এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৬ জুলাই : ফের “হিন্দু যদি বাঁচতে চাও বিভেদ ভুলে এক হও” শ্লোগান তুললেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । এবারে উত্তর ২৪ পরগণা জেলার কাঁকিনাড়া ও পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় ঘটে যাওয়া দুই পৃথক ঘটনার ভুক্তভোগীদের বয়ানের ভিডিও এক্স-এ পোস্ট করে রাজ্যের হিন্দুদের “এক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা । ওই দুই ঘটনার কথা গতকাল পানিহাটিতে উলটো রথের যাত্রায় অংশ নিতে গিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আজকেও আমি আসার সময় হিন্দুদের রক্ত দেখতে দেখতে আসছিলাম । কাছেই কাঁচরাপাড়াতে অরিজিৎ বলে একটা হিন্দু ছেলেকে, আজ অন্য সম্প্রদায়ের একটা উৎসব আছে, আমি নাম নাই বা বললাম, কারণ এটা অত্যন্ত পবিত্র অনুষ্ঠান,নাম উচ্চারণ নাই বা করলাম, তা সেখানে দেখলাম অরিজিৎকে অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছে । যে অস্ত্র দিয়ে হরগোবিন্দু দাস এবং তার পুত্র চন্দন দাসকে কোপানো হয়েছিল । আর একটা ঘটনার খবর পেলাম এগরা থানা এলাকায় একজন হিন্দু গাড়ির চালকের মাথা রক্তাক্ত করেছে । এই জিনিষ বাংলায় বন্ধ হওয়া দরকার আছে । আর বন্ধ তখনই হবে হিন্দু যখন তার একতা গড়ে তুলবে ।’
তিনি এক্স-এ লিখেছেন,”হিন্দু যদি বাঁচতে চাও বিভেদ ভুলে এক হও । নিরাপত্তা বিষয়ক শব্দ পশ্চিমবঙ্গের সাথে যুক্ত নয়। সে মোথাবাড়ি, মহেশতলা আর.জি.কর কিংবা কসবা কোথাও পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নেই। আজ উল্টো রথের দিনে, পশ্চিমবঙ্গের দুই প্রান্তে জেহাদীদের দ্বারা আক্রান্ত হলেন দুই ব্যক্তি, একজন মহিলাদের প্রতি দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদ করতে গিয়ে, আরেকজন চাঁদার নামে তোলাবাজি না মেনে নিয়ে :-
আজ কাঁচরাপাড়া থেকে রানাঘাট লোকালে চেপে বিধাননগরের উদ্দেশ্য রওনা দেন এই ব্যক্তি। তখন কাঁকিনাড়া স্টেশনে লুঙ্গি পরিহিত কিছু লোক অস্ত্র নিয়ে ট্রেনে ওঠে। কিছুক্ষণ পর বিনা কারণে ফলতা স্টেশনে ট্রেনযাত্রীদের সাথে উটকো ঝামেলা শুরু করে। এক ভদ্রলোক এবং ভদ্রমহিলার সাথে ঝামেলার সময় এই ভদ্রলোক প্রতিবাদ করলে চপারের ঘায়ে ওনাকে আঘাত করা হয়।
মহরমের চাঁদার জুলুমবাজি;
এগরা বিধানসভায় মহরম উপলক্ষ্যে রাজ্য সড়কের উপর বাস দাঁড় করিয়ে বেশ কিছু জন ৫০০ টাকা চাঁদা দাবি করলে বাস ড্রাইভার তা দিতে অস্বীকার করে, তারপরেই চাঁদা আদায়কারীরা বাসের লোকজনদের উপর চড়াও হয় এবং মারধর করে। চাঁদার এই জুলুমবাজি রুখতে প্রশাসন ব্যর্থ। বেসরকারি পরিবহণ অ্যাসোসিয়েশন সেখানে বিক্ষোভ দেখালেও প্রশাসন এখনো পর্যন্ত কারোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় নি। পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুদের নিরাপত্তা নেই এটা বারবার প্রমাণিত।”
