এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২২ নভেম্বর : আসানসোলে কয়লা পাচারের টাকার ২৫ শতাংশ যায় পুলিশের কাছে আর বাকি ৭৫ শতাংশ পার তৃণমূল নেতারা । সেই টাকার একটা বড় অংশ তৃণমূলের নেতারা গাড়ি করে পুলিশ পাহারায় দক্ষিণ কলকাতায় পৌঁছে দিয়ে আসে । এই দাবি করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নাম না করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির উদ্দেশ্যে বলেন, ‘চুনোপুঁটিদের মেরে কিছু হবে না। ওনার সদিচ্ছা থাকলে নিজের দলের নেতাদেরকে ধরে দেখান ।’ প্রসঙ্গত, পশ্চিম বর্ধমানের বারাবনি থানার ইনচার্জ মনোরঞ্জন মণ্ডলকে বৃহস্পতিবার রাতে সাসপেন্ড করেছেন আসানসোল দুর্গাপুর কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনার সুনীল কুমার চৌধুরী । ওইদিনেই মুখ্যমন্ত্রীর নবান্নে বসে মন্তব্য করেছিলেন যে বালি চুরি বলো, কয়লা চুরি বলো, সিমেন্ট চুরি বলো, পুলিশেরও কিছু লোক টাকা খেয়ে এসবের মদত দিচ্ছে । আর তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মনোরঞ্জন মন্ডলকে সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়।
আজ শুক্রবার বিধানসভার বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই বিষয়ে বলেছেন,’এসব চুনোপুটিদের মেরে কিছু হবে না। কারণ বারাবনিতে যে কয়লা উঠে সেটা তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান অসিত সিংয়ের নেতৃত্বে হয় । পুলিশ একটা ছোটখাটো ভাগ পায় । কিন্তু সিংহভাগ অংশটা যায় তৃণমূলের নেতাদের পকেটে । মমতা ব্যানার্জি যদি সদিচ্ছা থাকে তাহলে অসিত সিংকে সাসপেন্ড করে প্রমাণ করুন যে শুধুমাত্র চুনোপুটি পুলিশ অফিসারদের নয় প্রত্যেকের বিরুদ্ধে তিনি ব্যবস্থা নিতে ইচ্ছুক ।’ শুভেন্দু বলেন,’দুর্নীতির ২৫ ভাগ যায় পুলিশের কাছে,বাকি ৭৫ ভাগ পায় তৃণমূল, ওই ৭৫ ভাগের যে সমস্ত নেতারা ভাগ পাচ্ছে… দক্ষিণ কলকাতা পর্যন্ত সেই দুর্নীতির টাকা আসছে… এই জায়গায় অঙ্কুশ লাগানোর জন্য আপনি(মুখ্যমন্ত্রী) ব্যবস্থা নিন । বড় অংশের টাকা অসিত সিংরা তুলে নরেন চক্রবর্তীদের দেয়, আর নরেন চক্রবর্তীরা সেই টাকা গাড়ি করে পুলিশ পাহারায় কলকাতার পৌঁছে দিয়ে আসে ।’ তিনি আরো বলেন, ‘অভিজিৎ মন্ডলকে গ্রেফতার করার পরে পুলিশের অনেকে ভয় পেয়ে গেছে । মমতা ব্যানার্জি অভিজিৎ মন্ডলকে যখন বাঁচতে পারেননি তেমনি বিনীত গোয়েল কেউ বাঁচাতে পারবেন না ।’ বিরোধী দলনেতা বলেন,’নিচুতলার পুলিশের উদ্দেশ্যে মমতা ব্যানার্জি হুঙ্কার দিচ্ছেন কারণ ২০২৬ সালের ভোটে তারা যেন দলের ক্যাডারের মতো কাজ করে।’
