এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৬ আগস্ট : আজ ১৬ আগস্ট ভারতীয় ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নরসংহারে ঘটনা ঘটেছিল কলকাতার বুকে । ১৯৪৬ সালের এইদিনে কলকাতায় ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশান ডে’ বা প্রত্যক্ষ কর্ম দিবস ঘোষণা করেছিল সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের নেতা ও তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ । সরকারি হিসাবে চার হাজার এবং বেসরকারি হিসাবে অন্তত দশ হাজার হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছিল । ১৬ থেকে ১৮ আগস্ট, এই ৩ দিন নরসংহার চলে । যা ‘দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস’ নামে কুখ্যাত । সেই সময় হিন্দুদের একত্রিত করে পালটা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন বউবাজারের মাংস বিক্রেতা গোপাল মুখার্জি । যাকে রাজ্যের মানুষ “গোপাল পাঁঠা” হিসেবে চেনেন ।অন্তত দশ হাজার হিন্দু মহিলাকে আশ্রয় দেন এবং তাদের সম্ভ্রম রক্ষা করেন । সোহরাওয়ার্দী-জিন্নাহ বাহিনীর পালটা লাশ ফেলতে শুরু করলে ক্রমে মুসলিম লীগের ত্রাস হয়ে ওঠেন গোপাল মুখার্জী । যে হাতে তিনি ছাগল কেটে মাংস বিক্রি করতেন সেই হাতে তিনি চপার নিয়ে ইসলামিক জিহাদীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান । তিনি শপথ করেছিলেন যে প্রাণ থাকতে একটা হিন্দুকে তিনি মরতে দেবেন না ।

দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংসের সময় কলকাতার হিন্দুদের ত্রাতা সেই গোপাল মুখার্জি কংগ্রেস,বামপন্থী ও তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে উপেক্ষিত । আজ ১৬ আগস্টের দিন কলকাতার আলিপুরে সেই মহান বীর গোপাল মুখার্জির আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । মূর্তি উন্মোচনের পর ভাষণে তিনি প্রতিশ্রুতি দিলেন, মমতা ব্যানার্জির ‘খেলা হবে দিবস’ নিষিদ্ধ করে এই দিন পালিত হবে ‘কালা দিবস’ হিসাবে । সেই সাথে কলকাতার কোনো রাস্তার নামকরণ গোপাল মুখার্জির নামে করা হবে বলে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ।
‘দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস’-এর সূচনা প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,’কলকাতায় একজন মুসলিম মেয়র ছিলেন ওসমান খান । উর্দুতে প্রচার পত্র বিলি করেছিলেন। তাকে বাংলা করলে দাঁড়ায়,’আস্থা ছেড়ো না । তরোয়াল তুলে নাও । ওহে কাফের, তোমাদের ধ্বংসের… বেশিদিন নয়।’ তিনি বলেন, ‘১৯৪৬ সালের ১৬ই আগস্ট মর্নিংওয়ার্কে বেরিয়ে ছিলেন অনেক হিন্দু। তার মধ্যে একজন হিন্দুকে খুন করার মধ্য দিয়ে দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং শুরু হয় । যা ১৮ আগস্ট পর্যন্ত চলে । উদ্দেশ্য খুব পরিষ্কার ছিল । মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কলকাতা সহ অভিবক্ত বাংলা চেয়েছিলে ।অভিবক্ত বাংলায় ছিল পঞ্চান্ন শতাংশ মুসলমান,আর ৪৫ শতাংশ ছিল হিন্দু । তাই কলকাতাতে হিন্দুদের একদম নির্মূল করার জন্য পরিকল্পিতভাবে দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং সংগঠিত হয়েছিল ডাইরেক্ট একশন ডে হিসেবে ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,’সেকুলার পলিটিক্সের ধাক্কায়, ভোট ব্যাংকের রাজনীতিতে, ধর্ম যার যার উৎসব সবার এই সমস্ত গাল ভরা স্লোগানের জন্য ৩৭০ এবং ৩৫ এ ধারা সরাতে অনেক সময় লেগেছে । কিন্তু দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য সম্ভব হয়েছে । দেরিতে হলেও দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং সামনে এসেছে । বিবেক অগ্নিহোত্রী আজকের ছবিটা লঞ্চ করেছেন । দেরিতে হলেও শ্রদ্ধেয় গোপাল মুখার্জির মূর্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের অনুমতিতে কলেজ স্কোয়ার থেকে রানী রাসমণি পর্যন্ত ধ্বজ নিয়ে ‘গোপাল মুখার্জী লহ প্রণাম’ বলে মিছিল হয়েছে ।’ তিনি বলেন, হিন্দুদের রক্ষার দায় কেন নেওয়া উচিত, নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার কাজ আজ থেকে শুরু করলাম । আজ মহা জন্মাষ্টমী৷ আশা করব প্রভু শ্রীকৃষ্ণের আশীর্বাদে রাষ্ট্র বিরোধী, সনাতন বিরোধী, এই অত্যাচারীদের আমরা শেষ করতে পারব।’
মমতা ব্যানার্জির বাংলা অস্মিতা রক্ষার আন্দোলনকে কটাক্ষ করে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’গোপাল মুখার্জি সেদিন নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু আপামোর হিন্দুরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন । তাতে জুট মিলে কাজ করতে আসা বড় বাজারের শ্রমিক এবং মজদুরের কাজ করা বিহারীরাও ছিল । সেদিন কিন্তু হিন্দি ভাষা, বাংলা ভাষার লোকেরা একসঙ্গে লড়েছে । সেদিন কিন্তু শিখ সমাজ গোপাল মুখার্জিকে সাথ দিয়েছে ।’ এরপর মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে তিনি বলেন,’মমতা ব্যানার্জি কখনো মুসলিমদের কাছে গিয়ে উর্দু স্পিকিং মুসলিম এবং বাংলা স্পিকিং মুসলিম বলে না। কিন্তু হিন্দুদের কাছে এসে বলে বাংলাভাষী হিন্দু এবং হিন্দিভাষী হিন্দু । আমরা যদি এই প্রাচীরটা ভেঙে দিতে পারি তাহলে ‘বাটেঙ্গে তো কাটেঙ্গে’ হবে না । তাহলেই আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারব।’ শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘পরিবর্তনের সরকার যদি আসে তাহলে গোপাল মুখার্জীর নামে রাস্তা, গোপাল মুখার্জির পুর্ণাবয়ব সরকারি মূর্তি এবং ১৬ ই আগস্ট কালা দিবস হিসাবে প্রত্যেক বছর পালন হবে। ‘খেলা হবে দিবস’ হবে না, ‘কালা দিবস’ হিসাবে পালন হবে।’ তিনি গোপাল মুখার্জির মূর্তি তৈরি করা শিল্পিকে উত্তরীয় পরিয়ে সম্মান জানান । পাশাপাশি হিন্দু সুরক্ষা সমিতির কার্যকর্তা রাকেশ সিংকে গোপাল মুখার্জির মূর্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়ায় কৃতজ্ঞতা জানান শুভেন্দু অধিকারী ।।