এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৫ ডিসেম্বর : বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর সংখ্যাগুরু মুসলিমদের অবর্ণনীয় অত্যাচারের প্রতিবাদে গোটা দেশের হিন্দু সমাজের সিংহভাগ হবে ফুঁসছে। পশ্চিমবাংলায় বিজেপি লাগাতার সভা,সমাবেশ ও মিছিল করে যাচ্ছে বাংলাদেশের হিন্দু নির্যাতনের প্রতিবাদে । দিন দুয়েক আগে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বনগাঁয় পেট্রোপোল সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছিল বিজেপি সহ হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যরা । ওই ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার শুভেন্দু অধিকারী কলকাতাতে বলেন, ‘নৌকা, লঞ্চের যন্ত্রাংশ ভারত দেয় । একদিন শুধু পেট্রোপোল বন্ধ করেছিলাম । ৪০ গাড়ি পেঁয়াজ পচে গেছে । একদিনে হালুয়া টাইট । এক্সপোর্টার ইমপোর্টাররা বলছে সবাই হিন্দু । সবাই হিন্দুদের বাঁচাতে চায় । বলছি ৭ টা দিন আটকে দিতে পারলে না এদের কি অবস্থা হয় দেখবেন । বাংলাদেশের লোক গিয়ে ইউনূসের চামড়া তুলে নিয়ে আসবে। আপনাদের কিছু করতে হবে না৷ করব আমরা । রাজনীতি পরে হবে । আগে তো হিন্দুর বাচ্চা৷ আমাদের সব হিন্দুকে এক হতে হবে ।’
বাংলাদেশে হিন্দু অত্যাচার, চিন্ময়কৃষ্ণ ব্রহ্মচারী সহ সন্ন্যাসীদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুদের উপর অত্যাচারে বিপন্ন সনাতনীদের রক্ষার্থে শুভেন্দু অধিকারী ও সন্ত সমাজের উপস্থিতিতে কলকাতায় রাণী রাসমণি রোডে আজ বিকালে জনসমাবেশ হয়।
সভায় বক্তব্য রাখার সময় বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘বাঙালি হিন্দুরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি ৷ এখনো ঐক্যবদ্ধ হয়নি ৷ ভাবছেন শ্যামপুরে মেরেছে বাগনানে তো কিছু হয়নি । বাউড়িয়ায় ঢিল মেরেছে উলুবেরিয়ায় তো কিছু হয়নি । বেলডাঙ্গাতে কার্তিক পুজোয় ভেঙেছে কিন্তু কাটোয়া ও কালনাতে তো কিছু হয়নি । তাই মহারাজরা বলছিলেন বাঙালি হিন্দু তোমরা এক হও । কারণ রাজস্থানের হিন্দুরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে । উত্তর প্রদেশের হিন্দুরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে । যোগীজির বাণী গ্রহণ করেছে হরিয়ানা.. বাটেঙ্গে তো কাটেঙ্গে এক রহেঙ্গে তো সেফ রহেঙ্গে৷ মহারাষ্ট্র ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের মাটি, ঐক্যবদ্ধ হয়েছে ।’
তিনি বলেন,’আমি তো আমার নির্বাচন ক্ষেত্রে হিন্দুদের এক করে ফেলেছি । ২০২১ সালে মমতা ব্যানার্জি আমাকে হারাতে গিয়েছিল, ২৫ ভাগ মুসলমান ৬৫ হাজার ভোট, আমার ৭৫ হাজার হিন্দু নানাভাবে বিভক্ত, আমি বললাম হিন্দু তুমি এক হও মমতাকে হারাতে হবে ।’
তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের এরাজ্যে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ তুলে বলেন,’রোহিঙ্গা মুসলমান ঢুকিয়ে বাংলা ধ্বংস করছে । ৭২ টা জায়গায় বিএসএফকে বেড়া করতে দেয় না । পশ্চিমবঙ্গে পুজো করতে গেলে হাইকোর্টে যেতে হয় । গেরুয়া ধ্বজ নিয়ে বের হওয়া যায় না । জয় শ্রীরাম নাকি খারাপ শব্দ! যারা রামনবমী করে স্বয়ংসেবক সংঘ, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ প্রভৃতি সনাতন সংগঠন নাকি দাঙ্গাবাজ । পশ্চিমবঙ্গে এ কথা কোন ধর্মীয় সংগঠন বলে না…সরকার বলে… সরকারের প্রধান বলে…রেডরোড থেকে বলে । তাই আমি ওখানে ৬৫ ভাগ হিন্দুকে এক করেছিলাম৷ ১৯৫৬ ভোটে মমতা ব্যানার্জিকে হারিয়েছে । এবারের লোকসভা ভোটে নন্দীগ্রামে বাহাত্তর ভাগ হিন্দু এক হয়েছে । অভিজিৎ গাঙ্গুলী শুধু নন্দীগ্রাম থেকে ৮২০০ ভোটে লিড পেয়েছে চারগুণ ভোট বাড়িয়ে৷’
উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘কবে আপনারা এক হবেন ? আমি বিধানসভায় বলেছি ওয়াকফ বোর্ড থাকলে সনাতন বোর্ড নয় কেন ? সনাতন বোর্ড করতে হবে । ওরা বলছিল ওদের দুই এম এল এ কেরালায় আছে ইউপিতে আছে, আমি বলি ভারতে করতে হবে সনাতন বোর্ড৷ কেন লাভ জিহাদের বিরুদ্ধে আইন হবে না ? কেন ধর্ম পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আইন হবে না ? কেন এনআরসি হবে না ? কেন নাগরিক পঞ্জি তৈরি হবে না ? কেন যোগীজি এবং হেমন্তজি যা করেছেন এবং করছেন… গো মাতার সম্মান রক্ষা করেছেন হেমন্ত বিশ্বাস শর্মা, আমার বাংলায় কেন হবে না ? তাই ল’মেকারদের পাঠাতে হবে । হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে । এ লড়াই চলছে এ লড়াই চলবে৷’
পাশাপাশি শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর শৌর্য দিবস পালন করার আহ্বান জানান শুভেন্দু অধিকারী । তিনি জানান, আগামীকাল বিকেলে কলকাতায় তার উপস্থিতিতে বর্ণাঢ্য মিছিল বের হবে । মিছিল শুরু হবে শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে । শেষ হবে সিঁথির মোড়ে ।।