বিরোধী দলনেতা মমতা ব্যানার্জিকে নিশানা করে বলেন,’দরিদ্র মানুষের সর্বনাশ হচ্ছে লটারিতে৷ সর্বনাশ হচ্ছে মদের পাউচে । আপনি এক্সাইজের বেভারেজ কর্পোরেশন অফ বেঙ্গল তুলে দিলেন । আপনি দিল্লি এক্সাইজ পলিসির মতো এখানে ডিস্ট্রিবিউটরকে ডেখে আনলেন মদের জন্য । আমি তিনবার আরটিআই করেও আমাকে এক্সাইজ পলিসি দিচ্ছেন না । আপনি তো লুকাতে চাইছেন । আপনি নিজের দুর্নীতি করছেন এবং প্রটেকশন দিচ্ছেন দুর্নীতির টাকায় আপনার দল চলছে । প্রতিটি নির্বাচনে যে এত খরচ করা হয় সেই দুর্নীতি টাকা থেকেই হচ্ছে । পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং এ জল জীবন মিশনের ঠিকাদারি সংস্থা যে টেন্ডার পেয়েছে তিনি কাকদ্বীপ স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ব্রাঞ্চে আইপ্যাককে ২০২১ সালে ১২ কোটি টাকা দিয়েছে ।’
রাজ্যের পড়ুয়াদের সাইকেল বিতরণ নিয়েও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন শুভেন্দু অধিকারী । এই বিষয়ে তিনি মমতা ব্যানার্জির উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘ আপনি সাইকেল নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে যে কেলেঙ্কারি করছেন, কেন্দ্র থেকে প্রতিবছর ২০ লক্ষ সাইকেল পাচ্ছে বাংলা । গত পাঁচ বছর ধরে কেনা হয়৷ এর একটা বড় পরিমাণ অর্থ কেন্দ্র সরকার দেয় । ব্যাকওয়ার্ড ডেভেলপমেন্ট, এসটি,এসসি এবং মাইনোরিটি ডেভেলপমেন্ট এর টাকা নেন এবং কিছুটা রাজ্য সরকার দিয়ে সাইকেল কেনেন । আপনি এক একটা সাইকেল কিনেছেন ৭২৪৮ টাকায় । পাঁচ বছর বিক্রি হয়েছে । আমার কাছে পূর্ণ তথ্য আছে । আমি আবার সাংবাদিক সম্মেলন করে বলে দেবো ।’ এরপর তিনি বলেন,’আপনি এমন কোন জায়গা পাবেন না… বালি,কয়লা নয় সব দুর্নীতিতেই আপনার প্রত্যক্ষ মতই আপনার দলের ঘনিষ্ঠ লোকেরা,আপনার পরিবারের লোকেরা এইরকম সিন্ডিকেট করে টাকা তুলছে না এমন নজির পাবেন না ।’
তিনি বলেন,’ইলেক্টোরাল বন্ডের নামে যে সমস্ত চিটিংবাজী করে টাকা নিয়েছেন, বৈধভাবে যে ১৬শ কোটি টাকা আপনি নিয়েছেন.. ডিয়ার লটারি, মার্টিন লটারি থেকে, মাফিয়াদের টাকা, নিয়ে আপনি আজ জেগে উঠেছেন সাড়ে ১৩ বছর পরে ।’ নাম না করে তিনি অভিষেক ব্যানার্জিকে তব দেখে বলেন,’এরা বছরে দুবার করে ইউরোপ যায় এবং কারবার করে দুবাইতে।’
পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তরপ্রদেশের উপনির্বাচনের পাশাপাশি মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডের বিধানসভা নির্বাচনে ফলাফল বিজেপি কেমন ফলাফল করতে পারে, এই প্রশ্নের উত্তরে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, যেখানে যেখানে মানুষ ভোট দিতে পেরেছে সেখানে সেখানে বিজেপি জিতবে ।’ তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন যে মুসলমানরা বিজেপিকে ভোট দেবেন না কিন্তু সিংহভাগ সনাতনীরা বিজেপিকে ভোট দেবেন । ঝাড়খন্ডে বাঙালিরা একটা বড় ফ্যাক্টর৷ ৫০ লক্ষ বাঙালি আছে এবং ৭০ লক্ষ বাংলাভাষী আছে । মহারাষ্ট্রে ১৪-১৫ লক্ষ বাঙালি বসবাস করে । বাঙালি সনাতনীরা যেভাবে ত্রিপুরা এবং ছত্রিশগড়ে ভোট দিয়েছেন বিজেপিকে একইভাবে মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খন্ড দেবেন বলে আমি আশা করি ।’ কলকাতায় তৃণমূলের কাউন্সিলরকে গুলি চালানোর ঘটনায় শুভেন্দু অধিকারী বলেন আগে টার্গেট ছিলেন বিজেপির নেতারা । এখন তৃণমূলের হিন্দু নেতারা টার্গেট হয়ে গেছেন ।।