এইদিন ওয়েবডেস্ক,প্রয়াগরাজ,০৪ জুন : এলাহাবাদ হাইকোর্ট উত্তরপ্রদেশের বেআইনি ধর্মান্তরকরণ আইন,২০২১-এর অধীনে একজন অভিযুক্ত খ্রিস্টানের জামিন প্রত্যাখ্যান করেছে এবং দেশে ধর্মান্তর নিয়ে উদ্বেগের উপর জোর দিয়েছে । আদালত আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে যদি ধর্মান্তরিতকরণের সুবিধা প্রদানকারী ধর্মীয় মণ্ডলীগুলিকে অবিলম্বে রোধ করা না হয় তবে বর্তমান সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা শেষ পর্যন্ত সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়ে যাবে ।বিচারপতি রোহিত রঞ্জন আগরওয়ালের বেঞ্চ পর্যবেক্ষণ করেন,’যদি এই প্রক্রিয়া চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়, এই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা একদিন সংখ্যালঘু হয়ে যাবে, এবং এই ধরনের ধর্মীয় জমায়েত অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত যেখানে ধর্মান্তরকরণ হচ্ছে এবং ভারতের নাগরিকের ধর্ম পরিবর্তন করা হচ্ছে ।’
গত ২ জুলাই এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি রোহিত রঞ্জন আগরওয়াল হিন্দুদের খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করার অভিযোগে উত্তরপ্রদেশের হামিরপুরের মৌদহের বাসিন্দা কৈলাসের জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। রামকালী প্রজাপতির দায়ের করা এফআইআর-এ অভিযোগ করেছেন যে তার ভাই মানসিকভাবে অসুস্থ। কৈলাস তার ভাইয়ের চিকিৎসা করানোর কথা বলে এক সপ্তাহের জন্য দিল্লি নিয়ে যান । পরিবারকে জানান, চিকিৎসা শেষে গ্রামে ফেরত পাঠানো হবে। কিন্তু তার ভাই আর ফিরে আসেনি। পরে ভাই ফিরে আসার পর গ্রামের অন্য লোকদের নিয়ে দিল্লিতে আয়োজিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যান। সেখানে তিনি খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হন। এর জন্য তার ভাইকে টাকা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। মামলার শুনানিকালে আদালত বলেন, ‘সংবিধান ধর্ম প্রচারের স্বাধীনতা দিয়েছে,ধর্ম পরিবর্তনের নয় । জামিনের আবেদন করা ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর । গ্রামের সব মানুষ খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হয়েছে।’
যুক্তিতর্ক শোনার পর এলাহাবাদ হাইকোর্ট সংবিধানের উদ্ধৃতি দিয়ে স্পষ্টভাবে বলেছে, সংবিধান যে কাউকে স্বেচ্ছায় ধর্ম বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছে। কিন্তু সংবিধান কোনো ব্যক্তিকে প্রলোভনে ধর্মান্তরিত করার অনুমতি দেয় না। আদালত বলেছে, নিজের ধর্ম প্রচার করার অর্থ অন্য কাউকে ধর্মান্তরিত করা নয় । আদালত বলেছে,”প্রচার” শব্দের অর্থ প্রচার করা, তবে এর অর্থ কোনো ব্যক্তিকে তার ধর্ম থেকে অন্য ধর্মে রূপান্তরিত করা নয় ।
এফআইআর অনুসারে,রামকালী প্রজাপতির ভাইয়ের মানসিক চিকিৎসার কথা বলে তাকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়৷ এক সপ্তাহের মধ্যে তার নিজ গ্রামে ফিরে আসার কথা বলা হয়েছিল । এক সপ্তাহ পরে তার ভাই ফিরে না এলে তিনি কৈলাশকে এর কারন জিজ্ঞাসা করেন কিন্তু কোন সন্তোষজনক উত্তর পাননি। আদালত উল্লেখ করেছে,’তথ্যদাতার দ্বারা আবেদনকারীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে যে তার ভাইকে নয়াদিল্লিতে মঙ্গল ধর্মীয় সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য গ্রাম থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং তার সাথে ওই গ্রামের বেশ কয়েকজন লোকও ছিল। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর তথ্যদাতার ভাই গ্রামে ফিরে আসেনি, এই পর্যায়ে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে যে, আবেদনকারী- কৈলাশ লোকদের দিল্লি নিয়ে যাচ্ছিলেন ধর্মীয় সমাবেশে তাদের খ্রিস্টান ধর্মে রূপান্তরিত করা হয় ।
অধিকন্তু, আদালত উত্তরপ্রদেশ জুড়ে তফসিলি জাতি (এসসি), তফসিলি উপজাতি (এসটি),অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠী এবং অন্যান্যদের লক্ষ্য করে বেআইনি ধর্মান্তর কার্যক্রম উদ্বেগের সাথে উল্লেখ করে বলেছে,এটি বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে এই আদালতের নজরে এসেছে যে এসসি/এসটি জাতি এবং অর্থনৈতিকভাবে দরিদ্র ব্যক্তিদের সহ অন্যান্য বর্ণের লোকদের খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করার বেআইনি কার্যকলাপ সমগ্র উত্তরপ্রদেশ রাজ্য জুড়ে ব্যাপক গতিতে চলছে । বেঞ্চ আদেশ দেয়,আদালত প্রাথমিকভাবে, আবেদনকারীর জামিন পাওয়ার অধিকারী নয়। তাই, পূর্বোক্ত মামলার অপরাধে জড়িত আবেদনকারীর জামিনের আবেদন খারিজ করা হয়েছে ।।