জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,গুসকরা,০৩ নভেম্বর :
শত সমালোচনার মাঝেও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জ্জীর মস্তিষ্ক প্রসূত যেসব প্রকল্প সাধারণ মানুষের প্রশংসার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে তার অন্যতম হলো ‘দুয়ারে সরকার’। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা যাতে সাধারণ মানুষ সহজে পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জ্জী ২০২০ সালের পয়লা ডিসেম্বর ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পটি চালু করেন। রাজ্যের প্রায় ছয় সহস্রাধিক পঞ্চায়েত ও শতাধিক পৌর এলাকায় বসবাসকারী অর্থাৎ সমগ্র রাজ্যের মানুষ এই প্রকল্পের সুবিধা লাভ করেছে। শুধু তাই নয় ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের জয়লাভের পেছনে এই প্রকল্প অর্থবহ ভূমিকা নিয়েছিল।
কিছুদিন বিরতির পর গত পয়লা নভেম্বর শুরু হয়েছে পঞ্চম দফার দুয়ারে সরকার ক্যাম্প । জানা যাচ্ছে এবার উপভোক্তারা ২৭ টি বিষয়ে সুবিধা পাবে। আগামী ৩০ শে নভেম্বর পর্যন্ত এই প্রকল্প চালু থাকবে। তবে এবার বিভিন্ন শিবিরে তুলনামূলক ভাবে ভিড় কম দেখা যাচ্ছে। বলা যেতে পারে আগের চারটি শিবিরের জন্য জমে থাকা সমস্যা অনেক কমেছে। এটা বড় সাফল্য।
কিন্তু যেকোনো সরকারের সাফল্য বা ব্যর্থতা অনেকখানি নির্ভর করে কর্মচারিদের কর্মদক্ষতার উপর। বাম আমলে এই রাজ্যের কর্মচারিদের কর্মদক্ষতা তলানিতে পড়ে গিয়েছিল। শোনা যায় কর্মচারীরা দেরিতে অফিসে আসত, খবরের কাগজ পড়ত, তারপর নাকি দলীয় সভায় যেত। ইচ্ছে হলে কাজ করত। কিছু বলার উপায় ছিল না। সবাই ছিল সিপিএমের শ্রমিক সংগঠনের সদস্য। জ্যোতি বসু পর্যন্ত স্বখেদে বলেছিলেন- কাকে কাজ করতে বলব, চেয়ারকে? অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারিদের পেনসন নিয়ে এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল সরকারকে বিষয়টি নিয়ে টিভিতে বিজ্ঞাপন পর্যন্ত দিতে হয়েছিল। ভুক্তভোগীরা নিশ্চিতরূপে বিষয়টি ভুলে যাননি ।
২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতা লাভ করার পর পরিস্থিতির সামান্য বদল হলেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন তেমন কিছু হয়নি। ততদিনে সরকারি কর্মচারিদের একটা বড় অংশ তৃণমূলে যোগ দেয়। যেহেতু দক্ষিণপন্থী দল, মানুষ সামান্য হলেও প্রতিবাদ করার সুযোগ পায়। তারপরও বিভিন্ন সার্টিফিকেট বা সরকারি সুযোগ সুবিধা পেতে দপ্তরগুলোতে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। হয়তো এই সমস্যা দূর করার জন্যই দুয়ারে সরকার। বাম আমল থেকে সৃষ্ট সমস্যা কতটা গভীরে ছিল সেটা বিভিন্ন শিবিরে ভিড় দেখে সহজেই অনুমান করা যায়। কারণ সমস্যাটা ধারাবাহিক ভাবে চলে এসেছে এবং বিপজ্জনক আকার ধারণ করেছে। এটাও বাস্তব, এতদিন যারা সরকারি দপ্তরে গিয়ে হেনস্তার শিকার হয়েছে শিবিরগুলো থেকে তারা প্রচুর উপকৃত হয়েছে। জাতি শংসাপত্র পেয়ে সত্তর বছরের বৃদ্ধের মুখে ফুটে ওঠে হাসি । তারপরও প্রশ্ন উঠে যায় ।
গত কয়েক দিন ধরে ডিএ নিয়ে এক শ্রেণির সরকারি কর্মচারিদের মধ্যে প্রকাশ্যে ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে। কন্যাশ্রী, লক্ষীর ভাণ্ডার, পুজোর সময় উদ্যোক্তাদের অর্থ দিয়ে সাহায্য করা ইত্যাদি বিষয়ে তারা সরকারের তীব্র সমালোচনা করছে। তাদের বক্তব্য হলো – মেলা, খেলা বা লক্ষীর ভাণ্ডার ইত্যাদি ফালতু কাজে সরকারের অর্থ থাকলেও কর্মচারিদের ডিএ দেওয়ার জন্য অর্থ থাকছে না ।
এখানেই প্রশ্ন উঠছে। সরকারি দপ্তরে বসে কর্মচারীরা নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করলে সরকারকে নিশ্চয়ই দুয়ারে সরকারের মত প্রকল্প গ্রহণ করতে হতোনা। প্রতিটি শিবিরের জন্য মিনিমাম একটা অর্থ ব্যয় হয়েছে এবং সেটাও জনগণের করের টাকা। অর্থাৎ যে কাজের জন্য সরকার তার কর্মচারিদের বেতন দিচ্ছে সেই কাজ তোলার জন্য সরকারকে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। এরজন্য কে দায়ী? সরকারি কর্মচারিদের তাদের ব্যর্থতার জন্য দুঃখপ্রকাশ করতে তো দেখা যাচ্ছেনা? শুধু তাই নয়, এক শ্রেণির সরকারি কর্মচারিদের গাফিলতির জন্য আধার কার্ড, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড সহ বিভিন্ন সার্টিফিকেটে থাকছে একাধিক ভুল। সেগুলো সংশোধন করতে গিয়ে জনগণকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ডিএ দাবি করার আগে এগুলো নিয়ে সরকারি কর্মচারিদের ভাবতেই হবে। যে কাজের জন্য তারা বেতন পাচ্ছে সেই কাজটা অন্তত সুষ্ঠুভাবে পালন করতেই হবে। সেই এক শ্রেণির কর্মচারিদের এটা নিয়ে ভাবতে হবেই। সরকারকেও কর্তব্যে অবহেলা করা এক শ্রেণি কর্মচারিদের কথা ভাবতে হবে ।।