প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৪ মার্চ : উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হলেই আমি কিন্তু আমার ‘ভগবান’ বিরাট কোহলির খেলা দেখতে ইডেনে যাবো।উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর আগে এই আব্দারের কথা বাবা ও মাকে জানিয়ে রেখে ছিল ঋতুপর্ণ পাখিরা।সেই মতো পরীক্ষা শেষ হতেই আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচের একটা টিকিটও জোগাড় করে ফেলে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের বাগ কালাপাহাড় গ্রামের ছাত্র ঋতুপর্ণ।ইডেনে গিয়ে ভগবান বিরাট কোহলির খেলা দেখার জন্য শনিবার সকাল সাকালই সে বাড়ি থেকে রওনা হয়। যাওয়ার সময় মাকে বলে যায়,“আজ আমি যেমন করেই হোক,একেবারে মাঠের মধ্যে ঢুকে গিয়ে বিরাট স্যারের পা ছুঁয়ে প্রণাম করে আশির্বাদ নেবই। এর জন্যে পুলিশ যদি আমায় ধরে তো ধরবে“।
মাকে বলে যাওয়া এই কথার কোনও হেরফের করেনি ঋতুপর্ণ।তবে এমন কাণ্ড ঘটানোর জন্য পুলিশ ঋতুপর্ণকে রেহাই দেয় নি।তাকে কলকাতার ময়দান থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।তার জন্য আক্ষেপ প্রকাশ তো দূরের কথা,উল্টে রবিবারও ঋতুপর্ণ হাসিমুখে তাঁর বাবাকে বলে,“আমার ভগবান বিরাট স্যারকে প্রণাম করে আমি ধন্য“।
ঋতুপর্ণদের পারিবার আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল নয় । বাবা মহাদেব পাখিরা কিছু জমি চাষ করেন। পশাপাশি এলাকায় তাঁর একটি ফলের দোকান রয়েছে। ইটের দেওয়ালের দু’কামরার নির্মীয়মান বাড়ির মধ্যেই মা, বাবা ও কলেজ পড়ুয়া দুই দিদির সঙ্গেই থাকে ঋতুপর্ণ। বাড়িতে অভাবের ছাপ স্পষ্ট।স্থানীয় পর্বতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের কলা বিভাগের ছাত্র ঋতিপর্ণ পাখিরা এবছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে।
ঋতুপর্ণর মা কাকলিদেবী একজন আশা কর্মী। আজ রবিবার এইদিনকে তিনি জানান,,“আমার ছেলে ঋতুপর্ণ ছোট বয়স থেকেই ক্রিকেট খেলায় আগ্রহী হয়ে পড়ে। প্রথম জামালপুরের নেতাজী অ্যাথলেটিক ক্লাবের মাঠে গিয়ে এক প্রশিক্ষকের কাছে ক্রিকেটের প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করে।বর্তমানে কলকাতার বেলেঘাটা স্পোর্টিং ক্লাবে ক্রিকেটের কোচিং নিচ্ছে। আমার ছেলে ভারতীয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলির একনিষ্ট ভক্ত।উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে থেকেই আইপিএলে বিরাট কোহলির খেলা ইডেন গ্রাউণ্ডে গিয়ে দেখতে যাবে বলে ছেলে বায়না জুড়েছিল। আমরা অমত করি নি। শনিবার ইডেনে গিয়ে আইপিএলের উদ্বোধনে খেলা দেখতে যাওয়ার জন্য ছেলে টিকিটও জোগাড় করে ফেলে । খেলা দেখত যাওয়ার জন্য ছেলে শনিবার সকাল সকাল বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে । যাওয়ার সময় ছেলে আমায় বলে যায় ,“যা হয় হবে, আজ মাঠে ঢুকে গিয়ে বিরাট স্যরকে প্রণাম করে আমি আশীর্বাদ নেবই ।”
এমন পাগলামি না করার জন্য মা কাকলিদেবী তাঁর ছেলে ঋতুপর্ণ কে নিষেধ করে ছিলেন। এমন কাণ্ড ঘটালে পুলিশ যে ছেড়ে কথা বলবে না তাও ছেলেকে জানিয়ে ছিলেন কাকলিদেবী। কিন্তু বিরাট কোহলির ভক্ত ঋতুপর্ণ উল্টে মাকে বলে যায়,’আমি আমার ভগবানকে প্রণাম করে আশীর্বাদ লাভের জন্যে জেলে যেতেও রাজি’। আর শেষ অব্দি এমন কাণ্ড ঘটিয়ে আমার ছেলেটা পুলিশের হাতেই বন্দি হল । ছেলেকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য কাকলিদেবী বিরাট কোহলি পুলিশ ও আইপিএল কর্তৃপক্ষকে উদ্দেশ্যে করে আবেদন রেখেছেন।
ভাইয়ের কি হবে তা ভেবে বড়ই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে ঋতুপর্ণর দুই দিদি পৌলমী ও প্রীতি। তিনি বলেন,“১৮ বছর বয়সী আমার ভাই ক্রিকেট পাগল ।ভাই বিরাট কোহলি স্যরকে কতটা ভক্তি করে শ্রদ্ধা করে !তা ভাষায় বোঝানো যাবে না। ভাই বিরাট স্যারকে ভগবানের তুল্য ভাবে।”বাড়িতে থাকা ক্রিকেটের ব্যাট ,প্যাড, বল দেখিয়ে ঋতুপর্ণর দিদিরা এও বলেন,ভাই পেস বল করতে ভালবাসে । রাজ্যস্তরের ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ভাই পুরস্কারও লাভ করেছে। ভাই ভাল ব্যাটিং করার পাশাপাশি পেস বলটাও ভাল করে। ভাইকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্যে দুই দিদিও বিরাট স্যর, ইডেন কর্তৃপক্ষ ও কলকাতা পুলিশের কাছে করজোড়ে অনুরোধ রেখেছে।
পর্বতপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অতনু ঘোষ বলেন, ‘শুধু খেলার জন্যে নয়, বিরাট-ভক্ত হিসেবেও স্কুলে আলাদা পরিচয় ছিল ঋতুপর্ণর। যুবক ঋতুপর্ণর বাবা মহাদেব পাখিরা বলেন, ’“ইডেনে খেলা দেখতে গিয়ে ছেলে অনেক রাত পর্যন্ত বাড়ি না ফেরায় আমরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। তখনই খোঁজ নিয়ে জানতে পারি বিরাট কোহলি অর্ধশত রান করতেই আমার ছেলে দর্শক আসন থেকে সোজা ইডেনের মাঠে ঢুকে যায়।মাঠে গিয়ে বিরাট স্যরকে প্রণাম করে । বিরাট স্যার আমার ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। কিন্তু পুলিশ আমার ছেলের এই কীর্তি ভালভাবে নেয় নি।পুলিশ আমার ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে’ ।।

