এইদিন ওয়েবডেস্ক,দক্ষিণ ২৪ পরগনা,২৪ ডিসেম্বর : “বাংলাদেশের মুসলিমরা যদি বাবরি মসজিদের জন্য টাকা পাঠাতে পারে তাহলে আমরাও এরাজ্যের সনাতনীরা দিপু দাসের পরিবারে কে অর্থ সাহায্য করবো”- বললেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । আজ বুধবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ডায়মন্ড হারবার মহকুমার সাগর বিধানসভার মথুরাপুরে ‘পরিবর্তন সংকল্প সভা’য় যোগ দিয়েছিলেন তিনি । সভা শেষের সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’আমি দিপু দাসের বাবার সঙ্গে ভিডিও বার্তায় কথা বলেছি৷ তার ভাই বলেছে যে আকাশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট নাম্বার দেবে৷’ এরপর তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মুসলিমরা যদি বাবরি মসজিদের জন্য টাকা পাঠাতে পারে তাহলে আমরাও এ রাজ্যের সনাতনীরা দিপু দাসের বাড়িতে টাকা পাঠাবো ৷’
এর আগে মঙ্গলবার শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, ‘দিপু দাসের পরিবারের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়েছে । আগামীকাল ভিডিও কনফারেন্সে আমি ওই পরিবারের সঙ্গে কথা বলব । দিপু দাসের পরিবারের অনেক paytm নাম্বার ঘুরে বেড়াচ্ছে । ভারত থেকে অনেকে অর্থ দিতে চান । বাংলাদেশে একমাত্র paytm এ ভারত থেকে অর্থ দেওয়ার অনুমতি আছে । একটা রেমিটেন্স কেটে নেয় । বাকি ব্যাংকিং ট্রান্সফারেবল নয়, কারণ ফরেন মানিতে পড়ে যাবে । সে ক্ষেত্রে দিপু দাস এর পরিবার কেউ আমি অফার করব যে তার স্ত্রী এবং বাবা মার জন্য প্রত্যেক মাসে আমরা অর্থ দেবো । তাদের বাড়ি থেকে অরিজিনাল পেটিএম নম্বরে এনে আমি আপিলও করব গোটা পৃথিবীর হিন্দুরা যেন তাদেরকে অর্থ সাহায্য করে৷ আমরাও দেখতে চাই, এর শেষ আমরা দেখতে চাই ।’
প্রসঙ্গত, দিনতে অনেক আগে বাংলাদেশের ময়মনসিংহের ভালুকার একটি পোষাক কারখানার কর্মী দিপু চন্দ্র দাসকে ধর্মনিন্দার মিথ্যা অভিযোগে নির্মমভাবে পিটিয়ে আধমরা করার পর গাছে ঝুলিয়ে জীবন তো পুড়িয়ে মেরে দেওয়া হয় । সেই দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে শিহরিত হয়ে ওঠে গোটা বিশ্ব ৷ ময়মনসিংহের ওই হিন্দু যুবককে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনায় এখনো পর্যন্ত দশ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গেছে । কিন্তু তাদের চরম শাস্তি দেয়া হবে কিনা এ নিয়ে ধন্দ্ব থেকেই যাচ্ছে৷ আজ বুধবারেও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে এই নিশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি । বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকা বনগাঁয় কাঁটাতারের বেড়ার কাছে বিক্ষোভ দেখায় বেশ কিছু মহিলা ও পুরুষ৷
তবে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নির্যাতনের পুরনো ইতিহাস রয়েছে । পরিসংখ্যান বলছে, ওপার বাংলায় সংখ্যালঘুদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। অগাস্ট, ২০২৪ থেকে জুলাই, ২০২৫ পর্যন্ত বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর প্রায় ২,৪৪২টি হামলার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে ১৫০-র বেশি মন্দির। সম্প্রতি ময়মনসিংহে দীপুচন্দ্র দাসকে পিটিয়ে, পুড়িয়ে মারার ঘটনা সেই আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়েছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ ও দীপুর হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে রবিবারই বিবৃতি দিয়েছিল ভারত। কিন্তু তা নিয়ে পালটা বিবৃতি দিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল বাংলাদেশ। ওই বিবৃতিতে ঢাকা জানিয়েছিল, ময়মনসিংহের ঘটনা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। ভারত এটিকে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা বলে দেখাচ্ছে। যদিও দিল্লির সাফ দাবি, বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে এবং ভারতবিরোধী অপপ্রচার বন্ধ না হলে সম্পর্কের বরফ গলার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এখন দেখার, ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকার বন্ধুত্বের হাত বাড়ায় নাকি সংঘাতের পথেই অনড় থাকে।।

