন ,গত শনিবার তাঁদের বাড়ির মেয়ে কালনা হাসপাতালে কন্য সন্তানের জন্ম দেয়। তার পরেই তাঁর কাছে এসে ৩০০ টাকা দাবী করে নীল পোষাক পরে থাকা হাসপাতালের মহিলা কর্মীরা। তাঁর কাছে ২০০ টাকা ছিল সেটা দিয়ে আর টাকা দিতে পারবেন না বলে তিনি ওদের জানান । কিন্তু নীল পোষাক পরে থাকা ওই মহিলা কর্মীরা ষ্পষ্ট জানিয়ে যায় প্রসুতির ছুটি হওয়ার আগে বাকি ১০০ টাকা তাদের দিয়ে যেতেই হবে।এক প্রকার জুলুমবাজি করেই কালনা সুপার স্পেশালিটি সাসপাতালের লেবার রুমের ওয়ার্ড গার্লরা টাকা আদায় করছে বলে প্রসুতি পরিবারের সদস্যরা এদিন অভিযোগ করেছেন ।
এই বিষয়ে কালনা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার সুব্রত সামন্ত জানিয়েছেন,কোনো প্রসুতির পরিবার এখনো এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি। তবে অভিযোগ যখন উঠেছে তার তদন্ত হবে । অভিযোগের সত্যতা মিললে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।’।