এইদিন ওয়েবডেস্ক,সন্দেশখালি,৩১ ডিসেম্বর : উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের সন্দেশখালীতে প্রায় এক বছর পর পা রাখেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি । বিগত লোকসভা নির্বাচনে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল জিতলেও সন্দেশখালির বিধানসভাভিত্তিক ফলে পিছিয়ে যায় মমতা ব্রিগেড । অবশ্য তার আগে শেখ শাহজাহান,শিবু সর্দারদের “পিঠে বানানো” র নামে পার্টি অফিসে ডেকে মহিলাদের যৌন শোষণের মত গুরুতর অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় হয়ে উঠেছিল রাজ্য রাজনীতি ৷ তৃণমূল কংগ্রেস পিছিয়ে যাওয়াকে সেই ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসাবে দেখা হচ্ছে । তাই সোমবার সন্দেশখালির হিন্দুদের মন জয় করতে কোনো কসুর করেননি মমতা ব্যানার্জি । ওইদিন মোট ১১৩ কোটি টাকার প্রকল্প উদ্বোধন করছেন সন্দেশখালি থেকে। বক্তব্য রাখতে গিয়ে শুরুতেই একের পর এক বড় ঘোষণা করতে দেখা যায় তাঁকে। তার মধ্যে অন্যতম হল সন্দেশখালীতে “সন্দেশ হাব” গড়ে তোলা ।
সভায় বক্তব্য রাখার সময় সন্দেশখালির নামকরণ নিয়েও কৌতূহল প্রকাশ করতে দেখা যায় মমতা ব্যানার্জিকে। কেন এমন নাম তা বোঝার চেষ্টা করেন। সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে বলেন,’সন্দেশখালির নাম সন্দেশের সঙ্গে জড়িত। এখানে কি আগে সন্দেশ পাওয়া যেত?’ তারপরই বলে ওঠেন,’সন্দেশখালিতে আরও সন্দেশের দোকান হবে ।’
আজ মঙ্গলবার সন্দেশখালীতে পালটা জনসভা করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তিনি সন্দেশখালিতে “সন্দেশ হাব” গড়ে তোলার বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যকে বিদ্রুপ করে বলেছেন,’সন্দেশখালীতে নাকি সন্দেশ হাব হবে । কি জানে মুখ্যমন্ত্রী ? তাহলে জেলিয়াখালীতে জেলি হাব হবে । ওপারে গোসাবায় তাহলে গো সাপের হাব হবে । বলছে সন্দেশখালি… সন্দেশ । আর ডিএমগুলোও বলিহারি… হ্যাঁ ম্যাডাম, হ্যাঁ ম্যাডাম, হ্যাঁ ম্যাডাম । এখানে সন্দেশ পাওয়া যায় ? হ্যাঁ ম্যাডাম । সন্দেশের হাব করব… হ্যাঁ ম্যাডাম । সন্দেশের দোকান করবো… হ্যাঁ ম্যাডাম ।’ শুভেন্দুর কথায়,’এক উন্মাদ হেলিকপ্টার নিয়ে কাল এখানে এসে তার গায়ের ছাল ঝেড়েছে ।’
পাশাপাশি বিধবা ভাতা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । শুভেন্দু বলেছেন,’কালকে আপনাদের বলে গেছেন… আমার ভাবতে খারাপ লাগে মায়ের জাত আপনারা । ৬০ বছরের পরে বিধবা ভাতা দেব । ছিঃ ছিঃ ছিঃ ছিঃ । এ কি রকম মুখ্যমন্ত্রী!
ভাবা যায় ইনি মহিলা মুখ্যমন্ত্রী ? ৬০ বছরের পরে সবাইকে বিধবা ভাতা দেব ! কোন রাজ্যে আছেন আপনি?’ তিনি বলেন,’এই মুখ্যমন্ত্রীর গুণের শেষ নেই । কখনো বলে ১৫০০ কেজি ওজনের বাচ্চা জন্মগ্রহণ করে । পনেরশো কেজি ! কাঞ্চন মল্লিকের বাচ্চার জন্মগ্রহণ করেছে, ছয় লক্ষ টাকায় বিল জমা দিয়েছে বিধানসভায় । কখনো বলে ১১৭৭ টা দেশ ৷ ১৯৪৭ সালে নোয়াখালীর দাঙ্গার সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাকি গান্ধীজিকে ফলের রস খাইছিলেন । আর, আমি তো জানি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৪১ সালে মারা গেছেন । কালকে এখানে আপনাদেরকে বলে গেছে ৬০ এর পরে সবাইকে বিধবা ভাতা দেব ।’
মমতা ব্যানার্জিকে নিশানা করে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’আর, এই যে দু লক্ষ আটচল্লিশ হাজার ভাতা দিচ্ছেন, এ ভারত সরকারের, এনএসএপি বা ন্যাশনাল সোশ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম । অটল বিহারি বাজপেয়ি চালু করেছিলেন । তখন ছিল ৪০০ টাকা । ৩০০ দিত দিল্লি আর ১০০ দিত রাজ্য । এখন হয়েছে এক হাজার । ২০০ দেয় রাজ্য ৮০০ দেয় ভারত সরকার । এত মিথ্যা ?’
শুভেন্দু উপস্থিত জনতাকে সতর্ক করে বলেন,’ওই আকাশ রানীর ফাঁদে পা দেবেন না। এখান থেকে বাংলাদেশ কত দূরে ? একদম কাছে সাতক্ষীরা । যেখানে শেখ শাহাজাহান চাল পাচার করতো, গরু পাচার করত । একদম কাছে ৷ বর্ডারে এসে গেছি আমরা । খবর আছে তো কি হচ্ছে সেখানে ? আত্মীয়-স্বজন আছে ? মন্দিরগুলো আছে ? হিন্দুদের বাড়ি ঘর দুয়ার আছে ? মহিলারা শাঁখা পলা পড়তে পারছে ? পুরুষরা গলায় কন্ঠে রাখতে পারছে ? মাথায় চন্দন লাগিয়ে রাখতে পারছে ? মাথায় শিখা রাখতে পারছেন ? ধুতি পরতে পারছেন ? তুলসী মঞ্চ আছে ?’
তিনি বলেন,’ধর্ম পরিবর্তন করার ইচ্ছা আছে নাকি ? রতন মজুমদারের নাম হয়েছে শেখ শফিউল্লাহ । বলেছে চাকরি ছাড়ো নয় ধর্ম ছাড়ো । ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
সোমবার সন্দেশখালিতে মুখ্যমন্ত্রীর জনসভার খরচের হিসাবও দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা । তিনি বলেছেন, ‘কালকে মমতা ব্যানার্জির বর্ষবরণ উৎসবের খরচ কত? তিন কোটি টাকা । ওই টাকা আপনার আমার টাকা ট্যাক্সের টাকা, জনগণের টাকা । আমি এখানে দেখেতে এসেছি মেম্বারশিপ কতটা এগিয়েছে । কালকে এখানে জায়গাটা অপবিত্র করে দিয়ে গেছে । আজকে পবিত্র করতে এসেছি গঙ্গাজল ছড়িয়েছি ৷’ পাশাপাশি তিনি “পিসি-ভাইপো”কে হারাতে হিন্দু ভোট কেটে তৃণমূলের সুবিধা না করে দেওয়ার জন্য সিপিএমের কাছে আহ্বান জানিয়ে বলে,মুসলিমরাতো আপনাদের ভোট দেয় না । আপনারা হিন্দু ভোট কেটে তৃণমূল কংগ্রেসের সুবিধা করে দেন ।’।