এইদিন ওয়েবডেস্ক,দিনাজপুর(বাংলাদেশ),১০ অক্টোবর : ‘আমি হাজার বার ভারতের দালালি করবো,কিন্তু পাকিস্থানের সমর্থন কোনোদিন করবো না । আমি লক্ষ কোটি বার ভারতের দালালি করবো,কিন্তু পাকিস্থানকে কোনোদিন মেনে নেব না’- বক্তা বাংলাদেশের দিনাজপুর-৬ এর সংসদ সদস্য মোহম্মদ শিবলী সাদিক(Shibli Sadique) । দূর্গাপুজোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাখা তাঁর এই বক্তব্য বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে । বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান কট্টরপন্থী ইসলামি ও ভারত বিদ্বেষী মানসিকতার মাঝে আওয়ামি লিগের ওই সাংসদের এহেন বক্তব্য প্রশংসিত হচ্ছে ভারতের বিভিন্ন মহলে ।
জানা গেছে,গত ২ অক্টোবর নিজের নির্বাচন ক্ষেত্রের একটি দূর্গাপূজোর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন শিবলী সাদিক । অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আমি হাজার বার ভারতের দালালি করবো,কিন্তু পাকিস্থানের সমর্থন কোনোদিন করবো না । আমি লক্ষ কোটি বার ভারতের দালালি করবো,কিন্তু পাকিস্থানকে কোনোদিন মেনে নেব না । শুধু মাত্র শোষণ নিপিড়ন নয়,ওরা আমাদের মা-বোনের ইজ্জত নিয়েছে । মানুষ হত্যা করেছে মেনে নিলাম । গুলি করে মেরে ঝাঁজড়া করে দিয়েছে মেনে নিলাম । কিন্তু যে নারীকে তোমরা ধর্ষণ করে চলে গেছ, যে নারীকে বীরাঙ্গনা রূপ নিয়ে ৬৫-৭০ বছর ধরে বেঁচে থাকতে হচ্ছে,সমাজের কাছে দীর্ঘদিন ধরে নিগৃহীত হয়েছেন । তখন তো বাংলাদেশ এতটা কালচারাল ছিল না । তখন অনেক জাতপাত ছিল । ফলে কি নিদারুন মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে তাঁদের ।’
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন,’আমি শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে স্মরণ করবো । ওই মানুষটা ১৯৭১ সালে আমাদের যদি জায়গা না দিতেন,ট্রেনিং না দিতেন,খাদ্য না দিতেন, চিকিৎসা না দিতেন এবং মিত্র বাহিনীর হাজার হাজার সৈন্যকে এখানে পাঠিয়ে না দিতেন-সত্যিকার অর্থে এই যুদ্ধে ৯ মাসে জয়লাভ করা কি সম্ভব হত ? আজকের এই মঞ্চ থেকে তাঁর প্রতি আমি শ্রদ্ধা নিবেদন করি । এছাড়া তৎকালে ভারত সরকারের অধীনে যে সমস্ত সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন,যাদের নেতৃত্বে এই বাংলাদেশের শরনার্থী শিবিরে এক কোটি মানুষকে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে । যাদের নাম আমরা উচ্চারণ করতে চাই না, বলতে চাইনা বা ভুলে গেছি । ইতিহাস ভুলে যাওয়া আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে । বাংলাদেশের একজন সাংসদ সদস্য হিসাবে আমি তাঁদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি ।’ সাদিক বলেন,’আজও ভারতের কিছু কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ,জল সড়ক, খাদ্যের সমস্যা রয়েছে । তাহলেও আজ থেকে ৫০-৫২ বছর আগের পরিস্থিতি তো আরও ভয়াবহ ছিল ? ওই পরিস্থিতিতেও তাঁরা আমাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন । যে কারনে আজকে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি ।’
উল্লেখ্য,বাংলাদেশে পাকিস্থানপন্থী মৌলবাদীর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান । বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস ভুলে গিয়ে আকছার প্রকাশ্যে তাদের ভারতের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক মতামত দিতে দেখা যায় । তাতে সামিল হয়েছে বাংলাদেশের এক শ্রেণীর মিডিয়া । ভারতের প্রতি বিদ্বেষ দেখানোর জন্য ওই সমস্ত পাকিস্তানপন্থী মৌলবাদী লোকজন ও বিএনপির মত কট্টরপন্থী ইসলামিক দলের সদস্যরাই মূলত নিজের দেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নিরন্তর আক্রমণ চালিয়ে আসছে । আর শিবলী সাদিকের এই বক্তব্য ওই সমস্ত ভারত ও হিন্দু বিদ্বেষী মৌলবাদীদের লক্ষ্য করেই বলে মনে করা হচ্ছে ।
দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জের বাসিন্দা মোহম্মদ শিবলী সাদিকের (Shibli Sadique) বাবা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানও (Md. Mostafizur Rahman) দিনাজপুর-৬ এর সংসদ সদস্য ছিলেন । বাবার মৃত্যুর পর একই আসন থেকে আওয়ামী লীগের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে আসছেন শিবলী সাদিক । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত সাদিক দেশের জনপ্রিয় নেতাদের মধ্যে অন্যতম । তাঁর চাঁচা ছোলা বক্তব্য মানুষকে আকৃষ্ট করে । বিশেষ করে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু মানুষদের কাছে প্রিয়পাত্র আওয়ামী লীগের এই নেতা ।।