এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১১ মার্চ : ‘ভুয়া ভোটার’ নিয়ে বর্তমানে তোলপাড় চলছে রাজ্যে । বিজেপি বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের ভোটার কার্ড করে দেওয়ার অভিযোগ শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছে । অভিযোগের সপক্ষে তারা কিছু প্রমানও দিয়েছে । তবে অনুপ্রবেশ যে প্রবাহে ঘটছে তার তুলনায় সংখ্যাটি নগন্য ৷ আর পূর্ব বর্ধমান জেলার তৃণমূলের এক বিধায়ক ও হাওড়ার একজন তৃণমূল নেত্রী তো বাংলাদেশিদের ভোটার কার্ড করে দেওয়ার পক্ষে প্রকাশ্যে জোরালো সওয়াল করেছিলেন । সঙ্গত কারনেই বিজেপির এই অভিযোগ অমূলক নয় । কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নির্দেশে তৃণমূলের বিধায়ক ও নেতারাও ভুয়ো ভোটার ধরতে আসরে নেমে পড়েছে । এই বিষয়ে মমতার উদ্দেশ্য স্পষ্ট নয় । কারন অনেকাংশে দেখা গেছে যে তাদের দলীয় পর্যবেক্ষণে যেসমস্ত ভুয়া ভোটার ধরা পড়ছে তা তাদের দলেরই সমর্থক । তাই তৃণমূলের ভুয়ো ভোটার ধরার অভিযানকে রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কটাক্ষ, ‘ডুপলিকেট এপিকের নাম করে তৃণমূল জল ঘোলা করার চেষ্টা করছে’ ।
ভুয়া ভোটার নিয়ে তৃণমূল-বিজেপির এই দড়ি টানাটানির মাঝেই আজ মঙ্গলবার দিল্লির নির্বাচন কমিশন অফিসের বেশ কিছু দাবি জানিয়ে আসেন সুকান্ত মজুমদাররা । তার সঙ্গে ছিলেন দলের সর্বভারতীয় আইটি ইনচার্জ অমিত মালব্য । তারা আজ কমিশনের কাছে এমন কিছু দাবি তুলেছেন যদি রাজ্যে ২০২৬ সালের ভোটের আগে কমিশন সেই মোতাবেক কাজ শুরু করে তাহলে বিপাকে পড়তে পারে এরাজ্যের শাসকদল । তাদের প্রথম দাবি হল, বাংলাদেশি রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া । অমিত মালব্যর কথায়,’বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার । তাদের ভোটার লিস্টে নাম তুলে বৈধতা দেওয়ারও কাজ করেছে । আমরা কমিশনের কাছে এই সমস্ত ভোটারদের চিহ্নিত করার জন্য দাবি জানিয়েছি ।’
শুধু তাইই নয়,ডুপলিকেট পরিচয়, মৃত ভোটারের নাম বাদ,ভুয়া ভোটার চিহ্নিতকরণ,একাধিক রাজ্যে ভোটার কার্ড প্রভৃতিসহ বিভিন্ন অসঙ্গতি ভোটার লিস্ট থেকে দুর করার জন্য কমিশনের কাছে রাজ্যের জেলা অনুযায়ী তথ্য তুলে দিয়েছেন বলা জানান সুকান্ত মজুমদার । তবে তিনি যে মারাত্মক দাবি তুলেছেন সেটা হল ‘বায়োমেট্রিক ডেটা সংযুক্ত’ করে দেওয়া । যাতে ভুয়া ভোটার রোখা অনেকাংশেই সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তিনি।।
