এইদিন ওয়েবডেস্ক,মালদা,১৯ এপ্রিল : ওয়াকফ ইস্যুকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক হিংসায় আক্রান্ত মুর্শিদাবাদের ঘরছাড়া হিন্দুদের সঙ্গে কথা বলতে গতকালই মালদায় গিয়েছিলেন জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যরা । জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদার ভোট ছাড়া মহিলারা সঙ্গে কথা বলার পর সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন বলেন, “কিছু মহিলা তাদের স্বামী হারিয়েছেন, কেউ কেউ তাদের ছেলেকে হারিয়েছেন। মানুষকে তাদের বাড়ি থেকে টেনে বের করে হত্যা করা হয়েছে। এটা ভয়াবহ। আমি জানি না পশ্চিমবঙ্গে এর আগে কখনও এমন ঘটনা ঘটেছে কিনা। আমরা এই প্রথমবারের মতো এই সব দেখেছি। এটা অগ্রহণযোগ্য। সরকারকে এর দায় নিতে হবে৷” তিনি মুর্শিদাবাদের সাম্প্রদায়িক হিংসাকে “ভয়ংকর” হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, ‘কিছু বলার ভাষা খুজে পাচ্ছি না’ । এদিকে মুর্শিদাবাদের বাস্তুচুত্যদের সাহায্য আটকাতে রাজ্য সরকার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করছে বলে অভিযোগ তুললেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ।
অর্চনা মজুমদার ঘরছাড়াদের সঙ্গে কথা বলে দাবি করেন, মুর্শিদাবাদ থেকে ঘরছাড়া হওয়া মহিলারা কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইছেন। তাঁর কথায়, ‘মহিলারা সম্মান নিয়ে বাঁচতে চাইছেন। দুষ্কৃতীরা নাকি ওকানে মেয়েদের বলেছিল, বাড়িতে থাকলে ধর্ষণ হয়ে যাবি। চলে যা। ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আমরা যা যা করার করব।’ এদিকে মুর্শিদাবাদের হিংসা কবলিত এলাকাগুলি পরিদর্শন করবেন জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা।
শুভেন্দু অধিকারী একটি নোটিশ পোস্ট করে লিখেছেন, ‘ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরোধিতার অজুহাতে মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে হিন্দুদের জাতিগত নির্মূল করতে উদ্যত হয় মৌলবাদীরা, সরকার ও প্রশাসনের প্রচ্ছন্ন সহযোগিতায়। হিন্দু পরিবার গুলি, বিশেষ করে মায়েরা, বোনেরা, দুধের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে, এক কাপড়ে, ঘর বাড়ি, বিষয় সম্পত্তি, গবাদি পশু ফেলে রেখে প্রাণ ও সম্ভ্রম বাঁচাতে নদী পেরিয়ে মালদহের বৈষ্ণবনগরের দেওনাপুর-সোভাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পারলালপুর হাই স্কুল সহ অন্যান্য জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন।
তারপর এই নির্লজ্জ ও বিবেকহীন রাজ্য সরকার কি করলো? ত্রাণ শিবিরগুলো কে ডিটেনশন ক্যাম্পে পরিণত করে দিলো, যেখানে শরণার্থীদের সংবাদমাধ্যম, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধি অথবা বাইরের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে বাধা সৃষ্টি করলো। আশ্রয়হীন হিন্দুদের কাঁকরে ভর্তি চালের ভাত ও পোকা লাগা সবজি দিয়ে রান্না করা মুখে তোলার অযোগ্য নিম্নমানের খাবার খেতে দিচ্ছে। এলাকার ভারপ্রাপ্ত পুলিশের আধিকারিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে দেওয়া খাদ্যদ্রব্য সামগ্রী ইত্যাদি গোডাউনের ভেতর চালান করছে ও সস্তার মালপত্র শিবিরে সরবরাহ করছে। এমনকি, যে স্বেচ্ছাসেবীরা মানবিক সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছেন, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে যাতে কেউ সাহায্যের হাত না বাড়িয়ে দেয়। এমনই এক নোটিশের কপি সংযুক্ত করলাম।
তিনি আরও লিখেছেন,এই হিন্দু শরণার্থীরা নির্যাতন ও প্রাণনাশের ভয়ে নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে এসেছেন। তাদের প্রতি এমন নিষ্ঠুর আচরণ কেবল অমানবিকই নয়, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। রাজ্য সরকার ও পুলিশের এই নিপীড়নমূলক কার্যকলাপ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। শরণার্থীদের মানবিক সহায়তা, স্বাধীনভাবে যোগাযোগের অধিকার এবং স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করতে হবে। মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করে, তাদের কণ্ঠরোধ করার এই নির্লজ্জ প্রয়াস অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। শরণার্থীদের ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে হবে। স্বেচ্ছাসেবকদের দেওয়া ত্রাণ সামগ্রী শিবিরের মধ্যে সর্বসমক্ষে গ্রহন করতে হবে এবং ব্যবহার ও বিতরণ করতে হবে। যদি এই নিন্দনীয় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা চলতে থাকে তাহলে এই নির্লজ্জ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবো।’।