এইদিন ওয়েবডেস্ক,পাবনা,১১ নভেম্বর : বাংলাদেশের পাবনায় ফের মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে । রবিবার (১০ নভেম্বর) রাত সাড়ে সাতটার দিকে পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল ইউনিয়নের বল্লভপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে । ৩ অভিযুক্তকে আটক করার পরেও কট্টরপন্থীদের চাপে ছেড়ে দিতে বাধ্য হল পুলিশ । বিগত ২ মাসে এনিয়ে দ্বিতীয়বার ওই এলাকার মন্দিরে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনদের হামলা হল । কোনো ক্ষেত্রেই পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতার করেনি ।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা গেছে, স্থানীয় মুসলিমরা অভিযোগ তোলে যে তাদের নবীকে নিয়ে নাকি ফেসবুকে কটুক্তি করে একটা পোস্ট করা হয়েছে ৷ মৌলবাদীদের দল এনিয়ে একটা মিছিলও বের করে । সেই মিছিল এলাকায় ঘুরে ঘুরে হিন্দু ব্যবসায়ীদের শাসিয়ে আসে যে তারা যেন দোকানপাট বন্ধ রেখে দেয় । হিন্দু ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয় । শেষ পর্যন্ত পুলিশের হস্তক্ষেপে মিমাংসা হয় এবং মুসলিমরা ব্যবসায়ীদের দোকান খোলার অনুমতি দেয় । কিন্তু রবিবার রাত ৮ টা নাগাদ বেশকিছু ইসলামি কট্টরপন্থী দল বেঁধে বল্লভপুর এলাকার মন্দিরে হামলা চালায় । প্রতিমা ভাঙচুর করে । এতে এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। পরে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে । পুলিশ অভিযান চালিয়ে হামলায় জড়িত তিনজনকে আটক করে হান্ডিয়াল পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যায় । এরপর ইসলামি চরমপন্থীরা তাদের ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে পুলিশ ফাঁড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করতে থাকে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেদুয়ানুল হালিম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদি হাসান শাকিল, সহকারী পুলিশ সুপার হাবিবুল ইসলাম, থানার ওসি মঞ্জুরুল আলম ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা যায় । কিন্তু মৌলবাদীদের চাপে আটক করা তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয় ।
এই বিষয়ে চাটমোহর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার হাবিবুল ইসলাম বলেন,’ঘটনার পরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করা হলেও তারা জড়িত না থাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ওই মন্দির এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’ চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেদুয়ানুল হালিম বলেন,’মন্দির কর্তৃপক্ষকে থানায় মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যেহেতু মিছিল থেকেই মন্দিরে হামলা হয়েছে, তাই আমাদের সন্দেহভাজন আসামি তারা মিছিলেই থাকবে।মিছিলের ভিডিও ফুটেজে চেহারা দেখে আমরা যাদের শনাক্ত করতে পারবো, তাদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।
চাটমোহর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কুমার দত্ত চৈতন্য জানান, উপজেলার হান্ডিয়াল ইউনিয়নের বল্লভপুর গ্রামের কালা সাহার ছেলে প্রশান্ত কুমার সাহা (২৫) গত শনিবার (০৯ নভেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মুসলিমদের নবীকে নিয়ে কটূক্তি করে একটি স্ট্যাটাস দেন। তিনি ঢাকায় থাকেন বলে জানা গেছে। এতে ওই এলাকার মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে ওইদিন বিকেলে ও রাতে মিছিল বের করে হিন্দু সম্প্রদায় ব্যবসায়ীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না খোলার হুশিয়ারি দেয়। এরপর থেকে রবিবার (১০ নভেম্বর) সারাদিন এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। এক পর্যায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। ব্যবসায়ীদের দোকান খোলার অনুমতিও দেয়া হয়। এরমধ্যেই রবিবার রাত ৮টার দিকে বেশকিছু মানুষ একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বল্লভপুর এলাকার মন্দিরে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাঙচুর করে। এতে এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। পরে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
উল্লেখ্য, এর আহে গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল পশ্চিমপাড়া ভদ্রা কালীমাতা মন্দিরে তিনটি প্রতিমা ভাঙচুর করে মুসলিমরা । সেই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি ।।