উত্তর ২৪ পরগণা জেলার কাঁকিনাড়ায় যে আক্রান্তের বক্তব্যের ভিডিও বিরোধী দলনেতা পোস্ট করেছেন সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে বলতে শোনা গেছে,’আমি রানাঘাট লোকাল ধরে বিধান নগরে অফিসে যাচ্ছিলাম । ছটার সময় কাঁচরাপাড়া থেকে উঠেছিলাম । তারপরে কাঁকিনাড়ায় কিছু ফতুয়া পরা, লুঙ্গি পরা, মাথায় টুপি দেওয়া কিছু লোক ওঠে । তাদের প্রত্যেকের হাতে অস্ত্র ছিল বড় বড় লম্বা চপার, সোর্ড । তারা সব গেট দখল করে দাঁড়িয়ে থাকে । কাঁকিনাড়া থেকে ওঠার পরেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে বচসা শুরু হয় । আস্তে আস্তে ওটা বড় আকার নেয়। একে গালাগালি করে ওকে গালাগালি করে । ফলতা স্টেশনে ঢোকার সময় ওরা যাত্রীদের এলোপাথারি মারতে থাকে । একে মারে তাকে মারে । একজন ভদ্রমহিলা এবং একজন ভদ্রলোক হয়তো প্রোটেস্ট করেছিলেন । ভদ্রলোককে ফেলে মারে এবং অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি দেয় । মা, মাসি, পিসি তুলেছে । এবং লোকটাকে মারার পর মহিলাটাকে মারে । তখন আমি এবং আমার সহযাত্রীরা হামলাকারীকে টেনে নিয়ে আসি । সেই সময় হামলাকারীর পিঠে দু-চারটে ঘুষি পড়ে । সেই সময় তার সঙ্গে আর একজন ফতুয়া পরা লোক চপার নিয়ে আমার হাতে দুবার চালিয়ে দেয় । ততক্ষণে ব্যারাকপুর স্টেশনও এসে গেছে । আতঙ্কিত যাত্রীরাও নেমে যায় । যারা মেরেছে তারা কিছু অফসাইডে নেমে যায় কিছু স্টেশনে নামে ।’
তিনি রেল পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, ‘সেখানেই জিআরপি দাঁড়িয়ে । আমাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে ঠিকই কিন্তু আমার পিছনে অস্ত্র হাতে যে লোকটি দাঁড়িয়ে ছিল তাকে কিছুই বলেনি জিআরপি ।’ তিনি বলেন,’এফআইআর করেছি কিন্তু কপি এখনো পাইনি । জিডি কপি দিয়েছে । আমি ওখানে সব লিখিত বর্ণনা দিয়েছি এবং অনুরোধ করে এসেছি যে যারা করল তারা অপরাধী তারা যেন ধরা পড়ে । ভবিষ্যতে যাত্রীরা যেন সুস্থভাবে গন্তব্যস্থলে পৌঁছায় । এরকম আতঙ্কিতভাবে ট্রেনে ভ্রমণ করা যায় না। অস্ত্র নিয়ে যেন ট্রেনে উঠতে না পারে সেই ব্যবস্থা যেন রেল দপ্তর ও জিআরপি করে । আমার যা হওয়ার হয়ে গেছে এক জায়গায় চারটে সেলাই পড়েছে । অন্য জায়গায় অনেকটা কেটে গেছে । কিন্তু প্রচন্ড ব্যথার কারণে আমি সেলাই করতে দিইনি । তারপরে আঙ্গুল ভেঙেছে কিনা ফোলা কমলেএক্সরে করব ।’
পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার ঘটনায় বোলেরো পিক আপ ভ্যানের খালাসি হিসাবে চিহ্নিত ব্যক্তি বলেন,’আমরা। এগড়া থেকে কাঁথি যাচ্ছিলাম । পথে আমাদের গাড়িটা ছেলেগুলো দাঁড় করায় । তারা মহরমের চাঁদার জন্য বলে । আমি বললাম কুড়ি টাকা নাও । ওরা বলল কুড়ি টাকা নয় ৫০০ টাকা লাগবে । তারপর আমি ৫০ টাকা দিতে যাই কিন্তু ওরা নেয়নি । আমরা চলে এলে কুড়ি পঁচিশ জন বাইকে চড়ে এসে আমাদের আটকে গুরুতর ভাবে মেরেছে । আমার ড্রাইভারকে মেরে নাক ফাটিয়ে দিয়েছে । গাড়িতে ছিল ৫০-৬০ হাজার টাকা, সেগুলো নিয়ে পালিয়ে গেছে৷ আর সোনার চেইন ছিঁড়ে নিয়ে পালিয়েছে । যারা মেরেছে তাদের আমরা চিনি না কিন্তু স্থানীয় বলে মনে হচ্ছে । আমাদের দাবি যে ওদের গ্রেপ্তার করা হোক এবং আমাদের ক্ষতিপূরণ আদায় করা হোক ।’ এই ঘটনার বিক্ষোভের ভিডিও সংযুক্ত করা হয়েছে তাতে । যদিও দুই ঘটনার সত্যতা যাচাই করেনি এইদিন । দ্বিতীয় ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয় ।।

