এইদিন ওয়েবডেস্ক,তেহেরান,০২ এপ্রিল : গত বছরের সেপ্টেম্বরে হিজাব না পরার অপরাধে ২২ বছরের তরুনী মাহসা আমিনিকে হেফাজতে নিয়ে পিটিয়ে মেরেছিল ইরানের নৈতিকতা পুলিশ । তারপর থেকেই ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু সৈয়দ আলী হোসেইনী খামেনেয়ীর কট্টর মৌলবাদী আদর্শে পরিচালিত সরকারের পতনের দাবিতে তুমুল বিক্ষোভ চলছে দেশ জুড়ে । এরই মাঝে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে চরম হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান গোলাম হোসেন মোহসেনি এজেই বলেছেন,’হিজাব না পরলেই নির্দয়ভাবে বিচার করা হবে ।’ তার কথায়, ‘হিজাবহীনতা আমাদের মূল্যবোধের সঙ্গে শত্রুতা করার সমতুল্য। তাই যারা হিজাব ছাড়াই বাইরে বের হচ্ছে তাদের প্রতি কোনো ধরনের দয়ামায়া দেখাবে না আদালত ।’
মোহসেনি এজেই বলেন,’যেহেতু কিছুদিন ধরে অনেক মহিলা ইরানের বাধ্যতামূলক পোশাক কোডকে অমান্য করে চলছেন, তাই তাদেরকে সতর্ক করা হচ্ছে । হিজাব ছাড়া জনসমক্ষে উপস্থিত মহিলাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে, শাস্তি দেওয়া হবে কোনো ধরনের নমনীয়তা ছাড়াই ।’ তবে ঠিক কি ধরনের শাস্তির মুখে পড়তে হবে আন্দোলনকারী মহিলাদের তা তিনি স্পষ্ট করেননি ।
যদিও ইরানের ইয়াজদ প্রদেশে নিজের নির্বাচনী এলাকায় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময়, হোজ্জাত ওল-ইসলাম হোসেন জালালি নামে এক নেতা গত রবিবার বলেছিলেন যে আইন অনুসারে হিজাব লঙ্ঘনের শাস্তির মধ্যে ৫ মিলিয়ন থেকে ৩০ বিলিয়ন রিয়াল (প্রায় ১০০ থেকে ৬০,০০০ ডলার ) এবং অন্যান্য নগদ জরিমানা অন্তর্ভুক্ত থাকবে । জরিমানাগুলির মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং পাসপোর্ট প্রত্যাহার বা সেলিব্রিটি এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্রভাবশালী এবং ব্লগারদের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে ।
তিনি বলেন, এই জরিমানাগুলি সেই সমস্ত মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে যারা যানবাহনে, রেস্তোরাঁয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানে, স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে,বিমানবন্দরে এবং পাবলিক ট্রান্সপোর্ট টার্মিনালে,সাইবারস্পেসে, সেলিব্রিটিদের সাথে এবং রাস্তায় বা অন্যান্য পাবলিক ময়দানে চলার সময় হিজাব নিয়ম মেনে চলবেন না ।
প্রসঙ্গত,ইরানের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী মহিলাদের চুল হিজাব এবং ঢিলেঢালা পোশাক দিয়ে ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক । নিয়ম লঙ্ঘনকারীদের তিরস্কার, জরিমানা বা গ্রেপ্তারের মতো সাজার মুখোমুখি হতে হয়।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে । ভিডিওতে দেখা গেছে দুই তরুনী একটি দোকানে কেনাকাটা করতে গেছেন । কিন্তু তাদের চুল খোলা ছিল । একজন পুরুষ এসে তাদের মধ্যে এক তরুনীর সঙ্গে বচসা শুরু করে । তারই মাঝে দোকানে থাকা দই দুই তরুনীর মাথায় ঢেলে দেয় ওই পুরুষ । তখন তরুনীর সাথে থাকা একজন পুরুষ হামলাকারীকে ধাক্কা দিয়ে দোকান থেকে বের করে দেয় । আর সমগ্র ঘটনাটি দোকানের সিসিটিভি ক্যামেরায় রেকর্ড হয়ে যায় । জানা গেছে,হামলাকারী পুরুষটি আদপে ইরানের নৈতিকতা পুলিশের এক সদস্য । পরে দুই তরুনীকে হিজাব বিধি পালন না করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় ।।