এইদিন ওয়েবডেস্ক,বরিশাল,১১ জানুয়ারী : হিন্দু ব্যবসায়ীর মিষ্টির দোকানে খাওয়ার পর দাম না মিটিয়েই ফিরে আসছিল স্থানীয় এক ব্যবসায়ী । তা নিয়ে দোকানদারের সঙ্গে খরিদ্দারের বচসা থেকে ঠেলাঠেলি শুরু হয় । এরপর খরিদ্দার দোকান থেকে ফিরে এসে এক মুঠো চুল দেখিয়ে গুজব রটিয়ে দেয় হিন্দু দোকানদার তাঁর দাঁড়ির চুল ছিঁড়ে নবীর সুন্নতের অপমান করেছে । তার একথা শুনে উন্মত্ত ধর্মান্ধ মুসলমানের দল ওই দোকানে জমায়েত হয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় । শেষে পুলিশ দোকানের মালিককে গ্রেফতার করে নিয়ে গেলে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয় । বাংলাদেশের বরিশালের লঞ্চঘাট এলাকার এই ঘটনার পর এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় উসকানিমূলক পোস্ট করে হিন্দুদের নিশানা করতে চাইছে স্থানীয় জিহাদিরা জিহাদিরা ।
সাজিদ আহমেদ নামে এক স্থানীয় মুসলিম যুবক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন,’আলহামদুলিল্লাহ শাটার এবং গ্লাস আমি ভেঙেছি । আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আমি আমার দিক থেকে থেকে অপমানের জবাব দিয়েছি ছোট একটি জিহাদ দ্বারা ।’ এই পোস্টের প্রতিক্রিয়ায় মহম্মদ রাহাতুল ইসলাম নামে একজন লিখেছে,’ধন্যবাদ ভাই, তোমার মত সাহসী যোদ্ধা দরকার ।’ এরপর সাজিদ আহমেদ ফের লিখেছে, ‘ভাই আইসা পুলিশে মারছে । না হলে আরও কিছু ইনশাআল্লাহ হতো । পায়ে প্রচুর ব্যাথা পেয়েছি দোয়া করবেন ।’ এদিকে এলাকার জিহাদিদের এই সমস্ত উসকানিমূলক পোস্টের কারনে আসন্ন হামলার আশঙ্কায় চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে এলাকার সংখ্যালঘু হিন্দুরা ।
প্রসঙ্গত,মঙ্গলবার সকাল ১১ টা নাগাদ বরিশাল নগরীর লঞ্চঘাট এলাকার ঘোষ মিষ্টন্ন ভান্ডারে টিফিন করতে গিয়েছিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ী সৌরভ আলী । তিনি সেখানে দই ও চিঁড়ে খেয়েছিলেন । সব মিলে বিল হয়েছিল ৪০ টাকা । কিন্তু তিনি ওই টাকা দিতে অস্বীকার করেন । খরিদ্দারের দাবি আগের দিন একই খাবার তিনি ৩০ টাকায় খেয়ে গিয়েছিলেন । সুতরাং তিনি অতিরিক্ত ১০ টাকা দেবেন না । এনিয়ে দোকানের এক কর্মচারীর সাথে তার বচসা ও ঠেলাঠেলি শুরু হয় । সেই সময় খরিদ্দারের দাঁড়িতে হাত লেগে যায় দোকানের কর্মচারীর । এরপর সৌরভ আলী মিষ্টির দোকান থেকে বেড়িয়ে এসে এক মুঠো চুল কাগজে মুড়িয়ে আশপাশের মুসলিম ব্যক্তিদের দেখিয়ে গুজব রটিয়ে দেন যে তার দাঁড়ি ছিঁড়ে নবীর সুন্নতের অপমান করেছে হিন্দু ব্যবসায়ী । তারপরে হাজার খানেক উন্মত্ত ধর্মান্ধের দল এসে ওই দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে কোতয়ালী থানা পুলিশের উপ পুলিশ পরিদর্শক (এস আই) সিহাব ও সেলিম সরদার আহত হন । শেষে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে দোকানের ম্যানেজারকে গ্রেফতার করে পুলিশ ।
কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠছে,আদপেই কি সৌরভ আলীর দাঁড়ি ছেঁড়া হয়েছিল? কারন তার হাতে যে পরিমান চুল বা লোম দেখা গেছে তা আদপেই কি কোনো মানুষের দাঁড়ি ধরে একটানে ছেঁড়া সম্ভব ? নাকি তিনি অন্য কোথা থেকে চুল বা লোম সংগ্রহ করে এনে ওই হিন্দু ব্যবসায়ীকে ফাঁসাতে চাইছেন ? যদিও এই সমস্ত প্রশ্ন নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামায়নি পুলিশ । আপাতত মুসলিম খরিদ্দারের অভিযোগকে সত্যি ধরে নিয়ে হিন্দু দোকানদার ও তাঁর কর্মীর বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মামলা রজু করেছে পুলিশ।।