সুকান্ত মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, শুধুমাত্র কোচবিহারে এক লাখ ১১ হাজারেরও বেশি ডাবল এনট্রি আছে , জলপাইগুড়িতে ৫১ হাজার, সব মিলে এরাজ্যে ১৩ লক্ষ ৩ হাজার ৬৫ টা ডবল এন্ট্রি ভোটার লিস্ট আছে । যাদের অন্য জায়গায় রিপিট হয়েছে অর্থাৎ ডুবলিকেট নাম আছে ।’ তার অভিযোগ,’এটা মমতা ব্যানার্জি তার পকেটের অফিসার দিয়ে তৈরি করেছেন । পশ্চিমবঙ্গের যে সিইও অফিস আছে সেটি তৃণমূল কংগ্রেসের দ্বিতীয় একটা অফিস । সেই অফিসকে দিয়ে,তার নিচে বিডিও, এসডিও এবং সেখানে প্রচুর পরিমাণে চুক্তিভিত্তিক কর্মীদেরকে দিয়ে এই কাজটা করানো হয় । তারা এই নামগুলোকে ঢুকিয়েছে।’
তিনি বলেন,’শুধু তাই নয়, মমতা ব্যানার্জি এপিক নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছেন তার তথ্য আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে তুলে ধরেছি । অন্যান্য রাজ্যে যে ৩২৩ টা এপিক নাম্বার খুঁজে পাওয়া গেছে তাদের এপিক কার্ড এ রাজ্যেও আছে । আমাদের রাজ্যে এমন ৭ হাজার ২৩৫ খানা ভোটার কার্ড আছে যাদের এপিক নাম্বার একই কিন্তু ব্যক্তি আলাদা । যদিও এই বিষয়টা নিয়ে মমতা ব্যানার্জি জল ঘোলা করার চেষ্টা করছেন । কিন্তু সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই ১৩ লক্ষ এন্ট্রি । যাদের সমস্ত তথ্য মিলে যাচ্ছে ।’
সুকান্ত মজুমদার বলেন,’নির্বাচন উত্তর এবং নির্বাচন পূর্ব সময়ে হিংসার কারণে ভোটার রোলের সংশোধন সম্ভব হচ্ছে না ৷’ তিনি পশ্চিমবঙ্গের ভোটার লিস্টে ব্যাপক রিভিউ করার দাবি তুলেছেন । সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সুকান্ত মজুমদার বলেন,’ডুবলিকেট এপিকের নাম করে তৃণমূল জল ঘোলা করার চেষ্টা করছে । ভোটার লিস্ট সিইও তৈরি করে । সিইও নিয়োগ করে রাজ্য সরকার । সিইওর নিচে কাজ করে জেলাশাসক । জেলাশাসকের নিচে কাজ করে এসডিও ও বিডিও । এদের সবাইতো দিদিমনির লোক । দিদিমণি আমাদের রাজ্যে এমন আইএস অফিসারদেকে বছরের পর বছর ধরে সানটিং করে রেখেছেন, ডিএম হতে দেননি, যারা দিদিমনির কথা শোনে না ৷ আমি নাম ধরে বলে দিতে পারি । অতএব তিনি নিজের বংশবত অফিসারদের পছন্দের জায়গাতে বসান । নির্বাচন কমিশনের উপর যে আরোপ লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, তার কোন চান্সই নেই , পুরোটাই রাজ্য সরকারের হাতে।’
সুকান্ত মজুমদার বলেন,’আমি মমতা ব্যানার্জিকে প্রস্তাব দিচ্ছি যে ভোটার কার্ড এবং বায়োমেট্রিক ডেটা অ্যাড করে দেওয়া হোক । আঙুল ও রেটিনা স্ক্যানিংয়ের পর ভোটারদের ঢুকতে দেওয়া হোক বুথে । আমরা তাতে রাজি আছি । কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের হিম্মত হবে না । কারন তৃণমূল কংগ্রেস জানে যে তারা ছাপ্পক দিয়ে জেতে । বায়োমেট্রিক করে দিন, বায়োমেট্রিক ডেটা নিয়ে ভোটার কেন্দ্রে ঢুকুক ।’ কিন্তু সুকান্তদের এই দাবি রাজ্য সরকার আদপেই মানবে কিনা তা নিয়ে বিস্তর সংশয় আছে ।।